আ.লীগের দু‘গ্রুপের দ্বন্দ্ব: ডাকাতদের ভাড়া করা অস্ত্রে জীবন যায় সাংবাদিক মুজাক্কিরের

ভাড়া করা অস্ত্র দিয়েই হত্যা করা হয় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরকে। ঘটনার পর পরই বিদেশে পালিয়ে যায় প্রধান সন্দেহভাজন। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এমন সব তথ্য।

গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৫টার দিকে উপজেলার চরফকিরা ইউনিয়নের চাপরাশিরহাট তরকারি বাজারের সামনে সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই কাদের মির্জা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বাদল গ্রুপের মধ্যে রক্ষক্ষয়ী সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।

ওই সময় দায়িত্ব পালনের সময় গলায় গুলিবিদ্ধ হন সাংবাদিক মুজাক্কির।

এ অবস্থায় প্রথমে তাকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিলে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

পরে শুক্রবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাত পৌনে ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়। এক পর্যায়ে সংকটাপন্ন অবস্থায় আইসিইউতে মৃত্যু হয় বার্তা বাজারের নিজস্ব প্রতিনিধি বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের।

সেদিনের ভয়াবহ ঘটনার বর্ণনা দেন প্রত্যক্ষদর্শী ও গুলিবিদ্ধরা। তারা জানান, মুজ্জাকির ঐভাবে গুলিবিদ্ধ হয়েছিলো সেটা বুঝার উপায় ছিলো না। গেলে কয়েক দশকেও  এ উপজেলায় এমন ভয়াবহ রুপ দেখেননি তারা।

সাংবাদিক মুজাক্কির হত্যার ঘটনায় তার বাবা নুরুল হুদা বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে সে মামলার বিচার কাজ তো দূরে থাক এখন পর্যন্ত অভিযোগ পত্রই জমা দেয়নি তদন্ত সংস্থা।

এনিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে মুজাক্কিরে পিতা ও মামলার বাদী নুরুল হুদা বলেন, বর্তমান সরকার যদি কোনো তথ্য উৎঘাটন করতে পারে তাহলে হত্যাকারীদের দৃষ্টন্তমূলক শাস্তির জন্য আকুল আবেদন জানান।

অনুসন্ধানে আরও উঠে এসেছে, কোম্পানীগঞ্জের নিকটবর্তী সন্দ্বীপ এর উড়ির চরের একটি ডাকাত দলের কাছ থেকে এক সপ্তাহের জন্য বেশ কয়েকটি অস্ত্র ভাড়ায় আনা হয়। শরীফ এবং মাসুদ নামের দুই ব্যক্তি এই অস্ত্র ভাড়ায় নেন যা নাজিম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি সমন্বয় করে সর্ম্পর্ণ বিষয়টি। সাংবাদিক বুরহান উদ্দিন মুজাক্কিরের মৃত্যুর পরের দিন পাড়ি জমায় মধ্যপ্রাচ্যে তিনি। এখনও উদ্ধার হয়নি একটি অস্ত্রও।

মুজাক্কির হত্যায় দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে আমজাদ হোসাইন মাসুদ, শরিফ উলাহ টিটুসহ তিন জন। তবে মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে না পারায় অভিযোগপত্র আটকে আছে বলে জানিয়েছেন তদন্ত সংস্থার প্রধান।

পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক বনজ কুমার মজুমদার বলেন, তারা যে সব কিছু বলে কিন্তু পিন পয়েন্টে গিয়ে গুলিটি কে করলো সেটা এখন পর্যন্ত আমরা কারো মুখ থেকেই বের করতে পারিনি। আমরা এজন্যই এখন পর্যন্ত কোনো অস্ত্র উদ্ধার হয়নি। ভিডিও ফুটেজে যে ব্যক্তিকে অস্ত্র বুঝিয়ে দিতে দেখা গিয়েছে সে নিজেও এই মামলার আসামী।

তিনি আর বলেন, অস্ত্র বুঝে নেয়া ব্যক্তির সম্পর্কে যখনই আমরা তদন্ত শুরু করেছি তখন জানতে পারি সে বিদেশে চলে গিয়েছেন। তবে প্রধান সন্দেহভাজনকে পাওয়া গেলেই দেয়া হবে এই মামলার  অভিযোগ পত্র।

এদিকে হত্যাকাণ্ডের জন্য বসুরহাটের পৌর মেয়র সেতুমন্ত্রীর ছোট ভাই কাদের মির্জা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল একে অপরকে দোষারোপ করছেন।

বসুরহাটের পৌর মেয়র কাদের মির্জা বলেন, কোম্পানীগঞ্জের অপরাজনীতির হোতা মিজানুর রহমান বাদল তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছিলেন মুজাক্কিরকে হত্যার করার জন্য। তাদের গুলি করার ছুবি তোলায় মুজাক্কিরকে হত্যা করা হয়।

তিনি আরও বলেন, আমার কোনো অনুসারী যদি এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকে তাহলে তাকে আইনের আওতায় এনে বিচার করা হোক।

তবে সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদল বলেন, কাদের মির্জা আমাকে দায়ী করবে কি করবে না তাতে আমার বিবেচ্য বিষয় না। তবে এই মুজাক্কির হত্যার জন্য দায়ী কাদের মির্জা।

আওয়ামী লীগের এই দু্ই নেতাই একে অপরকে দোষারোপ করছে। তবে তার বলছে অপরাধী যে গ্রুপেরই হোক না কেন দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক।

বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর