বাংলাদেশ আজ বিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মাথা পিছু আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য ও বিদ্যুৎ যোগাযোগসহ সর্বক্ষেত্রে দ্রুত উন্নয়ন সাধিত হচ্ছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে তিনি বিশ্বব্যাপী ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ উপাধি পেয়েছেন। বিভিন্ন ইতিবাচক কাজের জন্য পেয়েছেন প্রচুর প্রশংসা ও উপাধি। শেখ হাসিনা এগিয়ে যাচ্ছেন, বাংলাদেশও এগিয়ে যাচ্ছে আগামীর পথে।
সোমবার (১৬ মে) থেকে ৪১ বছর আগে ৬ বছর নির্বাসিত থেকে বঙ্গবন্ধুবিহীন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় আলোর মশাল হাতে কান্ডারি হয়ে স্বদেশের মাটিতে এসেছিলেন জাতির পিতার জ্যেষ্ঠকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। সেদিনই বঙ্গবন্ধুবিহীন বাংলাদেশের পুনর্জন্ম হয়েছিল।
এখন জননেত্রী শেখ হাসিনা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী আছেন বলেই দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। চার দশক আগে যদি শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নৌকার বৈঠা না ধরতেন, বাংলাদেশের নেতৃত্বে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত না করতেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী না হতেন, তাহলে বাংলাদেশের আজকের এ উন্নতি, এ অগ্রগতি সুদূরপরাহত ছিল।
আওয়ামী লীগের গণমুখী রাজনীতি থাকতো না। দেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত হতো না। গণতন্ত্র আসতো না। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের বিচার হতো না। যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার অসম্পন্ন থাকতো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছেন। দেশকে বিশ্বের বুকে মর্যাদাবান করেছেন। শেখ হাসিনা রাজনীতিতে না আসলে স্বাধীনতার নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বাধীণতার সুর্বণ জয়ন্তী এবং জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করার সুযোগ পেত না। জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল না ধরলে আমাদের নেতা-কর্মীদের অস্তিত্বও বিপন্ন হতো। দেড় লাখ গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবার পাকা বাড়িসহ ঘর পেত না। আমাদের সৌভাগ্য আমরা শেখ হাসিনার মতো একজন যোগ্য, সৎ,সাহসী, কর্মঠ নেতা পেয়েছি। নেতৃত্ব পেয়েছি- শোকর আলহামদুলিল্লাহ।
জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই নেত্রী যিনি মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটও পাঠান আবার একেবারে সমাজের সবচেয়ে অবহেলিত হতদরিদ্র, অসহায়, বয়স্ক নারী-পুরুষ, বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, প্রতিবন্ধীদের মাসিক ভাতার ব্যবস্থাও করেন। তিনি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বাসযোগ্য দেশ করে দিয়ে যাওয়ার জন্য নিরলস সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। সারাদেশের মানুষকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষার জন্য, বন্যা, ঝড়, জলোচ্ছাস, হাওরের মানুষকে হাসিমুখে ফসল ঘরে তোলার জন্য স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ করছেন। উন্নত ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য তিনি ডেল্টাপ্ল্যান ২১০০ ঘোষণা করেছেন। তিনি শুধু বর্তমান নিয়েই ভাবেন না, ভবিষ্যও তাঁর ভাবনায় থাকে। অন্যরা ক্ষমতা আর বর্তমানকে নিয়ে ভাবে। এখানে জননেত্রী শেখ হাসিনা অন্যদের থেকে আলাদা।
জননেত্রীর শেখ হাসিনার হাত ধরে অশান্ত পাহাড়ে শান্তি ফিরেছে। ভারতের সঙ্গে গঙ্গা পানি চুক্তি হয়েছে, সিট মহল সমাধান হয়েছে, আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে বিশাল সুনীল অর্থনীতির আধার অর্জন করেছে সমুদ্র সীমা নির্ধারণের মাধ্যমে। জাতির পিতার কন্যার হাতধরে ছাত্র রাজনীতি ও জাতীয় রাজনীতির গুনগত পরিবর্তনও এসেছে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে, দিনটি ছিল রবিবার। সেদিন ঘণ্টায় ৬৫ মাইল বেগে কালবৈশাখী ঝড় হচ্ছিল। বৈরী আবহাওয়াতেও মানুষের গতি ঠেকানো যায়নি। জাতির পিতার কন্যাকে একনজর দেখার জন্য কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শেরেবাংলা নগর পর্যন্ত জনসমুদ্রে পরিণত হয়।
১৯৮১ সালের এই দিনে বাংলাদেশের লাখো মানুষের সঙ্গে স্কুল পড়ুয়া একজন ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবে ঢাকার কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য আমারও হয়েছিল।
বয়সের কারণে বঙ্গবন্ধুকে দেখার সৌভাগ্য হয়নি, কিন্তু সেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যাকে দেখেছিলাম লাখো জনতার মধ্যে। সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা লাখো জনতার সংবর্ধনার জবাবে বলেছিলেন, ‘আমি সবকিছু হারিয়ে আপনাদের মাঝে এসেছি। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তাঁর আদর্শ বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে জাতির পিতার হত্যার বিচার করতে আমি জীবন উৎসর্গ করতে চাই। বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার এ জীবন দান করতে চাই। আমার আর হারাবার কিছুই নেই। পিতা-মাতা, ভাই সকলকে হারিয়ে আমি আপনাদের কাছে এসেছি, আমি আপনাদের মাঝেই তাদের ফিরে পেতে চাই। আপনাদের নিয়েই আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশিত পথে তা বাস্তবায়ন করে বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে চাই, বাঙালী জাতির আর্থ-সামাজিক তথা সার্বিক মুক্তি ছিনিয়ে আনতে চাই।’
শেখ হাসিনা সেদিন জনগণকে দেয়া সেই অঙ্গীকার পূরণে ৪১ বছর ধরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে জনগণের ভাগ্যবদলে নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর জন্য বাংলাদেশ আজ ধন্য। তিনি ফিরে না এলে ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে কে সরকার গঠন করত- আমাদের জানা নেই। তিনি ফিরে এসে হাল ধরেছিলেন গণতন্ত্রের। ফলে গত ১৩ বছর দেশের উন্নয়ন আকাশ ছুঁয়েছে। এ দেশ প্রকৃতপক্ষে এগিয়েছে তাঁর অসীম সাহসিকতা ও যোগ্য নেতৃত্বের কারণে। বর্তমান প্রজন্মের কাছে শেখ হাসিনা এক সাহসী রাজনীতিকের নাম; যাঁর সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় ভবিষ্যতের বাংলাদেশ উন্নয়নের ধারায় এগিয়ে চলেছে।
আমার সৌভাগ্য ১৯৮৪ সাল থেকে নেত্রীকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক, জাকসুর ভিপি, ছাত্রলীগের সভাপতি, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নেত্রীর কাছে থেকে কাজ করেছি। তাঁকে দেখা ও বোঝার সৌভাগ্য হয়েছে। খোলা বইয়ের মতো তার রাজনীতি ও জীবন মানুষের সামনে উন্মুক্ত করেই তিনি পথ হাঁটেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাজের কোনো ক্লান্তি নেই। অনীহা নেই। আছে সম্মুখে এগিয়ে যাওয়ার গতি। তার সারল্যতা শিশুর মতো। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল তার হাতের কাছেই শোভা পায়। অবসরে বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকতে তাকে দেখেছি। তিনি নিজে যেমন পড়াশোনায় মগ্ন থাকেন, তেমন আমাদেরও পড়াশোনার তাগিদ দেন। সন্তানদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করলেও ক্ষমতার কাছে ভিড়তে দেন না। আজকে জননেত্রী শেখ হাসিনা হচ্ছেন স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব, পতাকা ও মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র রক্ষক। নিজে রাজনীতি করার পাশাপাশি তার দুই সন্তানকেও সুশিক্ষিত করে তুলেছেন।
বিশ্ববরেণ্য নেতারা শেখ হাসিনা সম্পর্কে বলেছেন, ‘মেধা, যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, সততা আর দক্ষতায় শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ায়ই নয়, সমগ্র বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারেন।’ ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটিও তিনি জনগণকে দিয়েছেন। লোভ, মোহের ঊর্ধ্বের পথচলা বিশ্ববরেণ্য নেত্রী আমাদের জননেত্রী শেখ হাসিনা যতদিন বেঁচে থাকবেন, আমাদের রাজনীতিতে নেতৃত্ব দেবেন, ততদিন দেশ উন্নয়নের সিঁড়িপথেই হাঁটবে।
বার্তাবাজার/এ.আর