ধর্মীয় উসকানিমূলক পোস্ট ববি শিক্ষকের, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান সঞ্জয় সরকারের একটি ফেসবুক পোস্ট নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

ফেসবুকে তিনি ধর্মীয় উস্কানী দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরদের বিভিন্ন ফেসবুক পোস্টে সঞ্জয় সরকারের লেখার প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে। বাংলা বিভাগের আরেক শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক উন্মেষ রায়ের বিরুদ্ধেও ধর্মীয় উস্কানীর অভিযোগ আনেন শিক্ষার্থীরা।

ভার্চুয়াল এই প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আব্দুল কাইয়ুম ফেসবুক পোস্টে প্রতিবাদ জানিয়েছে। তিনি বলেন “যারা অন্যান্য ধর্মের প্রতি ঘৃণা প্রচার করে তাদের খারাপ উদ্দেশ্য আছে। শান্ত পরিবেশকে ধ্বংস করাই তাদের লক্ষ্য। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত এবং একটি ন্যায্য বিচারের ব্যবস্থা করা উচিত।

ইংরেজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মিজানুর রহমান লিখেছেন, দুর্জন বিদ্যান হলেও পরিত্যাজ্য।

মূলত ধর্মীয় বক্তা শায়খ আহমাদুল্লাহর একটি ফেসবুক পোস্ট “অনুগ্রহ করে এবার বন্যার্তদের জন্য অবৈজ্ঞানিকভাবে ঢাকায় কেউ মোম প্রজ্বালন করবেন না। পারলে সে মোমগুলো দুর্গতদের জন্য পাঠিয়ে দিন।” এটি Jahangirnagar University – Admission Test নামের পেইজ থেকে প্রকাশ করা হলে শিক্ষক সঞ্জয় সরকার উক্ত পোস্ট শেয়ার করে ফেসবুকে লিখেন “আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মৌলবাদ ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দিয়ে পেজ খুলে সেসব প্রচার করা হচ্ছে। এসবের দায় একদিন আমরা কেউ এড়াতে পারবো না।”

পোস্টের কমেন্টে শিক্ষার্থীরা নানা প্রশ্ন করলে তিনি কারো প্রশ্নের উত্তর দেননি। পরে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়ে তিনি পোস্টটি ডিলেট করে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৩০ জন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন ফেসবুকে বিভিন্ন সময় এই দুই শিক্ষকের ধর্মীয় উস্কানিমূলক পোস্টে গঠনমূলক সমালোচনা করলে সেটার রিপ্লাই না দিয়েই আনফ্রেন্ড অথবা ব্লক করে দেন।

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, সঞ্জয় সরকার স্যারের ক্রমাগত ফেইসবুকে ধর্ম বিদ্বেষের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিভক্তি ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। মোমবাতি প্রজ্বলন ও বন্যার্তদের সহযোগিতাকে কেন্দ্র করে আলেমদেরকে মৌলবাদী বলায় তা আরো প্রকট হলো। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে স্যারের কাছ থেকে আমরা এমনটা কখনও আশা করি না।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী রেজা বেপারী বলেন, শান্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে অশান্ত করছেন তারা। শিক্ষকতার মত মহান আদর্শকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িক আগুন ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তারা আসলে কি চায়? তারা বাম নয়, অসাম্প্রদায়িকও নয় তারা ইসলামবিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার মিলান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের এই দুজন শিক্ষককের ফেসবুক টাইমলাইন জুড়ে শুধু ধর্মীয় বিদ্বেষই খুঁজে পাওয়া যায়। তারা সবসময়ই ধর্মীয় উস্কানীমূলক লেখা পোস্ট করেন। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টি করে বিভাজন তৈরি করছেন তারা। যখন গঠনমূলক সমালোচনা করা হয় আনফ্রেন্ড করেন, না হয় পোস্ট ডিলেট করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, সিলেটে যেখানে ১০ টাকার মোমবাতি ১০০টাকা সেখানে রাস্তায় রাস্তায় মোমবাতি প্রোজ্জ্বলন না করে ওইগুলো সিলেটে পাঠাইলে তারা অন্তত গলা সমান পানিতে রাতের অন্ধকারে একটু আলো দেখতে পাবে। আর এমন আহ্বানে যদি একজন শিক্ষক মৌলবাদ খুঁজে পান সেটা নিশ্চয়ই ইসলাম ধর্মবিদ্বেষী কাজ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন শিক্ষক জানিয়েছেন যে, শিক্ষক সঞ্জয় সরকার ও উন্মেষ রায় প্রায়ই এমন উষ্কানিমূলক পোস্ট দেওয়ার জন্য তারা এই দুই শিক্ষককে ফেসবুক থেকে আনফলো করে রেখেছেন এবং এই বিষয়টি নিয়ে তারাও বিব্রত।

এ বিষয়ে বাংলা বিভাগের শিক্ষক সঞ্জয় সরকার বলেন, এটা ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক কোন কথা না। কেউ যদি বলে থাকে তাহলে সেটা ভুল বুঝেছে। স্টুডেন্টরা কেউ যদি ভুল বুঝে আমাকে কিছু বলে থাকে সেটাতে আমার কোন কথা বলার নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া জানান, ঘটনাটি আমি জেনেছি। আমি একটি মিটিংয়ে আছি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের অভিভাবক ভিসি স্যারের সাথে কথা বলেন৷

এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. ছাদেকুল আরেফিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ইমদাদুল/বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর