উপবৃত্তির টাকার কথা বলে অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিতেন অপরাধ চক্র

ভুয়া খুদে বার্তা পাঠিয়ে শিক্ষা বোর্ডের নাম ও ফোন নম্বর ব্যবহার করে উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার কথা বলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিল কয়েকটি অপরাধ চক্র। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এমন একটি চক্রের প্রধান আশিকুর রহমানসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

আজ বুধবার (২৫ শে মে) রাজধানীর মালিবাগে সিআইডির প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলেনে বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, কয়েকটি প্রতারক চক্র খুদে বার্তা ও শিক্ষা বোর্ডের নামে ভুয়া নম্বর ব্যবহার করে উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার কথা বলে শিক্ষার্থীদের কাছে খুদে বার্তা পাঠিয়ে আসছিল। শিক্ষার্থী বা অভিভাবকেরা এদের ফাঁদে পড়ে প্রতারিত হচ্ছিল। এসব ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় প্রতারণা আইনে মামলা হয়েছে। এ নিয়ে গণামাধ্যমে খবরও বের হয়।

সম্মেলনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, সিআইডির একটি দল প্রতারণায় জড়িত চক্র শনাক্ত ও তাদের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে অনুসন্ধান করে আসছিল। তারা ভুক্তভোগী ও বিভিন্ন উৎস থেকে প্রতারক চক্র সম্পর্কে সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ করে। এসব তথ্য–উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কয়েকটি চক্রের খোঁজ পাওয়া যায়। একেকটি চক্রে তিন-চারজন সদস্য রয়েছেন। চক্রের প্রত্যেক সদস্যের কাজ ভিন্ন। আশিকুর রহমানের নেতৃত্বে এমন একটি চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। গ্রেপ্তারের পর তাঁরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তাঁরা সিআইডিকে বলেন, তিন বছর ধরে উপবৃত্তির নামে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠিয়ে তাঁরা প্রতারণা করে আসছিলেন।

জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তার তিনজন সিআইডির কাছে স্বীকার করেন, প্রথমে তাঁরা শিক্ষা বোর্ডের নামে টার্গেট করা মুঠোফোন নম্বরে খুদে বার্তা পাঠাতেন। এতে তাঁদের চক্রের কোনো সদস্যের মোবাইল ব্যাংকিং নম্বর দিয়ে টাকা পাঠাতে বলতেন।

সিআইডির কর্মকর্তা মুক্তা ধর বলেন, করোনার আগে শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা দেওয়া হলেও করোনার সময় তা বন্ধ ছিল। এই সুযোগ নিয়ে চক্রের সদস্যরা প্রতারণার মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। অথচ পঞ্চম, অষ্টম ও এসএসসি পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে মহাহিসাব নিরীক্ষকের (এজি) কার্যালয় থেকে বৃত্তির তালিকা করা হয়।

চক্রটির টাকা সরিয়ে নেওয়ার কথা জানাতে গিয়ে মুক্তা ধর বলেন, শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে বিকাশে টাকা পাঠানোর কথা বলে চক্রের এক সদস্য দোকানে অবস্থান নেন। তিনি কৌশলে গ্রাহকের বিকাশের লেনদেনের খাতার ছবি তুলে ইমো, মেসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপে চক্রের আরেক সদস্যের কাছে পাঠিয়ে দেন। তাঁর কাজ হলো বিকাশের পিন কোড সংগ্রহ করা।

তিনি টার্গেট ব্যক্তির সঙ্গে কথাবা‍র্তার মাধ্যমে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করে উপবৃত্তির টাকা পাঠানোর কথা বলে তাঁর কাছ থেকে পিন কোড নিয়ে নেন। এভাবে তাঁরা পিন কোড, ভেরিফিকেশন কোড ও পাসওয়ার্ড টার্গেট ব্যক্তির কাছ থেকে নিচ্ছিলেন। প্রতারণার মাধ্যমে তাঁরা বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়ে বিলাসী জীবন যাপন করছিলেন। মুক্তা ধর বলেন, গ্রেপ্তার তিনজনের বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক মামলা বিচারাধীন। গত সোমবার ভুক্তভোগী রুনা খাতুনের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার তিনজনের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলা হয়েছে।

বার্তাবাজার/এম.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর