৬ মাসে ৪৭৬ নারী ধর্ষণের শিকার

দেশে ধর্ষণ-নারী নির্যাতনের ঘটনা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ৪৭৬ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ২৪ জন নারীকে। ধর্ষণের পর আত্মহত্যা করেছেন ছয়জন। মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) ছয় মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। মঙ্গলবার (৫ জুলাই) এ প্রতিবেদন প্রকাশ হয়।

আসকের প্রতিবেদনে নারীর প্রতি সহিংসতা, রাজনৈতিক সহিংসতা, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও হেফাজতে মৃত্যু, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন, সাংবাদিক নির্যাতন, হয়রানিসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা বিষয় তুলে ধরা হয়।

সংবাদপত্রের তথ্য ও নিজস্ব অনুসন্ধানে এ প্রতিবেদন তৈরি করে আসক।

আসকের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত ৬ মাসে যৌন হয়রানিকেন্দ্রিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১৩১ জন নারী-পুরুষ। এর মধ্যে লাঞ্ছিত এবং হামলার শিকার হয়েছেন ৮২ জন নারী। যাঁদের মধ্যে যৌন হয়রানির কারণে পাঁচ নারী আত্মহত্যা করেছেন। অন্য দিকে যৌন হয়রানির প্রতিবাদ করতে গিয়ে বখাটে কর্তৃক তিন পুরুষ হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ৭২ নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে।

পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন মোট ২২৮ জন নারী। এর মধ্যে ১৪০ নারীকে হত্যা করা হয়েছে। পারিবারিক নির্যাতনের কারণে আত্মহত্যা করেছেন ৪২ নারী। এ ছাড়া শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৬ নারী। যৌতুককে কেন্দ্র করে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৯৮ নারী। যৌতুকের জন্য শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে ৪৯ জনকে এবং যৌতুকের কারণে নির্যাতনের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন ৬ নারী।

এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ধর্ষণের তথ্য বিশ্লেষণ করে আসক বলেছে, দেশের প্রায় সব কটি জেলায় ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ঢাকায়, ৪৭টি। এরপর নারায়ণগঞ্জে ৩৭, চট্টগ্রামে ২৭, গাজীপুরে ২২ ও নোয়াখালীতে ১৫টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে।

আসকের প্রতিবেদনে উঠে আসে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিষয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে লক্ষ করা যাচ্ছে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ তুলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের আক্রমণের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে। মুন্সিগঞ্জের একটি বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে কারাগারে পাঠানো হয়। নড়াইলের একটি কলেজের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে পুলিশের উপস্থিতিতে জুতার মালা পরিয়ে চরমভাবে হেনস্তা করা হয়। আশুলিয়ায় উৎপল সরকার নামে এক শিক্ষকের মৃত্যু হয়েছে শিক্ষার্থীর আঘাতে।

আসক মনে করে, এসব ঘটনাকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে দেখার সুযোগ নেই। এসবের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানবাধিকার যেমন লঙ্ঘিত হচ্ছে, তেমনিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থা।

আসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ছয় মাসে বিভিন্ন পর্যায়ের স্থানীয় নির্বাচনসহ রাজনৈতিক সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে মোট ২৫১টি। এতে নিহত হয়েছেন ৪৪ জন এবং আহত হয়েছেন ২ হাজার ৮৮৭ জন। স্থানীয় নির্বাচনসহ রাজনৈতিক কারণে দেশের ৬৪টি জেলার প্রায় সব কটিতেই সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

আসক বলেছে, গত ৬ মাসে ৮০৭ শিশু বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়েছে। এর মধ্যে হত্যার শিকার হয়েছে ১৫২ শিশু, আত্মহত্যা করেছে ২৬ শিশু, বিভিন্ন সময়ে ৫৬ শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে, রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে ১৩ শিশুর এবং ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে ১ শিশুকে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

বার্তাবাজার/জে আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর