উন্নত প্রশিক্ষণ নিতে ইউরোপের দেশ পর্তুগালে যাচ্ছেন রংপুর সদরের চার নারী ফুটবলার

উন্নত প্রশিক্ষণ নিতে রোনালদোর দেশ পর্তুগাল যাচ্ছেন রংপুর সদরের চার নারী ফুটবলার। সদর উপজেলার পালিচড়া নয়াপুকুরের নাছরিন আক্তার, মৌরাশি আক্তার, শাম্মি আক্তার ও রেখা আক্তার পর্তুগাল যাওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছেন।

এছাড়াও ফুটবল প্রশিক্ষনের জন্য পেলে-নেইমারের দেশ ব্রাজিলে যাওয়ার জন্য মনোনীত হয়েছেন পীরগঞ্জ উপজেলার লিয়ন প্রধান।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং ক্রীড়া পরিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে তারা উচ্চতর প্রশিক্ষণের জন্য ইউরোপ যাচ্ছেন।

জানা গেছে, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে এবং ক্রীড়া পরিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে গত বছর অনুষ্ঠিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট (বালক, অনূর্ধ্ব-১৭) ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জাতীয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের (বালিকা, অনূর্ধ্ব-১৭) খেলায় ইউনিয়ন থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত ১ লাখ ১০ হাজার ৫৬৫ জন খেলোয়াড় অংশগ্রহণ করে।

সেখান থেকে বাছাই করা প্রতিভাবান ৮০ জন বালক ও বালিকা খেলোয়াড়কে চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি থেকে বিকেএসপিতে ২ মাস নিবিড় প্রশিক্ষণ প্রদান করছেন ক্রীড়া পরিদপ্তর। বর্তমানে তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া ৮০ জনের মধ্য থেকে ১১ জনের বালক দলটি ব্রাজিলে এবং বালিকাদের ১১ জনের দলটির পর্তুগাল যাওয়ার কথা রয়েছে। তাদের উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য সেখানে পাঠানো হবে।

প্রশিক্ষণের জন্য দুটি দলে ১১ বালক এবং ১১ বালিকা ফুটবলার (অনূর্ধ্ব-১৭) মনোনীত হয়েছেন। প্রকাশিত তালিকায় নাছরিন আক্তার, মৌরাশি আক্তার, শাম্মি আক্তার ও রেখা আক্তারের নাম রয়েছে। এরা সবাই সদর উপজেলার পালিচড়া গ্রামের সদ্যপুস্কুরিনী যুব স্পোর্টিং ক্লাবের ফুটবলার। এ ছাড়া বালকদের (অনূর্ধ্ব-১৭) দলে রয়েছে পীরগঞ্জ ফুটবল একাডেমির মেধাবী ফুটবলার লিয়ন প্রধান।

ফরোয়ার্ড পজিশনে খেলা পীরগঞ্জের লিয়ন প্রধানসহ ১১ জনের পাশাপাশি আরও চারজন খেলোয়াড়কে অতিরিক্ত হিসেবে বাছাই করা হয়েছে। প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণের জন্য এসব খেলোয়াড় মে মাসের শেষদিকে ব্রাজিলে যাবেন।

রংপুরের লিয়ন বিকেএসপির শিক্ষার্থী। তিনি পীরগঞ্জ সরকারি শাহ আব্দুর রউফ কলেজের এইচএসসির দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। পীরগঞ্জ পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের ধনশালা গ্রামের দিনমজুর রফিকুল ইসলাম ও গৃহিণী খাদিজা বেগমের একমাত্র ছেলে লিয়ন। তার এক ছোট বোন রয়েছে।

লিয়নের বাবা রফিকুল ইসলাম বলেন, বসতভিটা ছাড়া আমার জমি নেই। সংসারের খরচ চালাতে অন্যের জমিতে কাজ করি। আমার দুই ছেলেমেয়ের খাবারই ঠিকমতো দিতে পারিনি। স্কুলে যাওয়ার জন্য লিয়ন একটা বাইসাইকেল চেয়েছিল। অভাবের কারণে সাইকেলটাও দিতে পারিনি। পায়ে হেঁটেই ক্লাস করেছে। লেখাপড়ার খরচও কষ্ট করে চালাচ্ছি। অভাবের মধ্যে বড় হওয়া আমার ছেলে ফুটবল খেলার জন্য বিদেশে (ব্রাজিল) যাচ্ছে। আনন্দে বুক ভরে গেছে।

পীরগঞ্জ ফুটবল একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কোচ মাহমুদুল হাসান সোহেল বলেন, তরুণ ও যুব সমাজকে মাদকের ভয়াল গ্রাস থেকে রক্ষায় পড়ালেখার পাশাপাশি খেলার বিকল্প নেই। ফুটবল খেলা ধরে রাখতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আমাদের একাডেমির ক্ষুদে খেলোয়াড় লিয়ন বিকেএসপিতেও ভর্তি হয়েছে। ফুটবল খেলায় প্রশিক্ষণ নিতে ব্রাজিলে সুযোগ পাওয়ায় লিয়নকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

এদিকে সদর উপজেলার সদ্যপুস্করীনি ইউনিয়নের ফুটবল কন্যাদের গ্রাম পালিচড়ার চার মেয়ের পর্তুগাল যাওয়া নিয়ে উচ্ছ্বসিত এলাকাবাসী । এর আগেও রংপুরের এই নারী ফুটবলাররা দেশে বিভিন্ন জাতীয় ক্যাটাগরির খেলায় সফলতা অর্জন করেন।

শিলা আক্তারের বাবা গোলজার হোসেন ভীষণ আনন্দিত ও অশ্রুসিক্ত চোখে এই অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে বিদেশে প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে জায়গা পেয়েছে। এটা তো আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জন। আমি যে কী খুশি, তা বলে বোঝাতে পারব না।

আরেক অভিভাবক রেজ্জাক আলী বলেন, মুই বিশ্বাস করব্যার পারোছো না, মোর বেটি ঢাকাত খেলবার গেইছে। ফির স্যাটে থাকি বিদেশোতও যাবার সুযোগ পাইছে। গ্রামোত ক্লাব না থাকলে এত কিছু হইল না হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, রংপুর জেলার সাবেক পুলিশ সুপার বিপ্লব কুমার সরকার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এ সার্কেল) আবু তৈয়ব আরিফের পৃষ্টপোষকতায় সদ্যপুস্কুরিনী যুব স্পোর্টিং ক্লাবের চিত্র পাল্টে গেছে। ক্লাবটি ২০২০ সাল থেকে আলোর মুখ দেখা শুরু করে।

শুধু তাই নয়, বিপ্লব কুমার সরকার দুই নারী ফুটবলার নাছরিন আক্তার ও রুমি আক্তারকে লিগামেন্ট অপারেশন (পায়ের অস্ত্রোপচার) করিয়ে খেলোয়াড় জীবন পুনরায় ফিরিয়ে দিয়েছেন। এখন সেই নাছরিনসহ চার ফুটবলার ইউরোপীয় দেশ পাড়ি দেবার অপেক্ষায়।

সদ্যপুস্কুরিনী যুব স্পোর্টিং ক্লাবের সভাপতি ও ফুটবল প্রশিক্ষক মিলন মিয়া বলেন, আমাদের সফলতা দিন দিন বেড়ে চলেছে। আমাদের লক্ষ্য এই ক্লাবের মাধ্যমে দেশে ভালমানের খেলোয়াড় তৈরিতে ভূমিকা রাখা। সেই চেষ্টা নিয়েই দীর্ঘদিন গ্রামের মানুষের সহযোগিতায় আমরা কাজ করে যাচ্ছি। জেলা প্রশাসক সবসময় খোঁজখবর রাখেন। জেলা পুলিশও আমাদের সহযোগিতা করছে। আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে, কিন্তু স্পন্সরের অভাবে বাস্তবায়ন করাটা কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রকি/বার্তাবাজার/কা.হা

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর