স্বপ্নের পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতু আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে
ক্ষমতায় এসে পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দ্রুত ফিজিবিলিটি স্টাডি করার জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৮ -৯৯ সালে বিশেষজ্ঞদের দিয়ে প্রমত্ত পদ্মার উপর সেতু নির্মাণের প্রাগ-সম্ভব্যতা যাচাই করা হয়।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০১ সালের ৪ জুলাই বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।দক্ষিণ – পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ আশায় বুক বাঁধে, তাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর এখন বাস্তবে রূপ নেবে।কিন্তু দুর্ভাগ্য দেশবাসীর রাজনৈতিক পালাবদলের সাথে সাথে পদ্মা সেতুর ভবিষ্যত নিয়ে দেখা দেয় অনিশ্চয়তা। সকল কর্মকান্ড থেমে যায়, শুধুই সময় ক্ষেপণ।

২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে পদ্মা সেতু
নির্মাণের অঙ্গীকার করা হয়। আবার দেশের দক্ষিণ- পশ্চিম অঞ্চলের মানুষ আশায় বুক বাঁধে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজে হাত দেন।২০০৯ সালে সেতুর ডিজাইনের জন্য আমেরিকান কনসালটেন্ট এইসিওএম (AECOM) কে নিয়োগ করা হয়।

এইসিওএম এর নেতৃত্বে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পরামর্শকদের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্তের পদ্মা সেতুর প্রাথমিক ডিজাইন সম্পন্ন করে সেতু বিভাগে জমা দেয় এবং সেতু বিভাগ ২০১০ সালের এপ্রিলে প্রি কোয়ালিফিকেশন দরপত্র আহ্বান করে। প্রি কোয়ালিফিকেশনে মোট ৪০ টি কোম্পানি অংশ নেয়।বিশ্ব
ব্যাংক,জাইকা এবং এডিবির তত্ত্বাবধানে যাচাই-বাছাই করে প্রাথমিকভাবে ৫ টি কোম্পানিকে নির্বাচন করা হয়। পরে বিশ্ব ব্যাংকের আপত্তির কারণে একটি কোম্পানি বাদ পড়ে যায়।
এ প্রকল্পটি দেশবাসীর বহু কাঙ্ক্ষিত স্বপ্নের প্রকল্প হওয়ায় বিশ্ব ব্যাংকের শুরু থেকেই
ব্যাপক আগ্রহ ছিল এবং আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস ছিল উন্মুক্ত।

২০১১ সালে সরকার বিশ্ব ব্যাংকের সাথে ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষর করে। এরপর হঠাৎ তাদের সিদ্ধান্তে পরিবর্তন হলো, কোন কারণ ছাড়াই একটার পর একটা শর্ত জুড়ে দিতে লাগলো। এক পর্যায়ে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অযুহাতে তৎকালীন যোগাযোগ মন্ত্রীকে মন্ত্রীপরিষদ থেকে বাদ দেওয়া হয় এবং যোগাযোগ সচিবকে জেলে পাঠানো হয়।সরকার তখন বিব্রতকর পরিস্থিতিতে,সবকিছু সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে। শেষ পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাংক সেতু নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অযুহাতে এ প্রকল্পে থেকে সরে যায়। সংগতভাবেই অন্যান্য দাতা সংস্থাও তাদের আর্থিক সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়।

সরকারের পক্ষ থেকে দুর্নীতির প্রমান চাওয়া হলে বিশ্ব ব্যাংক দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের মতো অপ্রমানযোগ্য দায়সারা কিছু কথা বলে।তৎকালীন অর্থমন্ত্রী জনাব এম এ মুহিত দৃঢ়তার সাথে দুর্নীতির বিষয়টি অস্বীকার করেন এবং বিশ্ব ব্যাংকের ভূমিকার সমালোচনা করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যান্ত দৃঢ়তার পরিচয় দেন।তিনি কাল বিলম্ব না করে ২০১২ সালের ৯ জুলাই পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণের ঘোষণা দেন এবং সেতুর কার্যক্রম চলমান রাখার নির্দেশ দেন।

এ সময় তথাকথিত দেশি-বিদেশি বুদ্ধিজীবিরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের নানা রকম সমস্যার কথা তুলে সরকারের সমালোচনা করে পদ্মা সেতুর কাজ বন্ধ করার নানা রকম ফন্দি আঁটতে থাকে এবং নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব নয় এটাও দেশবাসীকে জানতে থাকে। পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের উপযুক্ত কোন প্রমান না পাওয়ায় কানাডার টরন্টোর এক আদালত এ সংক্রান্ত মামলা খারিজ করে দেয় এর মাধ্যমে বিশ্ব ব্যাংক যে অভিযোগ করেছিল বাংলাদেশ তা থেকে দায়মুক্তি পায়।

বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ মিথ্যা প্রমানীত হয়। পরবর্তিতে পদ্মা সেতু নির্মাণের আর্থিক প্রস্তাব আহবান করলে শুধুমাত্র চীনের চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেডের এর আওতাধীন চায়না মেজর ব্রীজ নামক কোম্পানি আর্থিক প্রস্তাব জমা দেয়। সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ২০১৪ সালের ১৭ জুন পদ্মা সেতু নির্মাণের আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর হয় এবং সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে চীনের চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানিকে পদ্মা সেতু নির্মাণের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে কাজ শুরু হয় ২০১৪ সালের ৭ ডিসেম্বর।

সেতুর জন্য মোট ৯১৮ হেক্টর জমিত অধিগ্রহণ করা হয়। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৬ নম্বর পিলারের পাইলিং এর মাধ্যমে পদ্মার মূল সেতুর কাজের নির্মাণ ও নদী শাসনের কাজ আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন। মূল সেতুর কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের অক্টোবরে এবং সেতুর চূড়ান্ত অর্থাৎ ৪১ তম স্প্যানটি বসানো শেষ হয় ১০ ডিসেম্বর ২০২০ সালের দুপুর ১২ টা ২ মিনিটে, আর এর মাধ্যমে আর একটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি।

সব অপপ্রচারকে মিথ্যা প্রমান করে দেশবাসীর সামনে সম্পূর্ণ সেতুটি দৃশ্যমান হয়।হয়।পুরো পদ্মা সেতু হলো মিরপুর রোড়ের সিটি কলেজ থেকে টেকনিক্যাল এর সমান লম্বা। পদ্মা সেতুর ভৌত কাজকে মূলত পাঁচটি প্যাকেজে ভাগ করা হয়েছে, এগুলো হলো মূল সেতু, নদী
শাসন,জাজিরা সংযোগকারী সড়ক, টোল প্লাজা,ও মাওয়া সংযোগকারী সড়ক এবং মাওয়া ও জাজিরা সার্ভিস এলাকা।

প্রকল্পে নিয়োজিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠান মনসেল- এইসিওএম ভৌত কাজের ঠিকাদার নিয়োগের প্রাক-যোগ্যতা,টেন্ডার ডকুমেন্টস প্রস্তুত,দরপত্র আহবানের পর দরপত্র মূল্যায়ন, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটিকে সার্বিক সহায়তা প্রদানসহ এ সংক্রান্ত সকল কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত ছিলো।কারিগরি কমিটির সভাপতি ছিলেন পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের পরিচালক।

এছাড়াও পদ্মা সেতুর নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন পর্যায়ে প্রকল্প কর্মকর্তা, নকশা পরামর্শক ও উন্নয়ন সহযোগীদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে ৫ জন দেশীয় এবং ৫ জন আন্তর্জাতিক মোট ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গঠন করা হয়েছিল। চীনের সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন নদী শাসনের কাজের জন্য এবং বাংলাদেশের আবদুল মোমেন লিমিটেডকে দুটি সংযোগ সড়ক ও অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া  হয়েছিলো।

পদ্মা সেতু হচ্ছে আমাদের দেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো চ্যলেঞ্জিং প্রকল্প।ভীষণ খরস্রোতা এই নদী। পদ্মায় প্রতি সেকেন্ডে ১ লাখ ৪০ হাজার ঘন মিটার পানি প্রবাহিত হয়।এর ২০ সেকেন্ডের পানি যদি ধরে রাখা যায় তাহলে রাজধানীর মানুষের একদিনের পানির চাহিদা পূরন করা সম্ভব। এই যে এত পানি প্রবাহিত হয় এটা বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ,আর প্রথম আমাজান।দুই স্তর বিশিষ্ট স্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজের উপরের স্তরে চার লেনের সড়ক এবং নিচের স্তরে রেলপথ।

প্রকল্পটি মুন্সিগঞ্জ, শরিয়তপুর ও মাদারীপুর জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। ব্রীজটিতে মোট ৪২ টি পিলারের উপর ৪১ টি স্প্যান বসানো হয়েছে।পদ্মার তলদেশের মাটির গঠন অন্য যেকোনো নদীর থেকে ভিন্ন। বর্ষা মৌসুমে যখন পদ্মায় অতিরিক্ত স্রোত থাকে তখন পদ্মার তলদেশে পলির মতো মাটি ধুয়ে চলে যায়। এটাকে স্কাওয়ার বলে।পদ্মা নদীর স্কাওয়ার হওয়ার রেকর্ড হলো সর্বোচ্চ ৬৫ মিটার প্রায়।অর্থাৎ ২১ তলা বিল্ডিংয়ের সামন মাটি ধুয়ে চলে যায়। যা পৃথিবীর অন্য কোন নদীর নেই।

মূল সেতুর কাজ শুরু হয়েছিল মাওয়া প্রান্তে ৬ নম্বর পিলার দিয়ে। ১২৪ মিটার দৈর্ঘ্যের ৬ টি খুঁটি দিয়ে তৈরি হচ্ছিল এক একটা পিলার। ৬ ও ৭ নম্বর পিলারে তিনটি করে মোট ছয়টি পাইলের বটম সেকশনের কাজ করা হয়। কিন্তু এসব পাইল বসাতে গিয়ে শুরু হয় ভয়াবহ জটিলতা, নদীর তলদেশে নরম মাটির স্তর পাওয়া যায়। ফলে এদুটো পাইলের কাজ বন্ধ রাখা হয়।সাময়িকভাবে মাওয়া প্রান্তে কাজ বন্ধ রেখে জাজিরা প্রান্তে কাজ শুরু হয়।পরে আরও ১২ টি পিলার বসানোর সময় নদীর তলদেশে নরম মাটির স্তর পাওয়া যায়।

মূল নকশা অনুযায়ী এই ১৪ টি পিলারের পাইল সংখ্যা ছিল ৮৪ টি।এ সমস্যা সমাধানের জন্য ব্রটিশ পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কাউই (COWI) ইউকে লিমিটেডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পদ্মা সেতুর প্রকৌশলী ও বিশেষজ্ঞরা নদীর তলদেশে কৃত্রিম প্রক্রিয়ায় মাটির বদলে নতুন মাটি তৈরি করে পিলার বসান। এই পদ্ধতিকে বলা হয় স্কিন গ্রাউটিং। এ পদ্ধতি ব্যবহারের নমুনা বিশ্বে তেমন একটা নেই। এ প্রক্রিয়ায় ওপর থেকে পাইপের মধ্য দিয়ে কেমিক্যাল নদীর তলদেশে পাঠিয়ে মাটির শক্তিমত্তা বৃদ্ধি করা হয়। তারপর পাইলের সাথে ছোট ছোট পাইপ ওয়েল্ডিং করে দেওয়া হয়। এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহার বাংলাদেশেও প্রথম।পদ্মা সেতুর নদীতে থাকা ৪০ টি পিলারের নীচের পাইল ইস্পাতের এবং ডাঙার দুটি পিলারের পাইল
কংক্রিটের।

এ সেতুতে ব্যবহরিত ফ্রিকশন পেন্ডুলাম বেয়ারিংয়ের সক্ষমতা ১০ হাজার টন।এ পর্যন্ত বিশ্বে এত বেশি সক্ষমতার বিয়ারিং ব্যবহার করা হয়নি। রিখটার স্কেলে ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে টিকে থাকবে সেতুটি, কোন ক্ষতি হবে না। এ সেতুতে মোট ১ লাখ ৪৬ হাজার মেট্রিক টন স্টিল ব্যবহার করা হয়েছে। পদ্মা সেতুতে ২৬৬ টি পাইল আছে। এ সেতুর প্রতিটি স্প্যানের দৈর্ঘ্য ১৫০ মিটার এবং সর্বোচ্চ ওজন ৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন। ৪১ টি স্প্যানের মোট ওজন ১ লাখ ১৬ হাজার ৩৮৮ মেট্রিক টন। এভাবে একটার পর একটা প্রযুক্তিগত চ্যলেঞ্জ মোকাবিলা করে নির্মাণ করা হয়েছে আমাদের স্বপ্নের পদ্মা সেতু।মূল সেতুর সাথে ১২ কিলোমিটার অ্যাপ্রোচ রোড় নির্মাণ করা হয়েছে।

জাজিরা প্রান্তের রাস্তা চর এলাকায় হওয়ায় এখানকার মাটি নরম,সহজেই ডেবে যায়।এজন্য বিশেষ মেশিনের সাহায্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। এ মেশিন জার্মানি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। জাজিরা এলাকার অ্যাপ্রোচ রোড়ে পাঁচটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। পদ্মা নদীর পানি থেকে প্রায় ১৮ মিটার সেতুর তলদেশ।নদীর পানি যতই বৃদ্ধি পাক এ সেতুর নিচে দিয়ে পাঁচ তলা উচ্চতার যে কোন জাহাজ নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারবে।

বিশ্বে শক্তিশালী সেতুগুলো সাধারণত সি আকৃতির হয়। কিন্তু নদীর কাঠামোগত অবস্থানের কারণে পদ্মা সেতুকে উপর থেকে দেখলে এস আকৃতির মনে হবে। পদ্মার লাইফ টাইম হবে শতবছর। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩.৩৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সাথে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী ১ শতাংশ সুদ হারে ৩৫ বছরে পরিশোধের শর্তে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে সেতু নির্মাণের জন্য। এ খরচের মধ্যে রয়েছে সেতুর অবকাঠামো নির্মাণ, নদী শাসন, সংযোগ সড়ক, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, বেতন- ভাতা ইত্যাদি।

পদ্মা সেতু রাজধানী ঢাকার সাথে দক্ষিণ- পশ্চিম অঞ্চলের সরাসরি সংযোগ সৃষ্টি করছে। এর
ফলে অপেক্ষাকৃত অনুন্নত এলাকায় সামাজিক, অর্থনৈতিক ও শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশের মোট আয়তনের শতকরা ২৯ ভাগ বা ৪৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার ১৯ জেলার ৩ কোটিরও বেশি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে উপকৃত হবে এ সেতুর মাধ্যমে ।সেতুটিতে গ্যাস,বৈদ্যুতিক লাইন এবং ফাইবার অপটিক কেবল সম্প্রসারণের ব্যবস্হা রয়েছে। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলের জিডিপি বৃদ্ধি পাবে ২.৩ শতাংশ হারে এবং ১.২৩ শতাংশ হারে মোট দেশিও জিডিপি বৃদ্ধি পাবে।

দক্ষিণ- পশ্চিম অঞ্চলের ২১ জেলার সাথে রাজধানী যোগাযোগে ২ থেকে ৪ ঘন্টা সময় কমে যাবে। দৈনিক গড়ে ৭ হাজার গাড়ি পাড়াপাড় হবে। সেতুটি ট্রান্স- এশিয়ান হাইওয়ে ও ট্রান্স- এশিয়ান রেলওয়ের সাথে যুক্ত হবে।সেতুর দুই পাশে গড়ে তোলা হবে অর্থনৈতিক অঞ্চল, হাইটেক পার্ক ও বেসরকারি শিল্প শহর।সেতুটি দক্ষিণ অঞ্চলের পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে এবং দারিদ্র্য নিরসনে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। সেতু নির্মাণে ক্ষতিগ্রস্ত প্রায় পনে এক লাখ মানুষকে নদীর দুই ধারে সাতটি রিসেটেল এরিয়ায় পুণবাসন করা হয়েছে।

এ ছাড়া সেতু নির্মাণের কাজে অনেক গাছ কাটা যায়। বন বিভাগ এ এলাকায় প্রায় এক
লাখের মতো গাছ লাগিয়েছে। বিশ্বের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা দিয়ে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বুয়েট এবং কোরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে কর্পোরেশন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটস সেতুর সার্বিক নির্মাণ কাজ মনিটরিং করেছে।

আগামী ২৫ জুন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের দিন নির্ধারণ করে
দিয়েছেন। তাই পদ্মার দুই পারের মানুষসহ সমগ্র দেশবাসী গভীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় আছে সেই মাহেন্দ্রক্ষণের জন্য। বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতা ও কঠোর নির্দেশনায় শত শত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে স্বচ্ছতার সাথে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। এ সেতুর অর্থনৈতিক গুরুত্ব সুদূরপ্রসারী। পদ্মা সেতু শুধু একটি সেতু নয়,এটা দেশবাসীর অহংকার, আত্মমর্যাদা, আত্মপরিচয়, আমাদের উন্নয়ন, সক্ষমতা ও যোগ্যতার প্রতিফলন।

বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর