সাহায্য-সহযোগিতার নামে ফোনে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে নাহিদের স্ত্রীকে

রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় শিক্ষার্থী ও দোকানকর্মীদের সংঘর্ষের মধ্যে নিহত ডেলিভারিম্যান নাহিদ মিয়ার হতভাগ্য সহধর্মিণী ডালিয়া আক্তারের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে। এক রকম বিপদেই পড়েছেন তিনি। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ডালিয়ার মোবাইল নম্বর ছড়িয়ে পড়াই এর অন্যতম কারণ।

ডালিয়া জানালেন, নাহিদের মৃত্যুর পর সাহায্য-সহযোগিতার নামে ফোনে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছেন কেউ কেউ। প্রায় প্রতিদিনই ফোনে এমন প্রস্তাব পাচ্ছেন তিনি। স্বামীর মৃত্যুর সপ্তাহ না পেরোতেই এমন প্রস্তাব পেয়ে তিনি বিরক্ত ও বিব্রত।

মূলতঃ স্বামীহারা অসহায় ডালিয়ার পাশে দাঁড়াতে গণমাধ্যমে তার বিকাশ নম্বর প্রকাশ হয়। যাতে ওই নম্বারে অর্থ সহায়তা করে ডালিয়ার ঈদ উদযাপনটা কিছুটা হলেও স্বস্তিময় করে তুলতে পারে। কিন্তু তা না হয়ে উল্টো বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার এ হতভাগ্য নারী।

ডালিয়া জানালেন, ওই বিকাশ নম্বরে কোনো টাকা-পয়সা তো আসেই না; উল্টো ফোন করে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। এমনকি কেউ কেউ নাকি তার কামরাঙ্গীর চরের বাসায় গিয়ে হাজির হচ্ছেন প্রস্তাব নিয়ে! স্বামীকে ছাড়া প্রথম ঈদ কেমন কাটবে প্রশ্নে এ তথ্য দেন ডালিয়া।

ডালিয়া আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সবাই বিয়ের কথা বলে অথচ কেউ টাকা সহযোগিতা করে না। এই বিষয়টা নিয়ে পরিবার বিরক্ত। মিডিয়াতে নম্বর দিয়েছি যেন আমাকে সহায়তা করা হয়। কিন্তু সেই নম্বরে টাকা না পাঠিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়া হচ্ছে। অনেকে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে সকালে বাসায় এসে বসে থাকে। সকাল ৭টায় এসে প্রস্তাব দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।’

ডালিয়া বলেন, ‘আমার স্বামী মারা গেছেন মাত্র ১২ দিন। আর এরইমধ্যে আপনারা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে আসেন, ফোনে বলেন। একবার ভাবুন – আপনাদের ঘরে মা-বোন থাকলে তাদেরও কি ১২ দিনেই এসব কথা বলতেন? অন্তত ছয় মাস, এক বছর, দুই বছর, ছয় বছর তো যেত। আপনারা কেন আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন?দয়া করে কেউ বিয়ের প্রস্তাব দেবেন না।’তবে এসবের মাঝে আর্থিক সাহায্য-সহযোগিতা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন নিহত নাহিদের মা নার্গিস বেগম।

প্রেম করে মাত্র ছয় মাস আগে নাহিদকে বিয়ে করেন ডালিয়া। অর্থাৎ বিয়ের পর এটাই ডালিয়ার প্রথম ঈদ। আর ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে প্রথম ঈদটাও স্বামীর সঙ্গে করতে পারলেন না ডালিয়া।

প্রসঙ্গত, গত ১৮ এপ্রিল ইফতারের টেবিল বসানো নিয়ে নিউমার্কেটের দুই দোকানের কর্মীদের ঝগড়ার পর এক পক্ষ ঢাকা কলেজ ছাত্রাবাস থেকে ছাত্রলীগের কয়েক কর্মীকে ডেকে আনে। তারা গিয়ে মারধরের শিকার হওয়ার পর ছাত্রাবাসে ফিরে আরও শিক্ষার্থীদের নিয়ে সোমবার মধ্যরাতে নিউ মার্কেটে হামলা চালাতে গেলে বাঁধে সংঘর্ষ।

পরদিনও চলে এই সংঘর্ষ। এদিন সংঘর্ষের সময় ডেলিভারিম্যান নাহিদকে কুপিয়ে জখম করা হয়। ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাতে তিনি মারা যান।

বার্তাবাজার/জে আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর