মুজিব কোটের নামে কোটি টাকা অপচয় ও সংঘবদ্ধ দুর্নীতি

বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা গোল্ড কাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট। স্কুল পর্যায়ের কিশেোর-কিশোরীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠা টুর্নামেন্ট দুটিকে ২০২০ সালে মুজিবর্ষ উপলক্ষে বিশেষভাবে সজানোর পরিকল্পনা করেছিলো প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

২০২০ সালের ২১ই মার্চের ফাইনাল খেলায় স্টোডিয়ামের ২০ হাজার শিশু দর্শকদের বঙ্গবন্ধুর আদলে সাজাতে পাজামা-পানজামির উপরে মুজিব কোর্ট আর চোখে বঙ্গবন্ধুর চশমা পরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিলো। কিন্তু করোনা মহামারি প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই খেলা ১২ই মার্চ স্থগিত করা হয়। যেটি আর মাঠে গড়ায়নি।

খেলা না হলেও ২০ হাজার দর্শককে বঙ্গবন্ধুর আদলে সাজাতে পরিকল্পনা কিন্তু বাতিল হয়নি। সরকারি কাগজপত্র বলছে খেলা স্থগিত হওয়ার দুই মাস পর ২০২০ সালের ১১ মে পোষাক কিনতে ঢাকার ১৩টি থানা শিক্ষা অফিসারের অনুকূলে ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়।

ফাইনাল খেলায় শিশু দর্শকদের কাছে বিতরণ করা হয়েছে বলেও দেখা যাচ্ছে কাগজে-কলমে। প্রধান শিক্ষকেরা পোষাক বিতরণ হয়েছে মর্মে তালিকাও পাঠিয়েছেন থানা অফিসারের কাছে। সেখান থেকে তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে শিক্ষা অধিদপ্তরে।

তবে নাম প্রকাশে এক শিক্ষক জানিয়েছেন, আমরা শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর সংগ্রহিত ভাউচারগুলি দেই। কিন্তু অদ্য বদি সেই ভাউচারের পোষাক বা পোষাকের টাকা আমরা পাইনি। পোষাক তো পাইনি বরং আমাদেরকে থানা শিক্ষা অফিসার এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তা চাপ প্রদান করেন বিল সমন্বয়ের জন্য।

৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দের কথা স্বীকার করেছে ডেমরা থানার শিক্ষা কর্মকর্তা কে এম সাঈদা ইরানী। তিনি বলেন, এই বরাদ্দ স্যারদের নামে আসে, কখনো আমাদের নামে আসে না। বরাদ্দের সময় তখন সময় ছিলো খুব অল্প সেই জন্য তাৎক্ষণিকভাবে এই টাকাটা উপজেলা ভিত্তিক দেয়। কিন্তু ঐ অর্থ কিভাবে খরচ হয়েছে তা জানেন না তিনি।

বরাদ্দের টাকা কাকে কাকে দিয়েছেন প্রশ্নের জবাবে মতিঝিল থানা কর্মকর্তা কামরুন নাহার বলেন, কাকে কাকে নয় বরং টাকাগুলো আমাদের যেভাবে দিতে বলেছে আমরা সেভাবে চেক দিয়েছি। এটা আমি না শুধু সবাই সেভাবে দিয়েছি। আমরা তো টেন্ডার করিনি। আমাদের যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে আমরা সেভাবে করেছি।

অনুসন্ধান বলছে, খেলা বাতিল হবার পর কেনা পোষাকের একটি সেটও বিতরণ হয়নি। সেগুলো এখনও সংরক্ষিত আছে উপ-বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে। আগাম বরাদ্দ পাওয়া ২ কোটি ১০ লক্ষ টাকা খরচ সমন্বয়ের জন্য জমা দিয়েছে থানা অফিসগুলো। কিন্তু জটিলতা বেধেছে সেই খরচ সমন্বয়ে। একাধিকবার তা ফেরত পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসাবরক্ষণ অফিস। এনিয়ে বিপাকে আছে থানা শিক্ষা অফিসগুলো।

ডেমরা থানার শিক্ষা কর্মকর্তা কে এম সাঈদা ইরানী আরও বলেন, কোনো কারণে এই বরাদ্দের সমন্বয় করতে না পারি তাহলে এটার তাই কিন্তু আমার। এমন হতে পারে এই টাকা আমরা ফেরত দিতে হতে পারে। কি করবো? আমি চাকরি করি আমাকে দিতে হবে। এটার জন্য আমার ডিপার্টমেন্টের সাথে অনেক যুদ্ধ করেছি।

প্রশ্ন থেকে গেছে, প্রধান শিক্ষকরা তাহলে কি বিতরণের তালিকা পাঠিয়েছেন। থানা শিক্ষা কর্মকর্তার নামে ক্রয় করা মাল কিভাবে উপ-বিভাগীয় শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে গেলো? খরচ সমন্বয়ই বা হচ্ছে না কেনো?

এগুলো নিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মুনসুরুল আলম ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি না হলেও টেলিফোনে জানিয়েছেন থানা শিক্ষা অফিসগুলোই টেন্ডার করেছিলেন সেভাবেই হয়েছে কেনা কাটা।

তিনি বলেন, এই অফিস থেকে কোনো টেন্ডার হয়নি। হওয়ার সুযোগও নেই। কারণ বরাদ্দ দেয়ার পর তো যেখানে টেন্ডার যায় সেই টেন্ডার মালিক আইননত। ডিজি অফিস তো টেন্ডার করতে পারে না। কারণ তার কাছে তো টাকা নাই।

দুর্নীতি নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান টিআইবির নির্বাহী পরিচালকের মতে, এটা সরকারের অর্থের অপচয় এবং দুর্নীতির উদ্দেশ্যে সংঘবদ্ধভাবে করা হয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড.ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্ধারিত তারিখের পর বাজেট বরাদ্দ দেয়া, বাজেট উত্তোলন করা এবং তার উপর ভিত্তি করে প্রোডাক্ট ক্রয় করা পুরো বিষয়ের উপর একটা দুর্নীতি দেখা যাচ্ছে।

বার্তাবাজার/এ.আর/এম.আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর