বশেমুরবিপ্রবিতে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের শোভাযাত্রা

‘ঐতিহ্যগত বিদ্যা সংরক্ষণ ও বিকাশে আদিবাসী নারী সমাজের ভূমিকা’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আদিবাসী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস উপলক্ষে আদিবাসীদের ঐতিহ্যবাহী সাজ-পোশাকে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হয়।

মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের আদিবাসী শিক্ষার্থীরা এ শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন।

বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে এসে আদিবাসী শিক্ষার্থীরা তাদের সমসাময়িক জনজীবন নিয়ে তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন।

এসময় উপস্থিত বিজিই বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী অনুপম চাকমা বলেন, দেশের সমতল ও পাহাড়ের আদিবাসীরা সাংবিধানিক স্বীকৃতি চান। এজন্য আদবাসী হিসেবে নিজেদের পরিচয় প্রতিষ্ঠিত করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরেই তারা সোচ্চার। সরকার এই দাবি পূরণ না করে সংবিধানে তাদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী হিসেবে উল্লেখ করেছে।

তিনি উল্লেখ করেন, গত ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধনকালে জাতীয় সংসদে এমপিদের অনেকে আদিবাসী শব্দ নিয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট ‘ দিয়েছিলেন। পরে স্পিকার আদিবাসী শব্দের পরিবর্তে ক্ষুদ্র নৃ- গোষ্ঠী শব্দটি যুক্ত করেছিলেন।

এছাড়া ও ইংরেজী বিভাগের শিক্ষার্থী পৌলিনুশ কুজুর – ওঁরাও সম্প্রদায় বলেন, জাতিসংঘের মতে পৃথিবীর ৯০ টি দেশে ৪৮ কোটি আদিবাসী মানুষ আছে। বাংলাদেশে মোট ৪৩ টি ভাষা আছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের সমীক্ষায় আদিবাসীদের ৩৯ টি ভাষা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৪ টি বিপন্ন। ভারতের সাঁওতাল জাতিগোষ্ঠীর আদিবাসী নারী ধ্রুপদী মুর্মু দেশটির রাষ্ট্রপতি হয়েছেন।

এটি একটি অনন্য ঘটনা। তিনি বলেন ২০১১ সালে হঠাৎ করেই আদিবাসী শব্দটি নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। ওই সময়ের এই বিতর্কের সূত্রপাত হয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আদিবাসী শব্দটি বাদ দিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সন্নিবেশ করার পেছনে নির্দিষ্ট চিন্তা-ভাবনা ও লক্ষ্য কাজ করেছে। তিনি বলেন, আদিবাসী-বাঙালি মিলে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাঁওতাল রিনা হাঁসদা বলেন, দেশের ৩০ লাখের বেশি সংখ্যালঘু জাতির মানুষ মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত রয়েছে। সম্পূর্ণ এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে তাদের ভাষা, সংস্কৃতি ও জীবনধারাকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। ক্রমাগতভাবে আমাদের ভূমি অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে।

নিজ ভূমিতে পরবাসীতে পরিণত হওয়া এই সব মানুষের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠা তো দূরের কথা, এখন আত্নপরিচয়, মাতৃভাষা, সংস্কৃতি ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়েছে।

আইন বিভাগের ১ম বর্ষের জেসিকা চাকমা বলেন, প্রতিটা জাতির আত্ননিয়ন্ত্রন অধিকার রয়েছে। নিজের ভাষা, সংস্কৃতি চর্চার স্বাধীনতা রয়েছে। প্রতিটি জাতিকে তার নিজস্ব ভাষায় শিক্ষার সুযোগ করে দিতে হবে। প্রতিটি জাতির মাতৃভাষায় পাঠ্যপুস্তক প্রকাশে সরকার কে উদ্যোগ নিতে হবে।

তিনি আরো বলেন,পার্বত্য এলাকায় অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিভিন্ন মহলের উসকানিতে সংঘাতে জীবন হারাচ্ছে পাহাড়ের আদিবাসীরা। পর্যটন ও উন্নয়নের নামে উচ্ছেদ এবং ভাষা- সংস্কৃতির ওপর আঘাত সহ স্কুল পড়ুয়া আদিবাসী তরুণীরা প্রতিনিয়ত ধর্ষনের শিকার হচ্ছে।

তিনি পাহাড়ে ও সমতলে আদিবাসীদের ওপর নিপীড়ন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জোর দাবি জানান। এছাড়াও প্রয়োজনীয় আইনগত,ভূমি সমস্যার সমাধান সহ প্রশাসনিক ও অন্যান্য পদক্ষেপ গ্রহন করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সাগর/বার্তাবাজার/এম.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর