দুর্গাপুর উপজেলা আ’লীগের সভাপতি পদপ্রার্থী ৯ নেতা

নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের তিন বছর মেয়াদের কমিটি ছয় বছর ধরে চলছে। তাই দ্রুত সম্মেলন হওয়ার আশ্বাসে রাজনৈতিক উৎসবের নগরীতে পরিণত হয়েছে দুর্গাপুর। উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক, ও বিভিন্ন এলাকা পদপ্রত্যাশীদের ছবি সংবলিত বড় বড় বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও তোরণে ছেয়ে গেছে। প্রতিদিনই নতুন নতুন পোস্টার সাঁটানো হচ্ছে শহরের আনাচেকানাচে, দেয়ালে। চায়ের আড্ডা কিংবা চলতি পথের আলাপেও উপজেলা আ. লীগের নতুন নেতৃত্ব নিয়ে চলছে নানা জল্পনাকল্পনা।

সর্বশেষ ২৮ এপ্রিল ২০১৬ সালে উপজেলা আওয়ামীলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনে কাউন্সিলের মাধ্যমে সভাপতি হিসেবে বীরমুক্তিযোদ্ধা আলা উদ্দিন আল আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ নির্বাচিত হয়। পরে তারা ৬৭সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে। বর্তমান কমিটির কার্যকাল প্রায় ৬বছর অতিবাহিত হয়েছে। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ত্রি-বার্ষিক কাউন্সিল হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা হয়নি। ফলে দলীয় কর্মকান্ডে তারাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

সম্প্রতি নেত্রকোনা জেলার সদর, উপজেলা ও পৌর কমিটি ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। ওই সম্মেলনের পর কেন্দ্রীয় নেতারা দ্রুত দুর্গাপুর উপজেলার সম্মেলন করার আশ্বাস দেন। মূলত সেই আশ্বাস পেয়েই দুর্গাপুরে আওয়ামী লীগের রাজনীতি এখন চাঙা। পদপ্রত্যাশী নেতা কর্মীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে নানামুখী তৎপরতা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুর্গাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে সভাপতি পদে এখন পর্যন্ত ৯ জন প্রচারণা চালাচ্ছেন। তাদের মধ্যে বর্তমান সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আলা উদ্দিন আল আজাদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস আরা ঝুমা তালুকদার ও শাহ কুতুব উদ্দিন তালুকদার রুয়েল, তারা সম্পর্কে ভাইবোন ও প্রয়াত সাবেক সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা জালাল উদ্দিন তালুকদারের সন্তান।

এ ছাড়া পৌর মেয়র মো. আলা উদ্দিন, সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ও বর্তমান ময়মনসিংহের আইনজীবী ও সাংবাদিক ফোরামের সভাপতি এডভোকেট প্রবীর মজুমদার চন্দন, সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. এমদাদুল হক খান, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র হাজী আব্দুস সালাম, সাবেক মেয়র ও বর্তমান উপজেলা আওয়ামী সহসভাপতি শ. ম. জয়নাল আবেদিন, সহ সভাপতি এডভোকেট মজিবুর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে আলোচনা চলছে।

এ নিয়ে বর্তমান সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আলা উদ্দিন আল আজাদ বলেন, জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি মনে করেণ একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমাকে পুণরায় একই পদে বহাল রাখবেন, তবে আমি আরেকটি বার ওই পদে দায়িত্ব পালন করতে চাই।

সাবেক এমপি বীরমুক্তিযোদ্ধা মরহুম জালাল উদ্দিন তালুকদারের কন্যা জেলা আওয়ামীলীগের অন্যতম সদস্য ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌস আরা ঝুমা তালুকদার বলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি হওয়ার জন্য অধিক সময় ধরে তৃণমূল আওয়ামীলীগ নেতাদের সাথে নিয়ে আমি মাঠে কাজ করছি। করোনাকালীন সময় অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছি। । আসন্ন কাউন্সিলে দলের সভাপতি হিসেবে দল আমাকে মনোনীত করবে আমি আশাবাদী।

সাবেক কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য এডভোকেট প্রবীর মজুমদার চন্দন বলেন, ৭৫ এর পরবর্তী দুর্যোগকালীন সময়ে আমি রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখি। আমি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলাম। দলের দুঃসমেয় আমার পরিবারের উপর দিয়েও অসংখ্য ঝড় বয়ে গেছে।আমি প্রত্যাশা করি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত করবেন।

শহীদ পরিবারের সন্তান, বর্তমান পৌর মেয়র মো. আলা উদ্দিন বলেন, পৌর নির্বাচনে জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেয়। জনগণ আমাকে বিপুল ভোটে জয়ী করে মেয়র নির্বাচিত করে। আমি জনগনের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি। বর্তমানে আমি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রার্থী। আশা করি দল আমাকে সে পদে মনোনীত করবে ।

প্রয়াত সাংসদ জালাল উদ্দিন তালুকদারের ছেলে শাহ্ কুতুব উদ্দিন তালুকদার রুয়েল সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দিতার লক্ষ্যে সকল শ্রেণি পেশার নেতাকর্মীদের দোয়া কামনা, শুভেচ্ছা ব্যানারও অলিগলিতে শোভা পাচ্ছে।

উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগ সহ-সভাপতি এমদাদুল হক খান জানান, আমি একজন আওয়ামীলীগের নিবেদিত প্রাণ। সভাপতি পদে আসতে পারলে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দলকে এগিয়ে নেয়ার স্বার্থে কাজ করে যাবো।

পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র হাজী আব্দুস সালাম বলেন, আমি একজন দলের নিবেদিত কর্মী হিসেবে কাজ করে যাচ্ছি। দল ও উপজেলার স্বার্থে দলীয় হাই কমান্ড ইচ্ছে করলে সভাপতি পদে আমাকে নির্বাচিত করতে পারেন। আমি দলকে ভালোবেসে কাজ করতে চাই।

সভাপতি প্রার্থী এডভোকেট মজিবুর রহমান বলেন, ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করি। আমি দলের দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের একত্রিত করে কাজ করেছি। দলকে সুসংহত করেছি। দলের উন্নয়নে ও করোনাকালে সাধারণ মানুষকে দলের পক্ষ হতে সহযোগিতা করেছি। আশা করি দল আমাকে মূল্যায়ন করবে।

সাবেক মেয়র ও বর্তমান উপজেলা আ.লীগ সহ:সভাপতি শ.ম জয়নাল আবেদিন বলেন, আমি দলের সভাপতি প্রার্থী। বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে দেশের স্বার্থে আওয়ামীলীগ কাজ করে যাচ্ছি অনেক আগে থেকেই। দলের জন্য বহুবার কারাভোগ করেছি, দল আমাকে সঠিক মুল্যায়ন করবে বলে আমি আশাবাদী।

ত্যাগী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মনে করছেন, আসন্ন উপজেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে অসংখ্য প্রার্থীর ছড়াছড়ি থাকলেও যোগ্য ব্যক্তিই সভাপতি পদে আসুক এটাই আমাদের চাওয়া। কারন এবার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দলীয় হাই কমান্ডের নির্দেশনায় মনোনীত করা হবে বলে শোনা যাচ্ছে।

রাজেশ গৌড়/বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর