চাহিদার তুলনায় অর্ধেক বিদ্যুৎ সরবরাহ: অসহনীয় লোডশেডিং

জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারের পরিকল্পিত লোডশেডিং শুরুর পর প্রায় তিন সপ্তাহ পেরিয়ে যাচ্ছে। তবুও স্থিতিশীল হচ্ছেনা বিদ্যুৎ।

লোডশেডিংয়ের কারনে স্বস্তি নেই কোম্পানীগঞ্জে। সরবরাহ কম থাকায় গত কয়েকদিন ধরে অতিরিক্ত লোডশেডিং হচ্ছে সিলেট পবিস-২ এর আওতাধীন এলাকা কোম্পানীগঞ্জ ও ছাতকের একাংশে। সন্ধ্যার পর থেকেই শুরু হয় লোডশেডিং। বেশির ভাগ এলাকায় দিনে-রাতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকছে না।

দেশে গত ১৯ জুলাই এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং শুরু হয়। ওই দিন গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহকারী পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) সর্বোচ্চ লোডশেডিং করেছে ১ হাজার ৯১৫ মেগাওয়াট।

পবিস-২ সূত্রে জানা যায়, ছাতক গ্রিড থেকে কোম্পানীগঞ্জ ৩৩ কেবি লাইনের মাধ্যমে উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় প্রতিদিন অত্যাধিকহারে লোডশেডিং দিচ্ছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন প্রায় আট মেঘাওয়াট বিদ্যুৎয়ের চাহিদা রয়েছে কিন্তু সরবাহ হচ্ছে মাত্র সারে তিন থেকে চাঁর মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ।

লোডশেডিংয়ের জন্য কোম্পানীগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ একটি রুটিন প্রকাশ করলেও মানা হচ্ছেনা সেই রুটিন। চাহিদার অর্ধেক বরাদ্দ পাওয়ায় প্রতিদিন ১০/১২ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের সৃষ্টি হচ্ছে।

এছাড়াও বিদ্যুৎয়ের ফ্রিকোয়েন্সী ডাউন হয়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎয়ের ব্লাক আউট যাতে না হয় সে জন্যে নিরাপত্তার সার্থে প্রতিদিন ৩/৪ বার স্ক্যাডা অপারেশন করা হয়। প্রতিবার অপারেশনে অতিরিক্ত এক ঘন্টা লোডশেডিং হয়ে থাকে। প্রতিদিন ৩/৪ বার স্ক্যাডা অপারেশন হয়ে থাকায় অতিরিক্ত ৩/৪ ঘন্টা লোডশেডিং সৃষ্টি হয়। গ্রাহকদের জন্যে প্রতিদিন ৮ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদার তুলনায় অর্ধেকের কম বরাদ্দ পাওয়ায়  দিনে ১০/১২ ঘন্টা লোডশেডিংয়ের সাথে যোগ হচ্ছে স্ক্যাডা অপারেশনের ফলে অতিরিক্ত ৩/৪ ঘন্টা লোডশেডিং। সব মিলিয়ে গ্রাহককে দিনে ১৫/১৬ ঘন্টা লোডশেডিং পোহাতে হচ্ছে। এছাড়াও প্রাকৃতিক সমস্যাতো আছেই।

১৯ জুলাই থেকে টানা ১৯ দিন বিদ্যুৎ সরবরাহ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দিনে এক ঘণ্টা লোডশেডিং দেওয়ার কথা থাকলেও শুরু থেকেই তা মানা হয়নি। বরং অনেক গ্রামে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ ছিল না। কোথাও কোথাও আরও বেশি লোডশেডিং চলছে। যার ফলে অসহনীয় দূর্ভোগ পোহাচ্ছে উত্তর সিলেটের পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। আগামী মাসে এসএসসি পরিক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে। অসহনীয় লোডশেডিং থাকায় শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় মনযোগী হতে পারছেনা। শিশু ও বৃদ্ধরা লোডশেডিংয়ে কাতর হয়ে পড়েছে।

বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, পিডিবির করা বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের হিসাবের সঙ্গে তাদের তথ্যের মিল নেই। এতে করে প্রকৃত লোডশেডিং আরও বেশি হচ্ছে।

ইসলামপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন বার্তা বাজারকে বলেন, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত (গতকাল) ১০/১২বার লোডশেডিং হয়েছে। উপজেলার ঢালারপাড় গ্রামের আব্দুল মান্নান বলেন, সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ৬/৭বার লোডশেডিং হয়েছে। আর সন্ধ্যার পরেতো বলাই লাগেনা। কয়েকঘন্টা পরপর বিদ্যুৎ অল্প সময়ের জন্যে আসে।

উপজেলার বালুচর গ্রামের বাহার আহমদ রুহেল জানান, দিনে ১৮ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকেনা। বাকি ৬ ঘন্টা বিদ্যুৎ দিয়ে লাভ কি?  ২৪ ঘন্টা বিদ্যুৎ না দিলেই পারতো। বিদ্যুৎয়ের যথেষ্ট সাশ্রয় হতো। সন্ধ্যা নামতেই ভুতুড়ে পরিস্থিতি তৈরী হয় সমগ্র উপজেলায়। অত্যাধিক লোডশেডিংয়ে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেছে।

কোম্পানীগঞ্জ থানা সদর মডেল সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এ বছর এসএসসি পরিক্ষা দিবে জনি আহমদ। জনি আহমদ জানান,বন্যার কারনে লেখাপড়ায় পিছিয়ে পড়েছি। এরই মধ্যে অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারনে পরিক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছিনা। লোডশেডিংয়ের কারনে সন্ধ্যায় পড়তে পারছিনা।

পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মৃণাল কান্তি চৌধুরী বার্তা বাজারকে বলেন, চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎয়ের বরাদ্দ কম। তাই লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। প্রতিদিন ৮ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ চাহিদা রয়েছে কিন্তু অর্ধেকের কম বরাদ্দ মিলছে।

তিনি আরও জানান, আগামী মাসে বিদ্যুৎ লোডশেডিং সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু গত রবিবার (৭ আগস্ট) দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘এখন যে লোডশেডিং হচ্ছে সেপ্টেম্বর মাস থেকে তার অর্ধেকে নামিয়ে আনা হবে। অক্টোবর মাস থেকে লোডশেডিং স্বাভাবিক হবে বলে আশা করছি ।

বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর