সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এলে রোগীর সাথে মনও ভালো হয়ে যায়!

আমাদের দেশে সাধারণভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কিংবা সরকারি হাসপাতাল বলতে আমাদের দৃশ্যপটে ভেসে ওঠে একটি নেতিবাচক ভাবনা। পরিবেশ এবং পরিষেবার নিরিখে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার এক করুণ দশা আমাদের ভাবনায় পরিলক্ষিত হয়।

নোংরা পরিবেশে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে, হাসপাতালের অন্দরমহল নোংরা, অপরিচ্ছন্ন, পূতিগন্ধময় তা হাসপাতালে ঢুকলেই দেখতে পাওয়া যায়। পচা, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হাসপাতালের রোগীরা। বেশির ভাগ ওয়ার্ডের আশপাশে নানা ধরনের বর্জ্য প্রতিনিয়তই ফেলে রাখা হয়। ক্লিনার-সুইপাররা কাজ না করে আড্ডা আর গল্প করে সময় পার করে হাসপাতাল ত্যাগ রেক।

রোগী, নার্স ও ডাক্তারদের বিছানাপত্র এবং অ্যাপ্রোনসহ ব্যবহৃত কাপড়চোপড় নোংরা, দূষিত ও পচা পানিতে ধোয়া হয়। রোগীর মলমূত্র, পুঁজ আর রক্তমাখা এসব কাপড়চোপড়, চাদর, বালিশের কাভার কোনোমতে ধুয়ে শুকানোও হয় নোংরা পরিবেশে। ভালোভাবে পরিষ্কার না করায় জীবাণুসহ নোংরা অবস্থায় চাদর, কম্বল, বালিশের কভার ইত্যাদি রোগীদের ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয় ইত্যাদি ইত্যাদি।

কিন্তু যদি এমন একটি পরিবেশ হয়, যেখানে প্রকৃতির কোলে নান্দনিক এক টুকরো বর্ণিল গালিচার মতো নির্ভার হয়ে আছে একটি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স! যেখানে কৃষ্ণচূড়ার সবুজ পাতার বেষ্টনীর মাঝে আগুন রাঙা ফুলের পাশে বসে কোকিল ডাকে, নাম না জানা হাজারো পাখির সম্মিলিত কলতান যদি আপনাকে স্বাগত জানায় কেমন অনুভব করবেন? কিংবা নাগাচুয়া, কেশিও জাপানিকা, চেরি, পলাশ, জাকারান্ডা, বকুল, মালবেরি, জারুল সহ অসংখ্য দেশি ও বিদেশি ফল ও ফুলের চারায় বেষ্টিত স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স! এমন একটি সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে এসে আপনার মানষিক অবস্থা কেমন হবে? নিশ্চয়ই অর্ধেক রোগ ভালো হয়ে যাবে আপনার!

ঢাকা জেলার সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে ঠিক এরকম পরিবেশে পরিষেবা নিতে পারবেন যে কেউ। প্রকৃতির নিবিড় কোলে অবস্থিত হাসপাতালটির পরিচ্ছন্ন পরিবেশে এসে আপনাতেই মন ভালো হয়ে যাবে। সরেজমিন সাভারের এই সরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সেবা নিতে আসা বিভিন্ন মানুষের সাথে কথা বলে তাদের এই ভালো লাগার বিষয়গুলো সম্পর্কে জানা যায়।

ভাকুর্তা ইউনিয়ন থেকে নিজের মামাকে নিয়ে এসেছেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সোহেল আহমেদ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবেশের বিষয়ে তিনি জানান, অত্যন্ত মনোরম পরিবেশ, ঢুকতেই কেমন এক সবুজের ধাক্কা লাগে। মন ভালো হয়ে যায়। একটি এনজিও তে চাকুরি করেন রাহেলা বেগম। নিজের ছেলেকে নিয়ে এসেছেন সেবা নিতে।

তিনি জানান, অন্যান্য সরকারি হাসপাতালে গেলে যেমন অপরিচ্ছন্ন এবং দুর্গন্ধময় পরিবেশে সেবা নিতে হয়, সাভারে এর ভিন্ন রুপ। এখানে খুব সুন্দর, নিরিবিলি ও মনোরম পরিবেশে সবাই সেবা গ্রহন করতে পারছে। সাভারের সরকারি এই হাসপাতালটির বর্তমান এই শোভাবর্ধক দৃশ্যপটের পেছনের মানুষটি হলেন সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ সায়েমুল হুদা। কথা হয় তাঁর সাথে।

বার্তা বাজারকে তিনি জানান, মানুষ যখন হাসপাতালে সেবা নিতে আসে, আমরা সর্বদা চেষ্টা করে থাকি তাদের সাথে হাসিমুখে কথা বলার। প্রকৃতির সাথে মনের যে একটা মিল, সেটা হাসপাতালের আঙ্গিনায় ফুটিয়ে তোলার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি। সেজন্য সমগ্র হাসপাতালকে প্রকৃতির কোলে এক টুকরো বর্ণিল গালিচার মতো দৃশ্যমান করার প্রচেষ্টা আমাদের।

ডা. হুদা বলেন, আমরা এই কমপ্লেক্সে কেশিও জাপানিকা, চেরি, পলাশ, জাকারান্ডা, বকুল, মালবেরিসহ বিভিন্ন ফল ও ফুলের গাছ রোপন করেছি। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় এসব পরিদর্শন করেছেন এবং তারা এর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এই যে মানুষের মনের সাথে প্রকৃতির একটা মিল এবং মন ভালো থাকলে শরীরও ভালো থাকে। তাই আমরা চাচ্ছি, একজন মানুষ যেন মানষিক ভাবে সুস্থ থাকে, তার মনটা ভালো থাকে এবং সে যেন আশ্বস্ত ‘ফিল’ করে যে, না এখানে ভালো স্বাস্থ্য সেবা পাওয়া সম্ভব। আমরা সাভারবাসী এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য এরকম একটা পরিবেশে স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।

সায়েমুল হুদা আরো জানান, আমাদের দেশে বর্তমানে দেশী ও বিদেশী বিভিন্ন ফল ও ফুলের চারা পাওয়া যায় যেগুলো হাসপাতালের জন্য খুবই শোভাবর্ধক হিসেবে কাজ করে, প্রচুর অক্সিজেন নির্গত করে, আমাদের নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহন করে এবং ‘অর্ণামেন্ট’ বৃক্ষ হিসেবে আবার এগুলো হাসপাতাল ভবনের ছাদেরও কোনো ক্ষতি করে না।

মামুন/বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর