নির্বাচনে বিএনপির ইমাম কে?

আওয়ামী লীগের নেতারা মাঝে মধ্যেই জিজ্ঞেস করেন আগামী নির্বাচনে বিএনপির প্রধানমন্ত্রীর মূখ কে? বিএনপির ইমাম কে? পর্যবেক্ষরা মনে করেন ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্তাধিন ঐক্যফ্রন্ট ও বিশ দলীয় জোটের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা ছিলো ভোট জিতলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তা বলতে না পরা। মালয়শিয়া মডেলে ছোট দল গণফোরামের বড় নেতা ড. কামাল হোসেনকে ইমাম মেনে নির্বাচন গেলোও হঠাৎ কামাল হোসেন নিজে প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দেন।

এতে ভোটের আগেই বড় ধাক্কা খায় সরকার বিরোধী সেই জোট। সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সবচেয়ে প্রবীণ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বক্তব্যেও তেমনটাই উঠে এসেছে। ঐক্যফ্রন্টের ব্যর্থতার জন্য তিনি দায় দিয়েছেন ড. কামাল হোসেনকে। বিএনপি অনেক নেতা-কর্মী বিশ্বাস করেন মূলত কৈশলে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনী বৈতরনী পার হওয়ার সুবিধা করে দিতেই সাবেক আওয়ামী লীগ নেতাদের কয়েকটি ছোট দল এসে বিএনপির সঙ্গে জোট গঠন করেছিলো। কামাল হোসেনকে ইমাম মেনে ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে করা নির্বাচনে তারা প্রতারিত হয়েছেন বিএনপি নেতারাও এমন মন্তব্য করেছেন।

স্বাভাবিকভাবেই আসছে নির্বাচনে বিএনপি কাকে তাদের প্রধানমন্ত্রীর মূখ ঘোষণা করবে তা নিয়ে কৌতুহল রয়েছে। নাকি আগের বারের মতোই পরিস্কার কোন ঘোষণা ছাড়াই নির্বাচনে যাবে দেশের অন্যতম সফল এই দলটি। বিএনপির দিক থেকে এ ধরনের প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতার মাঝেই সম্প্রতি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একবাক্যের ছোট এক জবাব দিয়েছেন।

জানিয়েছেন, তাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে প্রায় ১৫ বছর ক্ষমাতার বাইরে থাকা বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মামলা- জেল আরও স্বাস্থ্যগত নানা জটিলতায় রাজনীতি থেকে দুরে রয়েছেন। দ্বিতীয় শীর্ষ নেতা তারেক রহমানও কয়েকটি মামলার দণ্ড নিয়ে দীর্ঘ দিন লন্ডনে নির্বাসনে আছেন। তাই পরিস্থিতির কোন নাটকীয় পরিবর্তন না হলে তাদের দু’জনের প্রার্থী হওয়া বা স্বশরীরে প্রচারনায় অংশ নেয়ার সম্ভাবনা নেই।

তার মানে বিনা ইমামতিতেই নির্বাচন করবে বিএনপি? –এ প্রশ্নেরও জবাব নেই। তবে, আগামী নির্বাচনে বিএনপিকে আরেকটি ঘেরাটোপে ফেলার গুঞ্জন বেশ চাউর। গুঞ্জনটির সারাংশ হচ্ছে- বিএনপিকে একটি প্যাকেজ ডিলে ফেলে একটি চরম আছাড় দেবে সরকার।

এ চেষ্টায় সরকারের পক্ষে এবার ইমামতির দায়িত্বে প্রধানমন্ত্রীর এক উপদেষ্টা, যিনি এমপি ও ব্যবসায়ী। আর সহযোগী বিএনপির এক সময়ের পাওয়ারম্যাকার ও বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত বিশ্বস্ত একজন। চাচা-ভাতিজার এই মিশনে রাখা হয়েছে শেখ হাসিনাকে টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় রাখা এবং বিএনপিকে ২০২৯ সালে ক্ষমতায় আনার গ্যারান্টিক্লজ। ২০১৪ বা ২০১৮ সালের মতো জোরজবরদস্তি বা রাতের ভোটে নয়, দৃশ্যত সুষ্ঠু-অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমেই তা বাস্তবায়নের ছক আঁকা হয়েছে।

এই মুহুর্তে শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে সরকার পরিচালনার সামর্থ নেই বিএনপির, দ্রব্যমূল্যসহ অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামলানো কঠিন হবে-তাই আরেক মেয়াদে ক্ষমতার বাইরে থাকলে তাদের জন্য ভালো হবে-এমন একটি বুঝ গেলানো হচ্ছে।

শোনা যায়, এর বাইরে চিন্তা করলে তৃতীয় শক্তির উত্থানে আওয়ামী লীগের সাথে নিজেদের রাজনীতিও শেষ হয়ে যাওয়ার ভয় গেলানো হয়েছে বিএনপির একটি অংশকে। তারচেয়ে এবার এক শত চল্লিশটির মতো সিট নিয়ে বিরোধীদলে বসা বিএনপির জন্য ঝুঁকিমুক্ত এবং সম্মানের। বলা হয়েছে, বিএনপি নাকে তেল দিয়ে ঘুমালেও এ আসনগুলোতে জিতবে ধানের শীষ প্রতীক। সেইসঙ্গে দেয়া হবে নির্বাচনের যাবতীয় খরচপাতি।

বেগম খালেদা জিয়াকে অন্ধকারে রেখে এ ধরনের প্যাকেজের খবর ফাঁস হয়ে গেছে মাঝ পথে। এতে যারপরনাই ক্ষুব্ধ তিনি। এর সঙ্গে লন্ডন প্রবাসী নেতার আগ্রহ বা সম্পৃক্ততা রয়েছে কিনা, এ সংক্রান্ত তথ্য নেই। খালেদা জিয়ার অসুস্থতা ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিএনপিকে প্যাকেজের আওতায় প্যাকেট করে ফেলার এমন তৎপরতা সত্যি হয়ে থাকলে এর সাফল্য-ব্যর্থতা দুটাই নির্ভর করছে বিএনপির ওপর। এদিকে, বিএনপি আর কোন দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ না হয়ে এককভাবেই এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও জোটের পরিবর্তে সমমনা দলগুলোর সঙ্গে যুগপদ আন্দোলনে থাকবে দলটি। লেখক: সৃজনশীল প্রকাশক

বার্তাবাজার/এম.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর