সাতক্ষীরায় সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধিসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তির নামে মাদক মামলা

সাতক্ষীরার দেবহাটার নাংলায় সরকারি কাজে বাধা, আসামী ছাড়িয়ে নেওয়া সহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, সংবাদকর্মী ও গ্রামের নিরীহ মানুষকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে সাতক্ষীরা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে। গত রবিবার (৩ জুলাই) দেবহাটা উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের নাংলা গ্রামে অভিযান পরিচালনা করেন সাতক্ষীরা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্তৃপক্ষ।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রবিবার মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে নাংলা গ্রামের আহাদ আলীর ছেলে এবাদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। পরে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাথে ওই পরিবারের সদস্যদের কথাকাটাকাটি হয়। এক পর্যয়ে হাজির হন স্থানীয় ইউপি সদস্য মাহামুদ গাজী ও স্থানীয় সংবাদকর্মী আবু সাঈদ। ঘটনা শুনে সেখানে দেখতে আসেন স্থানীয়রাও। এসময় মাদক নিয়ন্ত্রণের কর্তৃপক্ষের সাথে গোলোযোগের উপক্রম হলে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে মোবাইল ফোনে অবহিত করেন মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোকজন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সেখানে হাজির হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন এবং উভয়কে উপজেলায় আসার জন্য নির্দেশ দেন। সেই মোতাবেক অভিযুক্ত এবাদুল, ইউপি সদস্য, সংবাদকর্মী সহ আরো অনেকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অফিসে এসে ঘটনার বিবরণ দেন। একই সাথে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে তাদের অভিযোগ শোনেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার। এরপর উভয়ই উপজেলা পরিষদ চত্বর ত্যাগ করেন।

এদিকে, ঘটনার দিন রাতে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দেবহাটা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এতে সরকারি কাজে বাধা, আসামিকে জোরপূর্বক ছাড়িয়ে নেওয়া সহ বিভিন্ন অভিযোগ করা হয়েছে। উক্ত মামলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মাহমুদ গাজী, দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরা পত্রিকার নওয়াপাড়া প্রতিনিধি আবু সাঈদ সহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২০/৩০ জন অজ্ঞাত আসামি করে দেবহাটা থানায় ৩ নং মামলা দায়ের করা হয়। মামলা দায়েরের পর পুলিশের অভিযানে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি মাহমুদ গাজী (৫৫), আহাদ আলীর ছেলে তরিকুল ইসলাম (৩৫), তরিকুলের ভাই শরিফুল ইসলাম (৩৮) ও স্থানীয় ঘটক গোলাম হোসেন (৬৫) কে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এ বিষয়ে দেবহাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ ওবাইদুল্লাহ জানান, দেবহাটার নাংলা গ্রামের মাদক নিয়ন্ত্রণের অভিযানের কোন তথ্য থানা পুলিশের কাছে ছিল না। রাতে মাদক নিয়ন্ত্রণের পক্ষ থেকে উপ-পরিদর্শক রাসেল কবির বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ৪ জন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী জানান, রবিবার সাতক্ষীরা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্তৃপক্ষ নাংলা গ্রামে একটি অভিযান পরিচালনা করে। সেখানে স্থানীয়দের সাথে কতৃপক্ষের সংঘর্ষ হওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে আমাকে জানলে আমি সেখানে যেয়ে উভয়পক্ষকে স্বাভাবিক হতে বলি এবং আমার অফিসে তাদেরকে আসার জন্য নির্দেশ দেই। বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের বক্তব্য শোনার পর আনুষ্ঠানিকভাবে উভয় পক্ষ চলে যায়। পরে শুনেছি সাতক্ষীরা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এতে বেশ কিছু লোককে আসামী করা হয়েছে। তবে এতে জনপ্রতিনিধি, সংবাদকর্মীকে আসামী হওয়ার বিষয়টি আমার জানার বাহিরে। তিনি আরো জানান, মাদকের ব্যবহার বন্ধে সবধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

এদিকে সাতক্ষীরা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক রাসেল কবির জানান, আমরা অভিযান চালিয়ে এবাদুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তিকে মাদকসেবনের উপকরণ সহ আটক করি। পরে তাকে ছাড়িয়ে নিতে আমাদের উপর হামলা চালানো হয়। এতে আমাদের টিমের ২ সদস্য আহত হন। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মোতাবেক সরকারি কাজে বাধা ও আসামি ছিনিয়ে নেওয়ায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

তবে স্থানীয়রা জানান, এঘটনার পর থেকে গ্রেফতার আতঙ্কে এলাকায় পুরুষ শুন্য হতে চলেছে। এমনকি অনেক অসহায় মানুষকে ভুলবশত আসামি করা হয়েছে বলেও দাবি করেছেন স্থানীয়রা।

খায়রুল/বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর