দেবরের নির্যাতনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই প্রবাসীর পরিবার গ্রাম ছাড়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বাড়ির জায়গা দখলে গ্রামছাড়া করা হয়েছে দুই প্রবাসীর পরিবারকে। বাড়ি ফিরলে খুন করে লাশ গুমের হুমকী দেয়া হয়েছে তাদের। দু-সপ্তাহের বেশী সময় ধরে জেলা শহরে এক আত্বীয়ের বাড়িতে রয়েছেন তারা। এর আগে গত ৩ বছর ধরে জায়গা-সম্পত্তি দখলে দেবরের নির্যাতন সয়ে আসছিলো পরিবার দুটো।

বাড়ি থেকে বের করে তাদের বসত ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে। নবীনগর উপজেলার নাটঘর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের বাসিন্দা কুয়েতপ্রবাসী লাল চান মিয়ার স্ত্রী বানু বেগম সম্প্রতি পুলিশ সুপারের কাছে এ ঘটনার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ সালের ১১ই আগস্ট শ্বশুর আবু তাহের মিয়ার কাছ থেকে ৫২৪৯ নম্বর সাফ কাবলা দলিল মূলে

প্রথমে ১৮ শতক এবং ২০১১ সালের ৩রা এপ্রিল ২৬৩৪ নম্বর সাফ কাবলা দলিলমূলে আরো ৫শতক জায়গা কিনেন বানু বেগম। ক্রয় করা জায়গায় বসবাস করে আসছিলেন তারা।

বানুর সাথে ওই জায়গাতে বসবাস ছিলো তার দেবর মালেশিয়া প্রবাসী আমিন মিয়ার পরিবারের। ৪/৫ মাস আগে ক্রয় করা ২৩ শতক জায়গার সাড়ে তিন শতক অংশে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেন বানু। তখনই দেবর শাহজালাল মিয়া আরো ৫/৬জনকে সঙ্গে নিয়ে এসে ভবন নির্মানের কাজে বাধা দেন। এর কারণ জানতে চাইলে বানুর কাছে ছয় লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন শাহজালাল।

এ ঘটনার পরপরই বানু জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে দেবরের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। এর জের ধরে গত ২৯শে জুলাই শাহজালাল আবারো তার সঙ্গীসাথী নিয়ে প্রবাসী দুই ভাইয়ের স্ত্রী বানু ও তাহমীনা বেগমকে বেধড়ক মারধর করেন। এক পর্যায়ে শাহজালাল ও তার লোকজন বানুর ঘরে ঢুকে আসবাব ভাঙচুর করে স্টিলের আলমারি থেকে দুই লাখ টাকা ও তিন ভরি স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়।

বানু ও তাহমিনার কাছ থেকে ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের দুটি মোবাইল সেট ছিনিয়ে নেন দেবর শাহজালাল। তাদের মারধরে আহত হয়ে বানু ও তাহমিনা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। পরে তারা বানুর বড় বোনের বাড়িতে আশ্রয় নেন। শাহজালাল বাড়ি ফাঁকা পেয়ে বানুর দুটি গাভী চুরি করে নিয়ে যায়। শাহজালাল ও তার লোকজন এক পর্যায়ে বানু ও তাহমিনার বসতঘরে তালা ঝুলিয়ে দেন।

বাড়িতে গেলে বানুকে মেরে লাশ গুম করে ফেলবে বলে গ্রামে বলে বেড়াচ্ছে শাহজালাল। সরেজমিনে রসুলপুর গ্রামে গিয়ে দুই প্রবাসীর পরিবারের তিনটি বসতঘরে তালা ঝুলতে দেখা গেছে। শুশুরের কাছ থেকে কেনা জায়গার একটি অংশে বানুর পাকা ঘর নির্মানের কয়েকটি পিলার চোখে পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে কাজ বন্ধ থাকায় নিমার্ণসামগ্রী নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বানু বেগম বলেন, শুশুরের কাছ থেকে আমি ২৩শতক জায়গা নিজের নামে ক্রয় করেছি। যার বিএস রেকর্ডও আমার নামে। দেবর শাহজালালের বসতঘরও আমার কেনা জায়গায় পড়েছে। কিন্তু সেই এখন আমাকে ভবন নির্মাণে বাধা দিয়ে চাঁদা দাবি করেছে।

মারধর করে আহত করেছে। পরে আমাদের বসতঘরে তালা ঝুলিয়েছে। এখন হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। চেয়ারম্যান ও গোষ্ঠির সর্দারের কাছে গিয়েও কোনো সহায়তা পায়নি। উল্টো আমাকে দোষারোপ করছে। শ্বশুর আবু তাহের মিয়া বড় ছেলের স্ত্রী বানুর কাছে ২৩শতক জায়গা বিক্রির কথা স্বীকার করেন। তবে বানু বিএস খতিয়ানে জায়গা বেশী রেকর্ড করে নিয়েছে বলে জানান তিনি। এসময় ২৩ শতক জায়গার বিএস খতিয়ান রেকর্ড দেখালে চুপ হয়ে যান তাহের মিয়া। তাঁর ভাতিজা গোষ্টির সর্দার রমজান আলী মোল্লা বলেন, বিষয়টি সমাধানের

চেষ্টা করলেও বানু সাড়া দেয়নি। চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ দিয়েছে। আর আমরাই তাদের ঘরে তালা ঝুলিয়েছে নিরাপত্তার জন্য। তারা থাকতে চাইলে খুলে দিব। বিষয়টি আমরা সমাধান করে দিব। নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আমিনুর রশিদ বলেন-ঘটনার বিষয়টি তারা জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে দেখবেন বলে তিনি জানান।

রাসেল/বার্তাবাজার/এম.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর