৫ বছর পর ঢাবি সিনেটে শিক্ষক-প্রতিনিধি নির্বাচন আজ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিনেটের শিক্ষক-প্রতিনিধি নির্বাচন হচ্ছে আজ। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর মঙ্গলবার (২৪ মে) সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবনে এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যসংখ্যা ১০৫। এর মধ্যে শিক্ষক-প্রতিনিধির ৩৫টি পদ রয়েছে। তাঁদের মেয়াদ তিন বছর। অন্য সদস্যদের মধ্যে আছেন—উপাচার্য, দুই সহ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, সরকার মনোনীত পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তা, জাতীয় সংসদের স্পিকার মনোনীত পাঁচজন সংসদ সদস্য, আচার্য মনোনীত পাঁচজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সিন্ডিকেট মনোনীত গবেষণা সংস্থার পাঁচজন প্রতিনিধি, একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজগুলোর পাঁচজন অধ্যক্ষ, একাডেমিক কাউন্সিল মনোনীত অধিভুক্ত ও উপাদানকল্প কলেজগুলোর ১০ জন শিক্ষক, উচ্চমাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান, ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি এবং ডাকসু মনোনীত পাঁচজন শিক্ষার্থী-প্রতিনিধি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে সবশেষ শিক্ষক-প্রতিনিধি নির্বাচন হয়েছিল ২০১৭ সালের ২২ মে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দল ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে। নির্বাচনে নীল দলের ৩৩ জন আর সাদা দলের ২ জন জয়ী হন।

২৪ মে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনে অংশ নিতে নীল ও সাদা দল তাদের প্যানেল চূড়ান্ত করেছে। এই নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ। নীল ও সাদা দলের বাইরে আর কোনো প্যানেল নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না।

নীল দলের প্রার্থী যাঁরা
আওয়ামীপন্থী নীল দলের প্যানেল থেকে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে শিক্ষক-প্রতিনিধি হিসেবে লড়বেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আ ক ম জামাল উদ্দীন, টেলিভিশন, ফিল্ম অ্যান্ড ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক আবু জাফর মো. শফিউল আলম ভূঁইয়া, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক আবদুল বাছির, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইসতিয়াক মঈন সৈয়দ, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম মাহবুব হাসান, ক্লিনিক্যাল ফার্মেসি অ্যান্ড ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক এস এম আবদুর রহমান, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক কে এম সাইফুল ইসলাম খান, গণিত বিভাগের অধ্যাপক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জিনাত হুদা, আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক তৌহিদা রশিদ, অঙ্কন ও চিত্রায়ণ বিভাগের অধ্যাপক নিসার হোসেন, ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজ আহমেদ, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ফিরোজা ইয়াসমীন, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মিহির লাল সাহা, ইসলাম শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ আবদুর রশীদ এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহবুবুর রহমান।

নীল দলের প্যানেলে আরও আছেন অর্গানাইজেশন স্ট্র্যাটেজি অ্যান্ড লিডারশিপ বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মাদ আবদুল মঈন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ফিরোজ জামান, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান, ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক মো. আকরাম হোসেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুর রহিম, ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক আবদুস ছামাদ, ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মো. জিল্লুর রহমান, অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জিয়াউর রহমান, পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. নিজামুল হক ভূঁইয়া, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক মো. মাসুদুর রহমান, অণুজীববিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মিজানুর রহমান, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক মো. রফিকুল ইসলাম, ফলিত গণিত বিভাগের অধ্যাপক মো. শফিকুল ইসলাম, রোবটিকস অ্যান্ড মেকাট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক লাফিফা জামাল, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সিকদার মনোয়ার মুর্শেদ ওরফে সৌরভ সিকদার, আইন বিভাগের অধ্যাপক সীমা জামান এবং কম্পিউটারবিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু৷

সাদা দলের প্রার্থী যাঁরা

বিএনপিপন্থী সাদা দলের প্যানেল থেকে এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে শিক্ষক-প্রতিনিধি পদে প্রার্থীরা হলেন—রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আবদুস সালাম, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আল-আমিন, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আশেকুল আলম রানা, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ইয়ারুল কবীর, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এ এফ এম মোস্তাফিজুর রহমান, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক এ টি এম জাফরুল আযম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক এ বি এম শহিদুল ইসলাম, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এস এম আরিফ মাহমুদ, তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক এস এম মোস্তফা আল মামুন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, মৃৎশিল্প বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক দেবাশীষ পাল, পালি অ্যান্ড বুড্ডিস্ট স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ কুমার বড়ুয়া, আইন বিভাগের অধ্যাপক নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ এবং প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মামুন আহমেদ।

এই প্যানেল থেকে আরও আছেন—উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমোজাদ্দেদী আলফেছানী, ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান, দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ দাউদ খান, মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ মামুন চৌধুরী; মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. আখতার হোসেন খান, উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল করিম, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক মো. আবদুল মজিদ, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মো. আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া; মৃত্তিকা, পানি ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন খান, সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. নুরুল ইসলাম, ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. মহিউদ্দিন, পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান, ফার্মাসিউটিক্যাল কেমিস্ট্রি বিভাগের অধ্যাপক মো. শাহ এমরান, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মো. সিরাজুল ইসলাম, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর, গ্রাফিক ডিজাইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রেজা আসাদ আল হুদা অনুপম, শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ, মনোবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ তানভীর রহমান এবং ইসলাম শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক হাফিজ মুজতাবা রিজা আহমাদ।

নীল দলের দুই শিক্ষককে নিয়ে বিতর্ক

নীল দলের প্যানেলে শিক্ষক-প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া দুই শিক্ষককে নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। তাঁরা হলেন ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অধ্যাপক আকরাম হোসেন এবং ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ও লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

অধ্যাপক আকরাম হোসেনের বিরুদ্ধে গত ২৬ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সভায় এক ছাত্রী অভিযোগ করেছেন, তাঁর ‘কুপ্রস্তাবে’ রাজি না হওয়ায় স্নাতক-স্নাতকোত্তরে প্রথম হয়েও শিক্ষক হিসেবে তিনি নিয়োগ পাননি। এমন অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার পর দুজন প্রভাষক নিয়োগে ওই বিভাগের নিয়োগ বোর্ডের করা সুপারিশ স্থগিত করে সিন্ডিকেট। একই সঙ্গে অভিযোগটি খতিয়ে দেখতে বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে পাঠানো হয়েছে। তবে আকরাম হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, অভিযোগটি পুরোপুরি মিথ্যা।

অন্যদিকে মোহাম্মদ মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড রিসার্চের (নিটার) নারী সহকর্মীদের হেনস্তা ও যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের নভেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের কাছে তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হয়রানিসহ নানা অনিয়মের ফিরিস্তি তুলে ধরে নিটারের ৩৭ জন শিক্ষক লিখিত অভিযোগ দেন। এই অভিযোগের এখনো কোনো কিনারা হয়নি।

অভিযুক্ত দুই শিক্ষকের নীল দলের মনোনয়ন পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ নীল দলেরই জ্যেষ্ঠ শিক্ষকেরা। তবে দলের আহ্বায়ক আবদুস ছামাদ বলেন, নীল দলের সাধারণ সভার সিদ্ধান্তেই ওই দুই শিক্ষক প্রার্থী হয়েছেন।

আবদুস ছামাদের ভাষ্য, একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নীল দল প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে থাকে। কারও একক সিদ্ধান্তে নয়, নীল দলের সাধারণ সভায় আলোচনা করে প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া হয়। সাধারণ সভার সিদ্ধান্তেই তাঁরা (আকরাম ও মিজানুর) প্রার্থী হয়েছেন। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না।

বার্তাবাজার/জে আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর