নারী বীর মুক্তিযোদ্ধার স্বপ্নের ‘বীর নিবাস’ এ ফাটল

লাল-সবুজ রঙে রাঙানো দেয়াল। দেয়ালজুড়ে যেন বাংলাদেশের পতাকারই প্রতিচ্ছবি। বাড়ির সামনে পাথরের নামফলকে লেখা ‘বীর নিবাস’। সরকারের দেওয়া এই ঘর পেয়ে খুশিই ছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা সরমিলা দেব। তিনি আখাউড়া উপজেলার উত্তর ইউনিয়নের আমোদাবাদ গ্রামের বাসিন্দা।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত অবদানের জন্য ২০১৮ সালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পের আওতায় ‘বীর নিবাস’ নামে এক তলা একটি ঘর নির্মাণ করে দেয় সরকার।

স্বপ্নের ঘর পেয়ে ওই নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা যারপর নাই খুশি হয়েছিলেন। এই ঘর তাঁকে দিয়েছিল নিরাপদ ও শান্তি সুখে বসবাসের একটু আশ্রয়। দিয়েছিল সম্মান, সামাজিক মর্যাদা। কিন্তু স্বপ্নের সেই ঘর এখন দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়েছে। মাত্র চার বছরের ব্যবধানে তার সপ্নের সেই ‘বীর নিবাস’ এ ফাটল ধরেছে। খসে পড়ছে পলেস্তরা। বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ছে ঘরে। ঘরের ফাটলে যেন তাঁর হৃদয় ভেঙ্গে গেছে। মনের সেই সুখ হারিয়ে গেছে।

ঘরের পলেস্তরা পরে আহত হওয়ার শঙ্কায় দিন কাটছে এই বীর মুক্তিযোদ্ধার। নারী বলে তাঁর ঘরের কাজটি ভালোভাবে করেনি অভিযোগ করেছেন তিনি। সরমিলা দেব আমোদাবাদ গ্রামের মহেন্দ্র দেবের মেয়ে। তারা দুই বোন বীর মুক্তিযোদ্ধা। অপর জন হলেন গীতা দেব।

আখাউড়া উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভূমিহীন ও অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য বাসস্থান নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর উপজেলার আমোদাবাদ গ্রামের নারী বীর মুক্তিযোদ্ধা সরমিলা দেবকে প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে একটি পাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়।

উল্লেখ্য যে, ওই সময় উপজেলায় ১০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে বীর নিবাস নির্মাণ করে দেওয়া হয়। এরমধ্যে সরমিলা দেব একজন। ঘরটিতে দুটি শয়নকক্ষ, একটি প্রশস্ত বারান্দা ও শৌচাগার আছে। হাঁস, মুরগি পালনের জন্য পৃথক শেড এবং একটি নলক‚প। ঘরটি নির্মাণের ৭/৮ মাস পর থেকেই ছোট ছোট ফাটল দেখা দেয়। যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সরজমিনে একাধিকবার বীর মুক্তিযোদ্ধা সরমিলা দেবের বাড়িতে গিয়ে গেছে, ঘরের দেয়ালের ভিতরে, বাইরে, বাথরুমে ছোট বড় প্রায় ২০টি ফাটল রয়েছে। মেঝের বিভিন্ন স্থানে ফাটল। ছাদের বিভিন্ন স্থানে পলেস্তরা খসে পড়েছে। রং ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। বাথরুমের ফাটল দিয়ে পানি পড়ে।

এ ব্যপারে বীর মুক্তিযোদ্ধা সরমিলা দেব বলেন, আমার কোন ছেলে সন্তান নাই। ৪টি মেয়ে। স্বামী মারা গেছে প্রায় ১৮ বছর আগে। ঘরের জন্য আমি অনেক কষ্ট করেছি। কিন্তু ঘর পাওয়ার ৭/৮ মাস পর থেকেই ঘরে ফাটল দেখা দেয়। তারপর আমি ঘরের ঠিকাদার ইসমাইল হোসেনকে বাড়িতে এনে ফাটল দেখিয়েছি।

পরে ফোনেও একাধিবার বলেছি। কিন্তু তিনি কোন ব্যবস্থা নেননি। দিন দিন ফাটল বাড়ছে। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ঘরটা তো ফাটছে না, মনে হয় আমার হৃদয়টা ফেটে গেছে। ঘরের মধ্যে থাকতে ভয় পাই। কখন আস্তর ভেঙ্গে আমার মাথায় পড়ে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, নারী বলেই হয়তো আমার ঘরের কাজটি ঠিকমত করেনি।

উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার সৈয়দ জামসেদ শাহ বলেন, নির্মাণের ৪ বছরের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার ঘরে ফাটল দেখা দেওয়া দু:খজন। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।

তিনি আরও উপজেলা মাত্র তিন জান নারী মুক্তিযোদ্ধা। এরমধ্যে তারা দুই বোন। আখাউড়ায় প্রায় ৬শ মুক্তিযোদ্ধা বলে জানান তিনি।

ঘরের ফাটলের বিষয়ে জানতে চাইলে ঘরের ঠিকাদার মোঃ ইসমাইল হোসেন এক কথায় বলেন, দেখব। জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ আমিনুল ইসলাম সুমন বলেন, সঠিকভাবে কিউরিং না হলে ফাটল হতে পারে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার অংগ্যজাই মারমা বলেন আপনার মাধ্যমে আমি বিষয়টি অবগত হয়েছি। উপজেলা প্রকৌশলীকে নির্দেশ দিব সরজমিনে তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য। প্রতিবেদন পাওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

পারভেজ/বার্তাবাজার/এম.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর