অবৈধ পন্থায় ভারত-বাংলাদেশের নাগরিক সাতক্ষীরার অশোকের পরিবার

তথ্য গোপন করে বাংলাদেশ-ভারতের নাগরিক হয়েছেন সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার অশোক ঘোষের পরিবার। নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে বাংলাদেশের কোন নাগরিক প্রতিবেশী দেশ ভারতের নাগরিক হতে হলে বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে অনুমতি নিতে হবে।

কিন্তু সেসব পন্থা ছাড়াই তথ্য গোপন করে নিজ ও পরিবারের সদস্যরা প্রতিবেশী দেশ ভারতের নাগরিক হওয়ার অভিযোগ উঠেছে অশোক ও তার পরিববারের বিরুদ্ধে।

এই পরিবারের সদস্যদের রয়েছে উভয় দেশের জাতীয় পরিচয়পত্র সহ সকল কাগজপত্র। এই অশোক ঘোষ পরিবার থাকেন ভারতের কোলকাতার হাটগাছা গ্রামে। সেখানে অনেক সম্পত্তির মালিক তিনি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, দেবহাটা উপজেলার সখিপুর ইউনিয়নের মাঘরীচক ভোটার এলাকার মৃত শচীন্দ্র নাথ ঘোষের ছেলে অশোক কুমার ঘোষ। ১৯৫৯ সালে আশোক ঘোষের দুই কাকা সুধীর ঘোষ ও অনিল ঘোষ স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি রেখে ভারতে চলে যান।

পরবর্তীতে তাদের ভাইপো অশোক ঘোষ দেবহাটা সেটেলমেন্ট অফিসে মুহুরির কাজ করার সুবাদে বুনিয়াদ ছাড়াই কৌশলে তাদের জমি নিজ বিক্রি যোগ্য করে নেন। এরপর সুযোগ বুঝে নিজ স্ত্রী অর্চনা ঘোষকে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের রাচীতে পাঠিয়ে দেন। সেখানে তিনি কৌশলে নাগরিকত্ব নেন।

অর্চনার সেখানের ভোটার সিরিয়াল নং-২১৯, পার্ট নং-২৪৫, ইপিআইসি নং- জিএইচ এফ- ৩২৪১৫৮৫। কিছু দিন যেতেই প্রদেশ পরিবর্তন করে ভারতের কোলকাতা এলাকায় এসে নতুন করে ভোটার হন অর্চনা। এই সুযোগে অশোক ও তার স্ত্রী অর্চনা সেখানকার নাগরিক হন। বর্তমানে আশোক ঘোষ (৬০), তার স্ত্রী অর্চনা (৫৪), ছেলে চিরঞ্জিত কুমার ঘোষ (২২), সন্দীপ কুমার ঘোষ (৩২), প্রদীপ কুমার ঘোষ (২৪) ভারতের হাটগাছা গ্রামের কোলকাতা কেএলসি-৭০০১৫৬, বামনঘাটা পঞ্চায়েতের নাগরিক।

যার মধ্যে আশোক ঘোষ ভাঙ্গড়-১৪৮ এর ভোটার নং-৫১, ইপিআইসি নং- টিডিএম ১৭২৭৮১৭। অপরদিকে, বাংলাদেশের মাঘরীচক এলাকার ভোটার সিরিয়াল নং-১৮২, ভোটার নং- ৮৭১০৩৯৫৩৩৪৭। তার স্ত্রী অর্চনা ঘোষ ভাঙ্গড়-১৪৮ এর ভোটার নং-৫০, ইপিআইসি নং- টিডিএম ১৭২৭৮০৯। বাংলাদেশের মাঘরীচক এলাকার ভোটার সিরিয়াল নং- ০৮৯, ভোটার নং- ৮৭১০৩৯৫২৮৫৭২। একই ভাবে ছেলে সন্দীপ কুমার ঘোষের ভারতীয় ভোটার নং-৩৩৬, টিডিএম-১৭২৭৮২৫, প্রদীপ কুমার ঘোষের ভোটার নং-৩৪৩, টিডিএম-১৭২৭৮৩৩, চিরঞ্জিত কুমার ঘোষের ভোটার নং-৪৫, টিডিএম- ১৯৭০৭২২।

এদিকে, সুকৌশলে অশোক ও তার পরিবার ভারত-বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে উভয় দেশের সুবিধা ভোগ করার পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে ১ একর ৩৮ শতক জমি বিক্রি করে ভারতে অর্থ পাচার করেছেন বলে একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানিয়েছেন।

যার মধ্যে সখিপুর সব-রেজিস্ট্রি অফিসের ২৪৪৩ নং দলিলে গত ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর কোঁড়া গ্রামের ফারুক হোসেনের নিকট ৫৭ শতক জমি বিক্রি করেন। ২০২১ সালের ৩ মার্চ একই গ্রামের রবিউল ইসলামের নিকট ৫৫০নং দলিলে ৫৯ শতক জমি বিক্রয় করেন।

এছাড়া ২০২১ সালের ৩০ মার্চে ৭৭০ নং দলিলে মরিয়াম নামের এক নারীর নিকট আরো ২২ শতক জমি বিক্রয় করেছেন। সবমিলে প্রায় ৩৪ লক্ষার্ধীক টাকা ভারতে পাচার করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া অবশিষ্ট প্রায় ৪ একর জমি বিক্রিয় করার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও তথ্য পাওয়া গেছে।

বিষয়টি নিয়ে পর পর দুদিন অশোক ঘোষের বাড়িতে গিয়েও তার দেখা পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নং ০১৯১৬-৬১২৫৮৩ এ কল করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

দেবহাটা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আলী সোহেল জুয়েল জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের একই সাথে নাগরিক বা ভোটার হওয়া যাবে না। যদি কেউ এই সুবিধা ভোগ করেন সেটি সম্পূর্ণ অবৈধ। তাছাড়া উভয় দেশের নাগরিক হতে হলে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাকে অনুমতি নিতে হবে। যদি কেউ তথ্য গোপন করে উভয় দেশের ভোটার হন সেক্ষেত্রে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, স্থানীয়রা দুদেশের নাগরিক আশোকের পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

খায়রুল/বার্তাবাজার/এম.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর