লাল বাদশাহের দাম ১০ লক্ষ টাকা

কোরবানির ঈদের আর মাত্র কয়েক দিন বাকি। প্রস্তুতি শেষে পশুর বেপারী ও খামারিরা তাদের পশুগুলো হাটে তুলতে শুরু করেছে। তবে বাজারে ক্রেতা কম।

তার উপর যেসব ক্রেতা হাটে আসছেন তারাও দালালের দৌরাত্ম্যে বিড়াম্বনায় পড়েছেন। হাটগুলোতে গরু আমদানির তুলনায় ক্রেতার উপস্থিতি নিতান্তই কম।

কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশুর বেপারী ও খামারিরা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ,গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরসহ আশের পাশের সীমান্তবর্তী উপজেলা গুলোতে ঘুরে ঘুরে গৃহস্থ ও খামারিদের কাছ থেকে গরু কিনছেন। অনেক গৃহস্থ ও খামারি সরাসরি হাটে নিয়ে গরু বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েও খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনো জমে উঠেনি কোরবানির পশুর হাট।

বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, এবার উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুরের ছোট-বড় কয়েকটি গরু বাজার বন্যার কারণে ক্রেতাশূন্য। বিশেষ করে বন্যার পানি থাকায় সবাই বন্যা মোকাবিলায় ব্যস্ত। তাই কোরবানি দেওয়া নিয়ে চিন্তার মধ্যে আছেন। খামারি-বেপারীরা বলছেন, এবার পশু বেশি, কিন্তু ক্রেতা কম। ছয় মাস আগে গরুর যা দাম ছিল, এখন প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। খামারিদের এবার লোকসান গুনতে হবে।

সুহেল আহমদ নামে স্থানীয় এক পাইকার জানান, এবার ঈদে বন্যার জন্য পশু কম আসছে। প্রতি বছরের ন্যায় এবার আর গরুর বাজার ভরপুর নয়। অভাবে পড়ে যারা গরু নিয়ে আসছেন শুধু তাদের দেখা যাচ্ছে। অন্যান্য বছর ভারতীয় গরু আমদানি করলেও এবার গরু আমদানি করিনি। বাজারের গরুর দাম কম,অন্যদিকে আমদানিকৃত গরু অন্যান্য বছরের তুলনায় দাম কম। বিক্রিতে লস হবে ভেবে ভারতীয় গরু আমদানি করিনি। আমার মতো অনেক পাইকাররা এ বছর ভারতীয় গরু আমদানি করেনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ফয়েজ বেপারি এসেছেন সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ টুকেরবাজার গরুর হাটে। ফয়েজ বেপারি ১০ টি গরু কিনেছেন। তিনি জানান এখানে গরুর দাম কম। আসা করছি এই বছর ব্যবসায় লাভ হবে।

এ ব্যাপারে টুকেরবাজারে আশিলে দায়িত্বে থাকা জাফর আলী জানান, গত বছর এ সময়ে প্রতি হাটে প্রায় এক-দেড় লাখ টাকা কালেকশন হত। এবার তেমন কালেকশন হচ্ছেনা। বিশেষ করে গরু বাজারে থাকলেও কাস্টমার কম। এ জন্য বন্যাকে দায়ী করে বলেন, বন্যা না হলে উপজেলার সব থেকে বড় তাদের বাজারের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পশু আসত।

কোম্পানীগঞ্জের কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা যায়, যেসব মানুষ হাটে এসেছেন তারা পশুর দরদাম করে কেনার চেষ্টা করছেন, তবে দালালদের কারণে তারা পশু কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন। হাটে ক্রেতাদের মধ্যে শহরের লোকদের আধিক্য বেশি। গ্রামের ক্রেতা নেই বললেই চলে। গতবারের তুলনায় এবার পশুর দাম অপেক্ষাকৃত কম।

এদিকে গ্রামের নিম্ন ও প্রান্তিক চাষিরা একটু বেশি দামের আশায় তাদের পালিত গরু-ছাগল হাটে নিয়ে এলেও ক্রেতার অভাবে বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। হাটে ছোট সাইজের একটি গরু ৪০ হাজার টাকার নিচে এবং বড় আকারের গরু ৮০ থেকে ১ লাখ টাকা মতো। ছাগল ও বেড়ার দামও কম। তারপরেও যেসব ক্রেতা আসছেন তারা দালালদের জন্য কুরবানির পশুর ধারে-কাছেই যেতে পারছেন না।

আব্দুল হক নামের এক গরু বিক্রেতা জানান, মানুষের খাবার যোগাড় করা গেলেও গোখাদ্য নিয়ে তাদের চিন্তাগ্রস্ত। কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে দুইটি গরু মোড়াতাজা করছিলাম। কিন্তু বন্যায় সব খড় পচিয়ে দিয়েছে। ভাবছি লাভের আশা করবোনা আর, লাভ না হলেও নিজের গরু দুটি বিক্রি করে দেবো।

টুকের বাজার কোরবানির পশুর হাটে গরু বিক্রি করতে আসা ইসমাঈল আলী নামের এক খামাড়ি জানান, আমার খামাড়ের ২২টি গরু রয়েছে। এরমধ্যে ৯টি গরু কোরবানির হাটে বিক্রি করবো। সব চেয়ে বড় গরুটির ওজন প্রায় ২০ মন। অনেক যত্ম করে লালন করেছি। লাল রংয়ের হওয়ায় এবং খামারের সব বড় গরু হওয়ায় নাম দিয়েছি লাল বাদশাহ। যার দাম ধরা হয়েছে ১০ লক্ষ টাকা। যে ব্যক্তি লাল বাদশাহকে কিনবে সে ভাগ্যবান হবে।

অবশ্য শঙ্কা শুধু খামারিদের মাঝেই নয়, শঙ্কা রয়েছে ক্রেতার মাঝেও। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এবারও ছোট গরু কিংবা ছাগল ও ভেড়ার দিকে ঝুঁকতে পারেন ক্রেতারা। এ ছাড়া সাম্প্রতিক বন্যায় ছোট-বড় ব্যবসায়ী ও কৃষকরা সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার কারনে সিলেটের এই তিন উপজেলায় মোট কোরবানির সংখ্যাও কমতে পারে বলে মনে করছেন বিক্রেতারা।

কোম্পানীগঞ্জ,গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর এ তিন উপজেলায় অনুমোদিত পশুর হাট রয়েছে ৮টি। অস্থায়ী হাট রয়েছে ৬টি। এর মধ্যে জৈন্তাপুরে সরকার অনুমোদিত পশুর হাট ৩টি, নেই কোনো অস্থায়ী হাট। গোয়াইনঘাটে অস্থায়ী পশুর হাট ২ টি থাকলেও সরকার অনুমোদিত কোনো পশুর হাট নেই। কোম্পানীগঞ্জে অনুমোদিত ৫টি হাটের সাথে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আরও ৪টি অস্থায়ী কোরবানির হাট।

গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাহমিলুর রহমান বলেন,উপজেলায় দুটি অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট ছাড়া আর কোনো অনুমোদিত হাট নেই। তবে উপজেলার ৩৬টি হাটেই গবাদি পশুর হাট বসে।

তারিকুল/বার্তাবাজার/এম.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর