ফেসবুকে প্রেম করে বিয়ে, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে বিদেশে পাচারের চেষ্টা!

ফেসবুকে পরিচয়ের পর প্রেম করে বিয়ে। এর পর প্রেমিকই পাচারকারীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন মেয়েটিকে। পরে সেই প্রেমিক তাকে বিয়ে করলেও অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ফের পাচারের চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে লালমনিরহাটের পাটগ্রাম থানা পুলিশ। রোববার (২২ মে) দুপুরে এঘটনায় তিনজনকে আটকের বিষয়ে নিশ্চিত করেন পাটগ্রাম থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক।

আটক তিনজন হলেন- পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম ইউনিয়নের সরকারপাড়ার মৃত ওমর আলীর ছেলে আশরাফুল ইসলাম ভুটুয়া (৩৫), একই এলাকার মুন্সিপাড়া গ্রামের মৃত ফজলুল হকের ছেলে মোকছেদুল হক (৩২) ও পাটগ্রাম পৌরসভার রসুলগঞ্জ জুম্মাপাড়ার শফিক হোসেনের স্ত্রী চম্পা বেগম (৩৫)।

এ অবস্থায় পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, টিকটক ভিডিও তৈরি করার সুবাদে হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বেতাপুর গ্রামের কিবরিয়ার ছেলে সোহেল মিয়ার সঙ্গে পাবনা সাঁথিয়া উপজেলার এক তরুণীর ফেসবুকে পরিচয় হয়। তিন বছর আগে পরিচয় থেকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তাদের। এক পর্যায়ে মেয়েটিকে নিয়ে সাতক্ষীরার সীমান্ত পথে অবৈধভাবে পার্শ্ববর্তী দেশে ভারতে পাড়ি জমান সোহেল। সেখানে কলকাতা শহরে তার প্রেমিকাকে পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করেন প্রেমিক সোহেল। সেখানে আট/নয় মাস অবস্থানের পর একই সীমান্ত দিয়ে কৌশলে পালিয়ে আসেন মেয়েটি।

প্রেমিক সোহেলও কিছু দিন পর পার্শ্ববর্তী দেশে ভারত থেকে সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে দেশে ফেরেন। এরপর চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি হবিগঞ্জ আদালতে সোহেল তার প্রেমিকাকে বিয়ে করেন। কিছু দিন স্ত্রীকে নিয়ে হবিগঞ্জে নিজ বাড়িতে অবস্থান করেন সোহেল। এরই মধ্যে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন মেয়েটি।

আবার স্ত্রীকে ভারতে পাচার করতে পাচারকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে চলতি বছরের ১৩ মে কৌশলে পাটগ্রামের দহগ্রামে পাঠান সোহেল। দহগ্রাম থেকে ভারতে পাঠানোর সময় পাচারকারীদের একজন মোকছেদুল ইসলাম ওই নারীকে ধর্ষণ করেন। ভারতে পাচারের পর ওই নারী বুঝতে পারেন, স্বামী তাকে আবার পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করেছেন। পরে এ পথে ১৫ মে পুনরায় ফিরে আসেন তিনি। ফেরার পথেও অপর পাচারকারী আশরাফুল ইসলামের কাছে ধর্ষণের শিকার হন তিনি। ধর্ষণ করেও তাকে ছেড়ে দেয়নি পাচারকারী চক্রটি। টাকার জন্য ওই নারীকে আটকে রাখে।

অবশেষে সেখান থেকে কৌশলে পালিয়ে গত ২১ মে সকালে পাটগ্রাম থানায় গিয়ে ঘটনার লোমহর্ষক বর্ননা দেন নির্যাতিত ওই নারী। থানার ওসি ওমর ফারুক নির্যাতিত নারীর অভিযোগ আমলে নিয়ে রাতেই অভিযান চালিয়ে পাচার ও ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত এক নারীসহ তিনজনকে আটক করে। এ ঘটনায় নির্যাতিত ওই নারী বাদী হয়ে ধর্ষণ ও মানবপাচার নিরোধ আইনে স্বামী সোহেলকে প্রধান করে পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামাদের বিরুদ্ধে পাটগ্রাম থানায় মামলা দায়ের করেন।

পুলিশ ওই নির্যাতিত নারীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রোববার (২২ মে) দুপুরে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে। তবে মূলহোতা সোহেল মিয়া এবং এজাহারনামীয় দহগ্রামের একজন পাচারকারী পলাতক রয়েছেন। তাদের গ্রেফতার করতে অভিযান চলছে বলেও জানান ওসি।

বার্তাবাজার/এম.এম 

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর