উত্তরায় গার্ডার দুর্ঘটনা : চালক ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা

রাজধানীর উত্তরায় ক্রেন থেকে গার্ডার ছিটকে প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে পাঁচজন নিহতের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। অবহেলাজনিতভাবে ক্রেন পরিচালনাকারী চালক, প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও নিরাপত্তার দায়িত্বপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে মামলায়।

সোমবার (১৫ আগস্ট) দিবাগত রাতে নিহত ফাহিমা আক্তার ও ঝরণা আক্তারের ভাই মো. আফরান মণ্ডল বাবু বাদী হয়ে উত্তরা পশ্চিম থানায় এ মামলা করেন। মামলা নম্বর-৪২।

উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মোহসীন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘উত্তরায় ক্রেন দুর্ঘটনায় নিহত দুই বোনের ভাই বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় তিনি অবহেলাজনিতভাবে ক্রেন পরিচালনাকারী চালক, সিজিজিসি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দায়িত্বপ্রাপ্ত অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনাটি গুরুত্বসহকারে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।’

এর আগে সোমবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে উত্তরার জসিমউদ্দিন এলাকায় আড়ং শো-রুমের সামনে বিআরটি প্রকল্পের একটি গার্ডার ক্রেন দিয়ে তোলার সময় রাস্তায় চলা একটি প্রাইভেটকারের ওপর পড়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেট কারে থাকা পাঁচজনের মৃত্যু হয়। যারমধ্যে দুজন শিশুও রয়েছে। গাড়িটিতে মোট সাতজন যাত্রী ছিলেন। এরমধ্যে দুই শিশু, দুই নারী ও একজন পুরুষ মারা গেছেন। ৫ স্বজনকে হারিয়ে কেবল বেঁচে আছেন দুই নবদম্পতি।

নিহতরা হলেন- রুবেল (৫০), ঝরণা (২৮), ফাহিমা, জান্নাত (৬) ও জাকারিয়া (২)। তাদের মরদেহ রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। নবদম্পতি হৃদয় (২৬) ও রিয়া মনি (২১) গুরুতর আহত হয়ে উত্তরার ক্রিসেন্ট হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

স্বজনরা জানান, ফাহিমা হলেন নববধূ রিয়া মনির মা। আর ঝরণা হলেন তার খালা। রুবেল সম্পর্কে ফাহিমা-ঝরণার বেয়াই। জান্নাত ও জাকারিয়া ঝরণার সন্তান। ফাহিমা-ঝরণাদের বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুরে। আর রুবেলের বাড়ি মেহেরপুরে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন- বিকেলে বিআরটি প্রকল্পের জন্য নির্মিত গার্ডার একটি ক্রেন দিয়ে সরানো হচ্ছিল। ওই সময় গার্ডারটি হঠাৎ করেই রাস্তায় চলমান প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে যায়। গার্ডারটি ক্রেন থেকে ছুটে যায়নি, বরং ক্রেনের একপাশ উল্টে যায়। ধারণা করা হচ্ছে- ক্রেনটির ধারণক্ষমতা কম ছিল কিংবা চালক ভুলভাবে সেটি অপারেট করেছেন।

এদিকে, পাঁচজনের মৃত্যুর ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাস র‍্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেম (বিআরটি) কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সকাল ৯টার মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা হলেন- মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব নীলিমা আক্তার, সওজের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান এবং ডিএমপির এডিসি মনজুর মোর্শেদ।

এর আগে দুর্ঘটনার বিষয়ে বিআরটি’র প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, ‘এই মুহূর্তে আমি না জেনে কিছু বলতে পারব না। ক্রেন কাত হয়ে গেছে- এটা যান্ত্রিক সমস্যা। এটা নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত না জেনে কিছু বলতে পারব না।’

উল্লেখ্য, গত ১৫ জুলাই গাজীপুরে একই প্রকল্পের ‘লঞ্চিং গার্ডার’ চাপায় এক নিরাপত্তারক্ষী নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় এক শ্রমিক ছাড়াও আরও একজন পথচারী আহত হয়েছিলেন।

তানজিম/বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর