মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ‘আলবদর’ নেতা আমিনুল গ্রেফতার

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি ‘আলবদর’ নেতা কে এম আমিনুল হক ওরফে রজব আলীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

রোববার (৩ জুলাই) রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর কলাবাগান থেকে তাকে ধরা হয়।

আত্মগোপনে থাকার সময় বেশ কয়েকবার পাকিস্তানে যায় যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি কে এম আমিনুল হক। আট বছরে বাসা পরিবর্তন করেছে কয়েকবার। শেষ পর্যন্ত র‌্যাবের জালে ধরা পড়েন আমিনুল হক।

তিনি বলেন, মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর আমিনুল হক রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন। এরপর থেকে তাকে ধরতে র‍্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় দফতরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-২-এর একটি দল অভিযানে নামে। তারপর আমরা ধরতে সক্ষম হই।

আমিনুল ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় কিশোরগঞ্জ, ভৈরব, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ এলাকায় নিরীহ মুক্তিকামী মানুষকে হত্যাসহ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত গণহত্যা, নির্যাতনসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন। তিনি ভৈরবে একটি কলেজে অধ্যয়নকালে পাকিস্তান ইসলামি ছাত্রসংঘের কলেজ শাখার সভাপতি ছিলেন, জানান মঈন।

তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধকালে তিনি ভৈরবে পাকিস্তানি সেনা ক্যাম্পে অস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে এলাকায় ‘আলবদর’ বাহিনী গঠন করেন। কিশোরগঞ্জ জেলার কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বও পালন করেন। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে হবিগঞ্জের লাখাই থানার কৃষ্ণপুর, গদাইনগর ও চণ্ডীপুর গ্রামে এবং কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম থানার সদানগর ও সাবিয়ানগর গ্রাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার ফান্দাউক এলাকায় গণহত্যা, লুটপাট ও নির্যাতন করেন। এ ছাড়া স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙালিদের অপহরণ করে রাজাকার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নির্যাতন করে হত্যা করেন তিনি।

র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, আমিনুল ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেন। ১৯৭২ সালে তার বিরুদ্ধে অষ্টগ্রাম থানায় দালাল আইনে তিনটি মামলা হয়। ওইসব মামলায় তার ৪০ বছর সাজা হয়। তবে রাষ্ট্রপতির বিশেষ ক্ষমায় মাত্র ১০ বছর সাজা ভোগ করে ১৯৮১ সালে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান। ১৯৯৭ সালে এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন এ আলবদর নেতা।

র‍্যাবের এ মুখপাত্র বলেন, ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ করা হলে আমিনুল আত্মগোপনে চলে যান। গ্রেফতার এড়াতে রাজধানীর ধানমন্ডি, কলাবাগানসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার বাসা পরিবর্তন করেন, সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার পরিচয় প্রকাশ পেতে পারে এমন জনসমাগম এড়িয়ে চলতেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আমিনুল ‘আমি আলবদর বলছি’ ও ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’ নামের দুটি বই প্রকাশ করেন। এসব বইয়ে তিনি মহান মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং ১৯৭৫ সালের শোকাবহ ১৫ আগস্টের দিনসহ বিভিন্ন বিষয় নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেন। এ বইয়ে নিজেকে ‘আলবদর কমান্ডার’ হিসেবে দাবি করেন। ২০১৪ সালে তার প্রকাশিত ‘দুই পলাশী দুই মীরজাফর’ বইয়ে স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য সন্নিবেশ করায় সরকার বইটি নিষিদ্ধ করে। এ ঘটনায় রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানায় তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, আমিনুলের দুই মেয়ে। তারা সিঙ্গাপুর ও অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। তাদের ছাড়া তিনি সচরাচর কারো সঙ্গে কথাও বলতেন না। আত্মগোপনে থাকার সময় তারা (দুই মেয়ে) রজব আলীর খরচ বহন করতেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে পাকিস্তানি ক্যাম্পে প্রশিক্ষণকালে পরিচিত ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা করতে একাধিকবার পাকিস্তানে গেছেন।

বার্তাবাজার/জে আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর