দুই নদী উপচে গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজারের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি

টানা গত কয়েকদিনের বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুরমা ও কুশিয়ারা নদী উপচে সিলেটের গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে জীবন যাপন করছেন। গতকাল রাতে বিয়ানীবাজার উপজেলার পাশ্ববর্তী জকিগঞ্জ উপজেলার অমলশিদ এলাকায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর উৎসস্থলের একটি ডাইক (নদী প্রতিরক্ষা বাঁধ) ভেঙে প্রবল বেগে পানি ঢুকে জকিগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

যার প্রভাব পড়ছে গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার উপজেলায়। পানিবন্দি মানুষ বাড়ি-ঘর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। অনেক মানুষ চলে যাওয়ার ব্যবস্থা করছেন। হাজারো ঘর-বাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে৷ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। সড়কে পানি উঠে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। সংকট দেখা দিয়েছে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির। গবাদি পশু খাদ্যের অভাবে মারা যাচ্ছে। পানিতে ভেসে গেছে অনেক বড় বড় মাছের খামার। বন্ধ রয়েছে দোকানপাট। ফসলি জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। পানিতে তলিয়ে গেছে বোরো ধান। সব মিলিয়ে দুই উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ মানবেতর জীবন যাপন করছেন।

জানা যায়, গোলাপগঞ্জ উপজেলার প্রায় ১১ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার হাজারো পরিবার পানিবন্দি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলার বাঘা ইউনিয়ন। সুরমা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় বাঘা ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের শতশত পরিবার পানিবন্দি। পানিবন্দিদের জন্য বাঘা ইউনিয়নে ৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলা হয়েছে। এসব আশ্রয়কেন্দ্র মানুষ উঠছেন। পৌর সভার কয়েকটি গ্রাম সুরমা নদীর তীরবর্তী হওয়ায় এসব গ্রামেও শতাধিক পরিবার পানিবন্দি। কুশিয়ারা নদীর তীরবর্তী বুধবারী বাজার, ভাদেশ্বর, শরীফগঞ্জ, বাদেপাশা, আমুড়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের শতশত পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছেন। কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে অতিক্রম করছে। যত সময় যাচ্ছে পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

সরকারি ভাবে পুরো উপজেলায় ১২ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দ এসেছে। ইতিমধ্যে অনেক এলাকায় সরকারি বরাদ্দ পৌঁছে দেয়া হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি এসব অসহায় মানুষের পাশে উপজেলার বিভিন্ন বিত্তবান, প্রবাসী, সামাজিক সংগঠন এগিয়ে আসছে। প্রতিদিন বন্যার্থদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

এদিকে বিয়ানীবাজার উপজেলায়ও যত সময় যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। কুশিয়ারা ও সুরমা নদীর পানি বেড়ে উপজেলার আলীনগর, চারখাই, শেওলা ও দুবাগ ইউনিয়নের শতশত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুই নদীর তীরবর্তী থাকা বাকি ইউনিয়ন গুলোরও শতশত মানুষের ঘর-বাড়ি তলিয়ে গেছে।

উপজেলার ৪ টি ইউনিয়ন আলীনগর, চারখাই, শেওলা ও দুবাগ ইউনিয়ন। এসকল ইউনিয়নে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় বিদুৎ সরবরাহ বন্ধ রেখেছে পল্লিবিদুৎ কর্তপক্ষ। টানা বৃষ্টিতে সিলেট-বিয়ানীবাজার আঞ্চলিক মহাসড়ক অনেকটাই পানিতে তলিয়ে গেছে। এদিকে বিদুৎ সেবা বিচ্ছিন্ন হওয়ায় বিদুৎ সেবা সহ বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকটে পড়েছেন ৪ ইউনিয়নের কয়েক হাজার মানুষ।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পানিবন্দি মানুষের জন্য ২৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলা হয়েছে। সরকারি ভাবে ৬ মেট্রিক টন চাল ও শুকনো খাবার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সরকারের পাশাপাশি এসব অসহায় মানুষের পাশে উপজেলার বিভিন্ন বিত্তবান, প্রবাসী, সামাজিক সংগঠন এগিয়ে আসছে। প্রতিদিন বন্যার্থদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে।

ফাহিম/বার্তাবাজার/এম.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর