বশেমুরবিপ্রবিতে ক্লাসরুম বন্টনকে কেন্দ্র করে চার শিক্ষিকাকে অপমান

গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের দপ্তরে মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যানসহ ৪ নারী শিক্ষিকা অপমানিত হয়ে কান্নাজড়িত অবস্থায় বের হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠে অবস্থান নেন উপাচার্যের দপ্তরের সামনে।

পরবর্তীতে শিক্ষক সমিতির কয়েকজন সদস্যর উপস্থিতিতে এ বিষয়ে উপাচার্যের সাথে কথা বলেন শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) দুপুরে এ ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, নতুন ভাবে রুম বন্টনের লিস্ট বের হওয়ার পর মনোবিজ্ঞানের ল্যাবরুমের পাশেই তাদের জন্য ২টা রুম বরাদ্দ করা হয় এবং ৮ তলার রুম ছেড়ে দিতে বলা হয়। হঠাৎ করেই সিভিল ডিপার্টমেন্ট এসে তাদের রুমে তালা লাগিয়ে দেয়। যেহেতু বিভাগের নতুন রুম এখনো বুঝে পাইনি এবিষয়ে কথা বলার জন্য মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান নুসরাত শারমিনসহ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসরিন নাহার, প্রভাষক মমতাজ সুলতানা, প্রভাষক সানজিদা কবির জুই উপাচার্যের দপ্তরে ক্লাস বন্টন নিয়ে কথা বলতে যান। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড একিউএম মাহবুব, প্রক্টরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন মহোদয়রা উপস্থিত ছিলেন। এক পর্যায়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের চার শিক্ষিকাকে কান্নাকাটি করতে করতে উপাচার্যের দপ্তর ত্যাগ করতে দেখেন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ জানালে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক কর্তৃক অনুঘটক বলার মতো ও ঘটনা ঘটেছে।

মনোবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাজিবুর রহমান আল ইনসান বলেন, ভিসি স্যার এর রুম থেকে বিভাগের চারজন শিক্ষিকা কান্না করতে করতে বের হন, সেটা বিভিন্ন বিভাগের ডিন এর উপস্থিতিতে। এটা শুধু আমার না, সকল শিক্ষাথীদের মনে কষ্ট দিয়েছে। পরবর্তীতে কথা বলার এক পযার্য়ে শিক্ষাথীদের অনুঘটক বলা হয় যেটা শিক্ষকদের কাছ থেকে কোনো ভাবেই কাম্য ছিল না। ছাত্ররা কখনোই অনুঘটক ছিল না, ছাত্ররা ন্যায্য দাবি নিয়ে সবসময় কথা বলেছে।তাহলে কি যারা ন্যায্য দাবি নিয়ে কথা বলে, তারাই অনুঘটক??

মনোবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সরন বলেন, একরকম জোরপূর্বক ভাবেই সিভিল বিভাগের তালা মারা’র বিষয়ে কথা বলতে যখন আমাদের ম্যামরা ভিসি স্যারের সাথে কথা বলতে যায়, তাদের অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট এর স্যারদের সামনে কটুক্তি করে কথা বলা হয়, তারা এই অপমান সহ্য না করতে পেরে কান্না করতে করতে বের হয়ে যায়। এইটা আমাদের চোখে পড়ে। যদিও ম্যাম এই সম্পর্কে পরবর্তীতে কোন কথা বলতে চায়নি। পরবর্তীতে আমরা শুধুমাত্র রুমের বিষয়ে নয়, ম্যামকে কেন অপমান করা হলো এবং মনোবিজ্ঞান বিভাগকে কেন এতো ছোট চোখে ভিসি স্যার দেখেন এই বিষয়ে ভিসি স্যারের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হয়। সেখানে আমাদের ম্যামরাসহ অন্যান্য ডিপার্টমেন্ট এর অনেক স্যার ম্যামরা ছিল। কথা বার্তার এক পর্যায়ে সিভিল ডিপার্টমেন্ট এর এক স্যার আমাদের অনুঘটক বলে অপমান করে বের করে দেয়।

সরন আরও বলেন, যেখানে ভিসি স্যারের অনুমতি নিয়েই আমরা তার সাথে কথা বলতে গিয়েছিলাম, সেখানে বাইরের ডিপার্টমেন্টের এক স্যারের এমন বক্তব্য শিক্ষার্থীরা কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি। ম্যামদের অপমানের পাশাপাশি অন্য বিভাগের শিক্ষককের মুখে ‘ অনুঘটক’ বলার এর তীব্র নিন্দা জানাই। যদি ভিসি স্যার ম্যামদের কাছে অনুতপ্ত বোধ না করেন এবং যে স্যার আমাদের অপমান করছে সে তার কথার জন্য অনুতপ্ত না হয় পাশাপাশি আমাদের রুম আমাদের বুঝিয়ে দেওয়া না হয় তাহলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে, যা সাইকোলজি ডিপার্টমেন্ট চায় না, কারণ তারা অনুঘটক না।

জানা গেছে, ইলেকট্রিকাল এন্ড ইলেকট্রনিকস বিভাগের (সি) চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান রাজীব শিক্ষার্থীদের অনুঘটক বলে উপাচার্যের রুম থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেন।

এবিষয়ে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বাড়িতে আছেন বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এ বিষয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান নুসরাত শারমিন অপমানিত হয়ে কান্নাকাটির বিষয়ে আপাতত মন্তব্য করতে রাজি হননি। বিষয়টি নিয়ে চুপ থাকবেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, যেখানে সহকর্মীদের সাপোর্ট পায়নি সেখানে বাইরের সাপোর্টের আশা করাটা ভুল। তবে শিক্ষক সমিতির কয়েকজন সদস্যর সাপোর্ট পেলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড রাজিউর রহমানসহ বিভিন্ন অনুষদের ডিন মহোদয়ের সাপোর্ট পাইনি বলে মন্তব্য করেন।

ছাত্রদের ‘অনুঘটক’ বলার বিষয়ে মনোবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, এটি যিনি বলেছেন তিনি ভুল বলেছেন। ছাত্ররা তো অবশ্যই অনুঘটক না। কারণ তাদের মাধ্যমেই বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত হয়।

সাগর/বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর