মাদকের হটস্পট ডাঙাপাড়া, সন্ধ্যা থেকেই আনাগোনা শুরু

মাদকের টাকা জোগাতেই মাদক, জুয়া, চুরি আর দেহ ব্যবসা কারবার। চারটি কারবার চলে সমান তালে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের ডাঙা পাড়া গ্রামে। তাও আবার প্রকাশ্যে। নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে অনেকেই হয়ে গেছেন কারবারি। ওই উপজেলার ডাঙাপাড়া গ্রাম পরিণিত হয়েছে মাদকের হটস্পট।

ওই এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষের কাছে জানতে পেরেছে বার্তা বাজার প্রতিনিধি। সন্ধ্যা থেকে আনাগোনা শুরু হয় কেনাবেচার। ওই গ্রামের একজন মাদক সেবী ও তার মায়ের সাথে কথা হয়। তার মা জানান, এই গ্রামটি এক সময় অনেক ভালো ছিলো। আমার সন্তান ও ভালো ছিলো। মাদক কারবারীর সাথে চলাফেরা করতে গিয়ে আজ হয়ে গেছেন মাদকসেবী।

ওই গ্রামের নুর ইসলাম জানান, আমি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। আমার একমাত্র ছেলে নবম শ্রেণিতে পড়ে। গ্রামে মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে চলতে গিয়ে হয়ে গেছেন মাদকসেবী। মায়ের সোনা গহনা চুরি করে মাদক সেবন করেছেন। অনেক কষ্টের মাঝে নিজের সন্তানকে ভালো করার জন্য ১৫ দিন পর্যন্ত এক ঘরে বন্দি করে রেখেছিলাম।

তিনি আরো জানান, এই গ্রামে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও নিয়ন্ত্রণ চাই। ওই গ্রামে কিছু সংখ্যক বিত্তবান মাদক ব্যবসায়ী আছেন যার বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পাচ্ছেন না গ্রামের কেউ।

একই গ্রামের আবুল কালাম (২০) বলেন, এই ডাঙা পাড়া গ্রামে কিছু সংখ্যক মাদক ব্যবসায়ী আর মাদকসেবীদের আনাগোনায় ভরপুর। গ্রামটিতে মাদক ব্যাপক ভাবে বিস্তার লাভ করাই বিয়ে পর্যন্ত কেউ করতে চাচ্ছে না। মাদকের প্রতিরোধের জন্য প্রশাসনের কাছে সহযোগীতা একান্তভাবে কামনা করেন।

ওই গ্রামের সালমত জানান, আমাদের গ্রামটি নাজেহাল অবস্থা ছোট থেকে বড় পর্যন্ত মাদকের সাথে লিপ্ত। গ্রামের চারদিকে মাদক আর মাদক, বাড়িতেও মাদকের ব্যবসা করেন মহিলা গুলো। কিছু সংখ্যক মা বাবা পুলিশের গ্রেপ্তারের ভয়ে বাড়িতে মাদক সেবনের জন্য ঘর ছেড়ে দেন এমনও অভিযোগ পাওয়া গেছে। সন্ধ্যা হওয়ার সাথে
বহিরাগত ও এলাকার মাদক কারবারী কাণ্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। শুধু মাদক সেবনে থেমে থাকেনি, ছোট ছোট অনেক চুরি হয়েছে এলাকায়। তার কেউ নয় এলাকার
মাদকসেবীরা এমন কাজ করে এলাকাবাসীর অভিযোগ।

ওই এলাকার পাথর ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর আলম (৩৮) মাদকের সেবীদের ভালো হওয়ার পরামর্শ দিলে মাদক সেবীরা তার উপর চড়াও হন। জাহাঙ্গীরের ক্ষতিসাধন করার জন্য ষড়যন্ত্রের ছক আঁকেন। গত ৯ আগস্ট সাড়ে ১১টার দিকে পাকা রাস্তার উপর দিয়ে ব্যবসায়িক কাজে জাহাঙ্গীর বাজারে যাচ্ছিলেন। ওই সময়ে ওৎ পেতে থাকে মাদক সেবীরা। সুযোগ বুঝে দলবদ্ধভাবে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথার চোট মারলে চোট দেখতে পেয়ে একটু সরে গেলে আঘাত পিটের বাম পার্শ্বে গুরুতর হাড়কাটা জখম হয়।
মাদকসেবীরা অণ্ডকোষে স্বজোরে লাথি মারিতে থাকে জাহাঙ্গীর আলমকে। তিনি চিৎকার করলে স্থানীয়রা এগিয়ে আসে। গুরুতর অবস্থা হওয়ায় তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করান। শারীরিক অবস্থা উন্নতি না হওয়াই পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে রেফার্ড করেন। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রহিয়াছে। এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানা অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

তেঁতুলিয়া মডেল অফিসার ইনচার্জ আবু সাঈদ চৌধুরী জানান, এজাহার কপি পেয়েছি আইনগত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওসি আরো জানান, মাদকের সঙ্গে পুলিশের কোন আপস নেই। আমরা দির রাত চেষ্টা করছি। মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের ধরতে সক্ষম হচ্ছি। তবে জনগণ যতি সহযোগীতা করে তাহলে মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পক্ষে কাজ করতে সুবিধা হয়। আমরা সব সময় মাদক নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধ তৎপর আছি।

আল আমিন/বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর