মিঠাপুকুরে টানা দুই দিনের বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে আধা-পাকা ধান

রংপুরের মিঠাপুকুরে ঘূর্ণিঝড় অশনি’র প্রভাবে কয়েকদিন ধরেই বৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে নিম্ন অঞ্চলের পাকা-আধা পাকা বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত দু-দিন অতিমাত্রায় ভারি বৃষ্টির কারণে জমিতেই তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্নের সোনালি পাকা ধান।

এই বৃষ্টির পানিতে আর একটু তলিয়ে গেলে শতশত হেক্টর জমির পাকা ধান নষ্ট হয়ে যাবে। অন্যদিকে ৫’শ থেকে ৬’শ টাকা দিনমজুরিতেও মিলছে না ধান কাটার শ্রমিক। ফলে চোখে-মুখে হতাশা আর চরম দুশ্চিন্তায় কৃষক।

সোমবার(১৬ মে) সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, হাঁটু পানিতে নেমে ধানের শিশ কাটছে কৃষক। অনেকেই কলাগাছের ভেলায় করে উঁচু স্থানে তুলছে ধান। মাড়াই করছে বিভিন্ন পন্থায়। এছাড়া দীর্ঘদিন ধান পানিতে থাকলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভবনাই বেশি।

বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়া শত শত বিঘা জমির ধান নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছেন কৃষক। প্রতিনিয়ত ঝড়ো বৃষ্টি ও বাতাসে খেতের ধান মাটিতে শুয়ে পড়েছে। তারমধ্যে আবার ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’র প্রভাবে ভারী বর্ষণ হওয়ায় খেতগুলোতে দীর্ঘমেয়াদী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। কাটা ধান মাড়াইয়ের পর ভেজা ধান শুকানো নিয়েও পড়তে হচ্ছে নানা বিড়ম্বনায়।

কয়েকজন কৃৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এ বছর ১ বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করতে সব মিলিয়ে খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। তারমধ্যে ধানের চারা রোপন খরচ, হাল-চাষ খরচ, সার-কীটনাশক খরচ।
আবার এই সময়ে প্রতিটি শ্রমিকের মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকার মত। স্বাভাবিক সময়ে ৪জন শ্রমিক ১ বিঘার জমির ধান কাটতে পারলেও ধান খেতে পানি থাকায় দ্বিগুণ শ্রমিক লাগছে। এতে করে বর্তমান সময়ে ১ বিঘার জন্য শুধু কাটতেই খরচ হচ্ছে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা।

মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের আটপুনিয়া গ্রামের কৃষক সৈয়দ আলী বলেন, পাকা ধান পানিতে ভাসছে আবার কিছু জমিতে আমার ধান হাবুডুবু খাচ্ছে। ৫’শ টাকাতেও শ্রমিক পাচ্ছিনা। গত দুইদিনের বৃষ্টির পানিতে ধান ডুবে গেছে। শ্রমিক না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় আছি।

একই ইউনিয়নের বারোঘরিয়া গ্রামের কৃষক মুজমুল হক বলেন, গত দুইদিন ধরে টানা বৃষ্টি হওয়ায় মাঠের ধানগুলো পানিতে ডুবে যাচ্ছে। ঈদের আগে জমি শুকনো ছিলো। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে পাকা ধানের এ অবস্থা। এতে করে ধান কাটতে কষ্ট হচ্ছে। আবার পানি থাকায় কেউ কেউ ধান কাটতে চাচ্ছে না। তাই নিজেই কাটতেছি দুই দিন ধরে। তবে ধান কাটতে যত না কষ্ট তার চেয়ে বেশি কষ্ট উঁচু স্থানে তুলতে।

এ বিষয়ে মিঠাপুকুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোহাম্মদ সাইফুল আবেদীন এর সাথে কথা হলে তিনি বার্তাবাজার নিউজকে জানান, গত দুই দিনে ঘূর্ণিঝড় অশনিতে উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বোরো ধানের জমিতে পানি প্রবেশে ও পানিতে পুরুপুরি তলিয়ে না যাওয়ায় পাকা ধানের তেমন ক্ষতি হয়নি। তবে উপজেলায় এবার ৩৪,০০০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। শ্রমিক সংকট সমাধানের জন্য ইতিমধ্যে ভূর্তকি মূল্যে ২ টি কম্বাইন হারভেষ্টার মেসিন প্রদান করা হয়েছে। কৃষকদের কথা চিন্তা করে, পর্যায়ক্রমে আরো তিনটি মেসিন প্রদান করা হবে। ক্ষতিগ্রস্হ কৃষকদের সহায়তায় বিষয়টি নিয়ে তারা ভাবছেন। আগামী ২ থেকে ৩ সপ্তাহের মধ্যে ৭০ ভাগ ধান কাটা শেষ হবে বলে আশা করছি।

পলাশ/বার্তাবাজার/এম.এম

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর