বগুড়ায় সৎ বাবার হাতেই খুন হয় শিশু সামিউল

বগুড়ার শাজাহানপুরে সৎ বাবার হাতেই খুন হয় ১০ বছর বয়সী মাদ্রাসা ছাত্র সামিউল ইসলাম সাব্বির। স্ত্রীর দেওয়া তালাকের প্রতিশোধ নিতেই শিশু সামিউলের গলায় সুতার রশি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করা হয়৷ নিহত সামিউল সাজাপুর পূর্বপাড়া তালিমুল কুরআন হাফেজিয়া মাদ্রাসার ছাত্র।

বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী রোববার দুপুর ১২টার দিকে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। এই ঘটনায় পুলিশ সৎ বাবা ফজলুল হক ও তার সহযোগী অনিতা রানী (৩৫) গ্রেফতার করেছে। গত মঙ্গলবার (১৭ মে) দুপুর ২ টার দিকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। ফজলুল খরনা ইউনিয়নের কমলাচাপড় গ্রামে এবং অনিতা চেলোগ্রামের বাসিন্দা। তারা একসাথে দিনমজুরের কাজ করতেন।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার দাবি করেন, সোমবার (১৬ মে) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ফজলুল শিশু সামিউলের মাদ্রাসার যায়। ফজলুল মাঝে মধ্যেই মাদ্রাসায় এসে সামিউলের খোঁজ খবর নিতেন। তিনি মাদ্রাসা শিক্ষক আবু মুছাকে জানান সামিউলকে নিয়ে যাবেন। তবে মাদ্রাসার নিয়ম অনুযায়ী মায়ের অনুমতি ছাড়া ছাত্রদের কারো কাছে ছেড়ে দেওয়া নিষেধ থাকায় মাদ্রাসার শিক্ষক অসম্মতি জানান।

ফজলুল তার পরিকল্পনা অনুযায়ী অনিতা রানীকে শিশু সামিউলের মা পরিচয় দিয়ে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলিয়ে দেয়। এরপর সামিউলকে ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে ফজলুল শাহাজাহানপুরের মানিকদিপা লাউ ক্ষেতে নিয়ে যায় ও সেখানে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

পুলিশ সুপার আরও জানায়, এরআগে সামিউলের মা সালেহা বেগম তারা বাবা জাহাঙ্গীরকে তালাক দিয়ে শাহাজাহানপুরের খরনা ইউনিয়নের ফজলুল হককে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকেই সৎ বাবা ফজলুল সামিউলকে মেনে নিতে পারছিলেন না৷ তিনি প্রায়ই শিশুটিকে সালেহার মা ও বোনের কাছে রেখে আসার জন্য শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন। এমনকি ফজলুল হক রাতের বেলাই সামিউলকে ঘরের বাইরে রেখে দরজা বন্ধ করে দিতেন এবং খাবার না দিয়ে তাকে অনাহারে রাখতেন।

ঈদে সামিউল তার মায়ের সাথে বেড়াতে যেতে চাইলে ফজলুল তাদের মারধর করে সালেহার বোনের বাড়ি পাঠিয়ে দেয়৷ সালেহা তার সন্তানের কষ্ট দেখে মে মাসের ১১ তারিখে ফজলুলকে তালাক দেয়৷ ঈদের পর ১৪ মে মাদ্রাসায় পুনরায় পাঠদান শুরু হলে সালেহা শিশু সামিউলকে সেখানে রেখে আসেন৷ তবে সৎ সন্তানের জন্য স্ত্রী তালাক দেওয়ায় ফজলুল সামিউলকে হত্যার পরিকল্পনা করে।

পুলিশ সুপার আরও জানান, ফজলুল একাই শিশু সামিউলকে হত্যা করেছে। এছাড়াও অনিতা ফজলুলকে সহযোগিতা করায় তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরআগে (১৭ মে) মঙ্গলবার সকালে শাজাহানপুর উপজেলার মানিকদ্বিপা উত্তরপাড়া বটতলা গ্রামের একটি সবজির ক্ষেত থেকে সামিউলের লাশ উদ্ধার করা হয়।

বারী/বার্তাবাজার/এম.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর