সাংবাদিককে পিটিয়ে জখম করলো পৌর মেয়রের ভাই!

সংবাদ প্রকাশের সন্দেহের জের ধরে ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গায় সাংবাদিক মুজাহিদুল ইসলাম নাঈমকে পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছেন পৌর মেয়রের ভাই।

সোমবার (১ আগস্ট) দুপুরে আলফাডাঙ্গা পৌরসভার পরিবহণ বাসস্ট্যান্ডে এ ঘটনা ঘটে। আহত মুজাহিদকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

মুজাহিদ দৈনিক ঢাকা টাইমস পত্রিকার নিজস্ব প্রতিবেদক ও আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, আলফাডাঙ্গার রাজধানী পরিবহনের কাউন্টারে টিকেট কিনতে যান রমিজ নামের এক যুবক। তিনি ঢাকার একটি টিকেটের দাম পরিশোধ করে বাসে ওঠেন। বাস ছাড়ার আগ মূহুর্তে ‘ক্যাশ কাউন্টার’ থেকে বলা হয় রমিজ টিকিটের টাকা দেননি। তাই তাকে ঢাকায় যেতে দেয়া হবে না। বিষয়টি জানিয়ে নাঈমের সহযোগীতা চান রমিজ। ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টির মিমাংসা করার কথা বলতেই সাংবাদিক মুজাহিদের ওপর চড়াও হয় কাউন্টারের ম্যানেজার জাপান ও তার সহযোগীরা। জাপান আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র সাইফুর রহমানের ছোট ভাই। কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে মুজাহিদকে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। এসময় পাশে থাকা লোকজন এগিয়ে এলে তাদের উপরও চড়াও হন জাপান ও তার সহযোগিরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সাংবাদিক মুজাহিদের ওপর হামলাকারী জাপান মোল্যার স্ত্রী সোহানা বেগম গত ৭জুন বিষপান করে আত্মহত্যা করে অভিযোগ উঠে। এ ঘটনা নিয়ে তখন বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদ প্রকাশের বিষয়টি নিয়ে জাপান সাংবাদিক মুজাহিদকে সন্দেহ করে তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। তবে সাংবাদিক মুজাহিদের দাবী, তিনি ওই ঘটনা নিয়ে কোন সংবাদ প্রকাশ করেননি।

আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি সেকেন্দার আলম বলেন, ‘আমি ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি মুজাহিদকে দুর্বৃত্তরা লোহার রড, কাঠের বাট্যাম দিয়ে বেধড়ক পেটাচ্ছে। সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে তাকে স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হয়। তার হাত ও পায়ে বেশ জখম হয়েছে। পরে এক্সরে করা হয়। কিন্তু শারীরিক অবস্থার অবনতি দেখে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকরা তাকে ঢাকা মেডিকেলে রেফার্ড করছেন৷’

মুহাজিদকে হত্যার উদ্দেশ্যেই এমন মারপিট করা হয়েছে বলে জানিয়ে আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবীর বলেন, ‘তাকে মেরে ফেলার জন্য ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। কিন্তু স্থানীয়রা এগিয়ে আসায় তিনি প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।’

সাংবাদিক মুজাহিদের ওপর হামলা ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক হাসপাতালে ছুটে যান, আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রফিকুল হক, ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর ও আলফাডাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মো. ওয়াহিদুজ্জামান।

ফরিদপুরের সহকারী পুলিশ সুপার (মধুখালী সার্কেল) সুমন কর বলেন, ‘ঘটনা জানার পর পরই আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ভুক্তভোগী অভিযোগ দিলে এটা মামলা হিসেবে নেওয়া হবে। সাংবাদিক নির্যাতনের সঙ্গে যেই জড়িত থাকুক কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’

এদিকে সাংবাদিক মুজাহিদের ওপর হামলার ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবী জানিয়ে আলফাডাঙ্গা প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক এক প্রতিবাদ সভা করা হয়। এমন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রশ্রয় এ উপজেলায় দেওয়া যাবে না। ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূলহোতা জাপানকে দ্রুত আইনের আওতায় না আনলে সাংবাদিকরা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে বলে জানা গেছে।

রাকিবুল/বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর