বাড়ি ফেরার প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন বন্যাদুর্গতরা

সিলেট ও সুনামগঞ্জের বানভাসিরা রয়েছে উপোস। গাদাগাদি করে আর থাকতে মন চায় না তাদের। গবাদি পশুগুলোও তাই। শিশু ও বয়স্করাও অর্ধাহারে-অনাহারে। নাওয়া, খাওয়া নেই। বিশুদ্ধ পানি নেই। স্যানিটেশন সুবিধাও নেই। এরই সঙ্গে যোগ হয়েছে রোগবালাই আর দুর্ভোগ। তাই নিজ বাড়িতে ফিরতে চাই। এ জেলার ১২৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ও অন্যত্র আশ্রয় নেয়া প্রায় দেড় লক্ষাধিক মানুষের বসতভিটায় ফেরার এখন প্রতীক্ষা।

১৮ দিন থেকে বাড়িঘর ছেড়ে জীবন বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছেন অন্যত্র। আশ্রয় নেয়া বানভাসিদের এখন রাতদিন কাটছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়। তারা বাড়ি ফেরার প্রতীক্ষায় ছটফট করছেন। কিন্তু বানের পানিতো কমেনি বরং বাড়ছে ফের বন্যার আশঙ্কা। ঘরবাড়ি থেকে নামেনি পানি। ডুবন্ত রয়েছে রাস্তাঘাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্ষেতের জমি আর মাছের খামারসহ সবই। সামনে ঈদ। ঈদের আগে কি ফিরা যাবে নিজেদের বসতভিটায়। বসতঘর ঠিকঠাক আছে তো। নানা প্রশ্ন তাদের মনে।

এ জেলায় বন্যা সহসা ইতি টানছে না। আর বানভাসিদের বাড়ি ফেরার প্রতীক্ষার প্রহরও দ্রুত শেষ হচ্ছে না। এমনটিই জানাচ্ছেন বন্যাকবলিত হাকালুকি হাওর তীরের প্রায় ৩ লক্ষাধিক মানুষ। থেমে থেমে অব্যাহত বৃষ্টি। আর উজানের নেমে আসা পাহাড়ি ঢল। বন্যার সার্বিক অবস্থা রয়েছে অপরিবর্তিত। কুশিয়ারা নদী তীরবর্তী রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হলেও, হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি যেই-সেই।

ওই ৩ উপজেলার বন্যাকবলিত শতভাগ বাড়িঘর ও রাস্তাঘাট এখনো পানিতে তলিয়ে আছে। তাই বাড়ি ফেরার সুযোগ নেই। শ্রমজীবী ও কৃষিজীবী মানুষ কর্মহীন থাকায় নেই আয় রোজগার। তাই কেবলই দুশ্চিন্তা। সামনে ঈদ। ঈদে পরিবারের সদস্যদের জন্য নতুন জামা কাপড় কেনা তো দূরের কথা দু’বেলা দু’মুঠো ভাতেরও নেই নিশ্চয়তা। সাহায্য হিসেবে পাওয়া ত্রাণই সম্বল।

জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ইউনিয়ন ৩৮টি। পানিবন্দি পরিবার ৫৮,৫৯৫টি। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ২,৬২,৭৩৬ জন আর ঘরবাড়ির সংখ্যা ১৪,৩০৯টি। ১২৯টি আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ২১ হাজার মানুষ ও ৩ হাজার গবাদিপশু আশ্রয় নিয়েছে। সরকারি তরফে ৪৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা, ৮০৫ টন চাল, ১৭শ’ প্যাকেট শুকনো খাবার ও ৮৯ হাজার পিস পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে।

সরজমিন জেলার বন্যাকবলিত হাওর ও নদী তীরবর্তী এলাকায় গেলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান এখন তারা খানি, পানি, রোগবালাই ও স্যানিটেশনসহ নানা সমস্যায় ভুগছেন। তাই তারা দ্রুত বাড়ি ফিরতে চান। কিন্তু বন্যার পানি এখনো অপরিবর্তিত থাকায় সে সুযোগ নেই। তারা বলেন বন্যায় বাড়িঘর ভেঙে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা কি করে মেরামত করবো এখন সে দুশ্চিন্তা সবার।

হাকালুকি হাওর পাড়ের ভূকশিমইল ইউনিয়নের বাসিন্দা ইয়ামন আলী (৬৫), শফিক মিয়া (৭০),আবিদ আলী (৫৮), কলিম মিয়া (৪৮) জানালেন সরকারি তরফে তারা পাচ্ছেন না পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা। বন্যার শুরুতে অল্প পরিমাণে যা দেয়া হয়েছিল, তা কেউ পেয়েছেন। আবার অনেকেই পাননি। আর ব্যক্তি, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনগুলোর উদ্যোগে যা দেয়া হচ্ছে তা আশ্রয়কেন্দ্র ছাড়া প্রত্যন্ত অঞ্চলে চরম ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে পৌঁচাচ্ছে কম।

বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর