সাতক্ষীরায় পশুহাট জমলেও দাম নিয়ে হতাশ খামারিরা

কড়া নাড়ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল আযহা। ধর্মীয় ঐতিহ্য ও ভাব-গাম্ভীর্য্যরে মধ্য দিয়ে ১০ জুলাই ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে পশু কোরবানি করবেন সারাদেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মপ্রান মানুষ।

গেল বছর মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বে ঈদ উৎসবের আনন্দ অনেকটাই ফিঁকে হলেও, এবার ফের উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে এ বৃহৎ ধর্মীয় উৎসবটি পালনে প্রস্তুত গোটা মুসলিম সম্প্রদায়।

তবে অর্থনীতিবীদদের মতে, করোনা পরবর্তী দেশের মোট জনসংখ্যার একটি বড় অংশ এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি তাদের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। যার প্রতিফলন ঘটেছে এবারের ঈদে কোরবানির পশু বেঁচাকেনায়। অধিকাংশ মধ্যবিত্তরা এবার ঝুঁকছেন ছোট বা মাঝারি সাইজের পশু কোরবানিতে।

যে কারণে এবারের কোরবানি ঈদে লাখ টাকা বাজেটের মধ্যে গরু বা মাঝারি সাইজের ছাগলের চাহিদা তুলনামুলক বেশি পশুহাট গুলোতে।

অপরদিকে গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও বছর জুড়ে গরু পালন এবং পরিচর্চায় খরচ বেশি হওয়া স্বত্বেও কাঙ্খিত দামের চেয়ে কম দামে গরু বিক্রি করতে হচ্ছে খামারীদের। এতে করে রীতিমতো কপালে দুঃচিন্তার ভাজ পড়েছে খামারী ও ব্যবসায়ীদের। তবে ঈদের আগ মুহুর্তে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে গরু আমদানী না হওয়ায় কম দামে হলেও গরু বিক্রি করতে পেরে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে বলে অভিমত খামারীদের।

দেশের দক্ষিনাঞ্চলের অন্যতম বৃহৎ কোরবানির পশুর হাট পারুলিয়ার গরু হাটটিতেও পশু বেঁচাকেনায় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে সেই চিত্র। রবিবার সরেজমিনে পারুলিয়া পশু হাটে গিয়ে অন্যান্য বারের মতো চমকপ্রদ ও বিশালাকৃতির সারি সারি গরুর দেখা মেলেনি। হাতে গোনা ৮ থেকে ১০টি বড় সাইজের গরু হাটে তুললেও, ঘন্টার পর ঘন্টা রোদ-বৃষ্টিতে দাড়িয়ে থেকে ক্রেতা না মেলায় তা ফিরিয়ে নিয়ে যান ব্যবসায়ী ও খামারীরা।

রবিবার পারুলিয়া পশুহাটে সবচেয়ে বড় আকৃতির দুটি গরু বিক্রির জন্য তুলেছিলেন উত্তর সখিপুরের খামারী নুরুজ্জামান। তিনি বলেন, অনেক আশা নিয়ে দুটি বড় সাইজের গরু হাটে তুলেছি। একটি ওজন ১৩ মন, অপরটির ওজন ১০ মন। লালন পালনে যেহারে খরচ হয়েছে, তাতে আশা ছিল বড় গরুটি নুন্যতম সাড়ে তিন লাখ টাকায়, এবং অপরটি আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি হবে। কিন্তু ক্রেতার উপস্থিতি কম থাকায় বড় গরুটি তিন লাখ টাকা পর্যন্ত দাম হচ্ছে। সেজন্য বিক্রি না করে গরু নিয়ে রোদ-বৃষ্টির মধ্যে বসে আছি।

দক্ষিন সখিপুরের অপর গরু খামারী বিমল চন্দ্র বলেন, নিজের খামারের একটি গরু হাটে এনেছি। গরুটির ওজন ১০মন। দুই লাখ আশি হাজার টাকা দাম চেয়েছিলাম, কিন্তু ক্রেতা জুটেনি বলে দিনশেষে গরু নিয়ে বাড়িতে ফিরে এসেছি।

এদিকে মাঝারি সাইজের খাসি ছাগল ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকায় এবং চল্লিশ কেজি ওজনের বড় সাইজের খাসি ছাগল ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে পশুহাটে।

পারুলিয়া পশু হাটের ইজারা গ্রহীতা সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য আলহাজ্ব আল ফেরদাউস আলফা বলেন, কোরবানির ঈদ ঘিরে এবছর পশুহাটের বেঁচাকেনা অনেকটাই কমেছে। একেতো কোরবানির পশুর চাহিদা ও দাম দুটোই কম। তার ওপর বেশিরভাগ মধ্যবিত্তরাই হাটে না এসে এলাকা থেকে কোরবানির পশুর বেঁচাকেনা সেরে ফেলছেন। সরকারের থেকে কোটি টাকায় পশু হাটের ইজারা নিয়ে এখন লোকসানের আশংকায় তিনিও বেশ দুঃচিন্তায় রয়েছেন। তাই ঈদের আগে আরও দু’একটি হাট বসানোর জন্য জেলা প্রশাসনের অনুমতি চেয়েছেন ইজারাগ্রহীতা আলফা।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোরবানির পশু বেঁচাকেনার জন্য আগামী ৭ জুলাই বৃহষ্পতিবার সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত পশুহাট পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।

খায়রুল/বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর