সোনারগাঁও আ.লীগের আহ্বায়ক কমিটি থেকে বাবুর পদত্যাগ ঘোষনা

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে আসন্ন মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না পেয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করে নিজেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন মোগরাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের টানা দ্বিতীয়বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু।

সোমবার (১৬ মে) দুপর ১২.০০টায় উপজেলার মোগরাপাড়া চৌরাস্তাস্থ স্কাইলার্ক চাইনিজ রেস্টুরেন্টে সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে মোগরাপাড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আরিফ মাসুদ বাবু স্বেচ্ছায় এ ঘোষণা দেন।

সাংবাদিক সম্মেলনে চেয়ারম্যান আরিফ মাসুদ বাবু লিখিত বক্তব্যে বলেন, আমার পিতা সোনারগাঁও থানা আওয়ামী লীগ এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক এবং ১৯৭০ এর নির্বাচনে নৌকা মার্কা নিয়ে নির্বাচিত (এম.সি.এ) বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম এড. সাজেদ আলী মিয়া। আমার ভাই নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ এর সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সাবেক সভাপতি, ১৯৭৩ সনে মহান জাতীয় সংসদের সর্বকনিষ্ট এম.পি এবং ১৯৮৬ স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের দুঃশাস্বনের আমলে ও বিপুল ভোটে নির্বাচিত এম.পি বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোবারক হোসেন।

পরবর্তীতে ১৯৮৯ সনে সোনারগাঁও আওয়ামী লীগ এর দুঃসময়ে দলের হাল ধরেন। সোনারগাঁও আওয়ামী লীগ এর সভাপতি হন বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম আবুল হাসনাত। ২০০১ সনে বি.এন.পি জামায়াত জোট সরকারের সময় মামলা হামলায় সোনারগাঁও আওয়ামী লীগ এর নেতা কর্মীরা যখন জোট সরকারের নির্যাতনের স্টীম রোলারের চাকায় পীষ্ট হয়ে দিশে হারা এরই মধ্যে হাসনাত সাহেব অসুস্থ হয়ে পরেন ঠিক সেই কঠিন সময়ের মধ্যে নিজের আদরের সন্তান কায়সার হাসনাতকে আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীদের পাশে দারানোর জন্য নির্দেশ দিলেন।

তিনি বলেন, আমাদের মাতৃতুল্য নেত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে দৃষ্টি আকর্ষন করে সারা বাংলাদেশে আন্দোলনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। সেই সমেয় আন্দোলন করতে যেয়ে পুলিশির নির্যাতনের স্বীকার হয়ে গ্রেফতার হন কায়সার হাসনাত আমার মাতৃতুল্য নেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তৎকালীন আওয়ামী লীগ এর আইন বিষয়ক সম্পাদক মরহুম এড. আব্দুল মতিন খসরু সাহেব পর পর তিন দিন নারায়ণগঞ্জে এসে কায়সার হাসনাতকে জামিনে মুক্তি করান পরবর্তীতে যার পুরুস্কার হিসাবে আমাদের প্রানের নেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে কায়সার হাসনাতের হাতে নৌকা তুলে দেন। ফলশ্রুতিতে সোনারগাঁওয়ের ৩ বারের এম.পি এবং মন্ত্রী বি.এন.পির রেজাউল করিম সাহেবকে ৮৫০০০ ভোটের ব্যাবধানে পরাজিত করে চমক সৃষ্টি করেন এবং সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন।

কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ২০১৪ তে এসে জাতীয় স্বার্থে জোটের কারণে কায়সায় হাসনাতকে মনোনয়ন না দিয়ে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিলেন। আমরাও নেত্রীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে জোটকে স্বাগত জানালাম। পরবর্তীতে নেত্রী আমাদের মূল্যায়ন করে আমার আরেক ভাই, বীর মুক্তিযোদ্ধা মরহুম মোশারফ হোসেনকে উপজেলা নির্বাচনে নৌকা প্রতীক দেন এবং চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে সফল ভাবে দায়িত্ব পালন করা কালিন সময়ে গত জুলাই ২০২১ সালে ইন্তেকাল করেন। পরবর্তী উপ নির্বাচনে আমরা ভেবে ছিলাম আমাদের পরিবারেই নৌকা প্রতিক দিবেন, কিন্তু সে সময় নৌকা আমাদের না দিয়ে একজন সিনিয়র নেতাকে দিলেন আমরা মেনে নিয়ে সতস্ফুর্ত ভাবে ওনাকে সমর্থন দিয়ে চেয়ারম্যান বানিয়ে দিলাম। সর্বশেষ মোগরাপাড়া ইউনিয়ন যেটা আমাদের ৭০ বৎসরের ইতিহাস।

মোগরাপাড়া ইউনিয়ণ হলো সোনারগাঁও রাজনীতির রাজধানী, আওয়ামী রাজনীতির পূন্যভূমি যার ধারক বাহক হলো আমাদের এই পরিবার। অনেক প্রতিকুলতার মাঝেও যেমন পাকিস্তানী আমল, জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়ার জামাত বি.এন.পি জোটের অত্যাচার নির্যাতনের মধ্যেও আমাদের পরিবার থেকে চেয়ারম্যান পদবি কেউ কোনো দিন ছিনিয়ে নিতে পারে নাই। তারই ধারাবাহিকতায় বিগত ১০ বছর যাবৎ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগনের সেবা করে আসছিলাম। জনগনের সেবা করতে এসে আমি আমার বাবার নীতি এবং আদর্শকে অনুকরণ এবং অনুসরন করতে চেষ্টা করেছি।

প্রিয় সাংবাদিক ভাই ও বোনেরা আপনারা নিশ্চয়ই আমার বাবার সম্পর্কে অবগত আছেন। আমার বাবা সারা জীবন রাজনীতি করেছেন মানুষের জন্য, নিজের এবং পরিবারের জন্য কোন কিছু করেন নাই। ওনার একটাই লক্ষ ছিল সোনারগাঁওয়ের দরিদ্র জনগুষ্টিকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলে আদর্শ সোনারগাঁও বানানো। সেই সপ্ন নিয়েই গড়ে তোলে আজকের মোগরাপাড়া সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় এবং একমাত্র ডিগ্রী কলেজ তথা বর্তমানে সোনারগাঁও সরকারী কলেজ।

এই প্রতিষ্ঠান দুটি ধার করানোর জন্যই জীবনের সমস্ত অর্জন ব্যায় করে গেছেন। সে আলোকেই আমি চেষ্টা করছি এই ১১ বৎসর মোগরাপাড়া ইউনিয়ন এর গরিব দুঃখি মানুষের পাশে দাঁড়াতে, কখনো অনৈতিক কোন সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা ও করিনি, মানুষ যাতে আমার দ্বারা সামান্য কষ্ট না পায় সেই চেষ্টাই আমি করেছি। অনৈতিক ভাবে টাকা কামানোর চিন্তাও করিনি কোন দিন।

গেল দুই বছর এই ভয়বহ করোনা মাহামারীতে আমি এবং আমার পরিবার নেত্রীর নির্দেশে দিন রাত পরিশ্রম করে জীবনের মায় ত্যাগ করে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়াতে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি এত সচ্ছ থেকে রাজনীতি করে বিনিময়ে আজকে নৌকা থেকে বঞ্চিত হলাম। যে পরিবারে ৩ প্রজন্ম আওয়ামী লীগ মনোনীত এম.পি যা সারা বাংলাদেশে হাতে গুনলে এরকম ১০ টি পরিবার ও খুজে পাওয়া যাবে না আজ সেই পরিবারটিকে সামান্য একটি ইউনিয়ণ পরিষদে নৌকা থেকে বঞ্চিত হতে হল, এর চেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে? বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে যে পরটির উত্থান, বঙ্গবন্ধুর গড়া আওয়ামী লীগ এর স্বর্ণ যুগে সেই পরিবারটের এমন করুন পরিনতি, এমন অপমৃত্যু আমার কাছে মনে হয় আমিই ব্যায়।

আমি মনে হয় আমার দলকে কিছুই দিতে পারি নাই, আওয়ামী লীগ এর জন্য কিছুই করতে পারি নাই। আমার জন্য আমার পরিবারে ৭০ বছরের সাফল্য অর্জন ম্লান হতে চলেছে। তাই আমার নেত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে সোনারগাঁয়ের সকল নেতা কমির কাছে ক্ষমা চেয়ে সর্বপরি আমার পরিবারের পূর্বপুরুষ এবং বর্তমান প্রজন্মের সকল সদস্যের কাছে ক্ষমা চেয়ে সকল ব্যার্থতার দায় তার নিয়ে সোনারগাঁও উপজেলা আওয়ামী লীগ এর আহ্ববায়ক কমিটির সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ আমি মনে করি, আমার মতো অযোগ্য লোক দায়িত্বে থাকার কোন প্রয়োজন নাই। এই পদে অন্য লোক নিয়োগ দিলে দল এর কমিরা উপকৃত হবে। তবে আমি আমার পদ থেকে পদত্যাগ করলেও সারা জীবন যতজীবন বাঁচি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক এবং জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার একজন নগন্য কমি হয়ে দলের কাজ করে যান। আপনারা সবাই আমার জন্য দেয়া করবেন।

মিযানুর/বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর