সুস্থ আছেন রওশন, দেশে ফিরে সক্রিয় হবেন রাজনীতিতে

ছয় মাসের বেশি সময় ধরে ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ। বর্তমানে শারীরিকভাবে অনেকটা সুস্থ এ রাজনীতিবিদ। তবে, চিকিৎসকের অনুমতি না থাকায় দেশে ফিরতে আরও কিছুটা সময় লাগছে। দেশে ফিরেই পুরোদমে রাজনীতিতে সক্রিয় হবেন তিনি।

রওশন এরশাদের সঙ্গে ব্যাংককে অবস্থান করছেন ছেলে ও জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাহগীর আল মাহী সাদ এরশাদ। মায়ের চিকিৎসার সার্বিক দেখভাল করছেন তিনি। মায়ের চিকিৎসা ও রাজনীতি নিয়ে কথা বলেছেন সাদ এরশাদ।

তিনি বলেন, গত ৫ মে দেশ থেকে ব্যাংককে আসার ছয় মাস পূর্ণ হয়েছে। আম্মার অবস্থা এখন ভালো। খাওয়া-দাওয়া, হাঁটা-চলা সবকিছু এখন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় হচ্ছে। তবে, পায়ের সমস্যা ও কিছুটা শারীরিক দুর্বলতা আছে। পরিপূর্ণ সুস্থ হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। চিকিৎসকরা অনুমতি দিলেই দেশে ফিরে আসব।

দেশে ফিরে তিনি তো রাজনীতিতে যুক্ত হবেন। এতে কোনো সমস্যা নেই। ব্যাংককে চিকিৎসাধীন থাকলেও দেশের সার্বিক অবস্থা ও রাজনীতির সব খবর রাখছেন তিনি
রাহগীর আল মাহী সাদ এরশাদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, জাতীয় পার্টি নির্বাচনকে (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন) সামনে রেখে মায়ের রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার বিষয়ে ছেলে সাদ এরশাদ বলেন, ‘দেশে ফিরে তিনি তো রাজনীতিতে যুক্ত হবেন। এতে কোনো সমস্যা নেই। ব্যাংককে চিকিৎসাধীন থাকলেও দেশের সার্বিক অবস্থা ও রাজনীতির সব খবর রাখছেন তিনি।’

এদিকে রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠরা বলছেন, বিদেশে থাকলেও দেশের রাজনীতির সব খবর রাখছেন তিনি। বিশেষ করে, আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টির রাজনীতি ও দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কেও অবহিত রওশন এরশাদ। সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠদের যোগাযোগ রয়েছে। তাদের মাধ্যমে জাতীয় পার্টির বর্তমান নেতৃত্ব নিয়ে সরকারের মনোভাব কী, সেই খোঁজও রাখছেন তিনি। তবে, বর্তমানে রওশন এরশাদ নিজের রাজনীতি নয়, ছেলের ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়ে চিন্তিত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাদ এরশাদের বর্তমান সংসদীয় আসন রংপুর- ৩ থেকে আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন চাচা জি এম কাদের। তাই সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে বা জি এম কাদেরকে চাপে রেখে ছেলের রাজনীতি ঠিক করাই হবে রওশন এরশাদের একমাত্র লক্ষ্য।

বিদেশে থাকলেও দেশের রাজনীতির সব খবর রাখছেন তিনি। বিশেষ করে, আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টির রাজনীতি ও দলের চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদেরের রাজনৈতিক অবস্থান সম্পর্কেও অবহিত রওশন এরশাদ।

রওশন এরশাদের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্রের দাবি, জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সাম্প্রতিক সময়ের কিছু বক্তব্যকে ঘিরে তার ওপর সরকারের শীর্ষ মহল বেশ নাখোশ। এছাড়া আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অবস্থান কী হবে, তা নিয়ে সরকারের চেয়ে পাশের একটি দেশের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়ছেন তিনি। এ কারণে দ্বাদশ নির্বাচনে জাপাকে নিজেদের অনুকূলে রাখতে সরকার জি এম কাদেরের চেয়ে রওশন এরশাদের ওপর বেশি আস্থা রাখছে। সরকার ও জাপায় নিজের ঘনিষ্ঠদের চাওয়াকে প্রাধান্য দিয়ে গোলাম মসীহকে নিজের রাজনৈতিক সচিব হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন রওশন এরশাদ।

এদিকে, সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো বলে দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জি এম) কাদের। তিনি বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক খারাপ নয়, ভালো। তারা সরকারি দল আর আমরা বিরোধী দল। তারা আমাদের প্রতিপক্ষ, কিন্তু শত্রু নয়। আমরা সরকারের ভালো কাজের প্রশংসা করছি, খারাপ কাজের গঠনমূলক সমালোচনা করছি।’

আমরা আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। এখন নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব এককভাবে নির্বাচন করব, নাকি সরকারের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে করব। জনগণের চাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে আগামী নির্বাচনের বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।

‘আমরা আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। এখন নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে এলে দলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব এককভাবে নির্বাচন করব, নাকি সরকারের সঙ্গে জোটবদ্ধভাবে করব। জনগণের চাওয়াকে গুরুত্ব দিয়ে আগামী নির্বাচনের বিষয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জি এম কাদেরের ঘনিষ্ঠ জাতীয় পার্টির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, সরকার নিজের সুবিধার্থে জি এম কাদেরের সঙ্গে যেমন যোগাযোগ রাখছে, তেমনি রওশন এরশাদ ও তার ঘনিষ্ঠদের সঙ্গেও সম্পর্ক ঠিক রাখছে। তবে, বর্তমানে জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদের চেয়ে বহু গুণ বেশি কর্তৃত্ব রয়েছে জি এম কাদেরের।

তিনি বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়ে জাতীয় পার্টিতে যারা রওশন এরশাদের অনুসারী ছিলেন, তারাও এখন জি এম কাদেরের ঘনিষ্ঠ। ফলে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে অনুকূলে নিতে হলে সরকারকে অবশ্যই বর্তমান চেয়ারম্যানের সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে। রওশন এরশাদের সঙ্গে সমঝোতা করলে হয়তো গুটিকয়েক ব্যক্তি বা বর্তমান সংসদ সদস্যদের কয়েকজনকে পেতে পারে সরকার।

বার্তাবাজার/জে আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর