গণতন্ত্রের কালো দিবস আজ

আজ স্বৈরাচার দিবস। ১৯৮২ সালের আজকের এই দিনে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ সামরিক ফরমান জারি করে জাতীয় সংসদ ও প্রেসিডেন্টসহ মন্ত্রিপরিষদ বাতিল করে সংবিধানের কার্যকরিতা স্থগিত ঘোষণা করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন এবং দেশে স্বৈরশাসন জারি করেছিলেন।

বাংলাদেশে অগণতান্ত্রিক ও সংবিধান লঙ্ঘনের যে ধারা জিয়াউর রহমান সূচনা করেছিলেন সে ধারায় দ্বিতীয় ব্যক্তি হিসেবে ক্ষমতা দখল করেছিলেন হু. মু. এরশাদ। প্রায় ৯ বছর জগদ্দল পাথরের মতো শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠ ছিলেন। ১৯৯০ সালের ১ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়ার ঘোষণা দেন এরশাদ। তবে পরের ছয় দিন ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রাণান্তকর চেষ্টা করেও পতন এড়াতে পারেননি তিনি। শুধু তাই নয়, ক্ষমতা হারানোর পর কারাগারেও যেতে হয় তাঁকে।

১৯৯৭ সালের জানুয়ারিতে কারাগার থেকে মুক্ত হন এরশাদ। আগের বছর ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপির বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে আন্দোলন করে ক্ষমতার শরিক হয় এরশাদের জাতীয় পার্টি। তবে তিন বছরের মধ্যেই অর্থাৎ পরবর্তী নির্বাচনের আগে তিনি বিএনপির সঙ্গে চারদলীয় জোট করেন। অবশ্য তখনও আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদ প্রায় দুই বছর বাকি ছিল। ওই সময় তাঁর বিরুদ্ধে থাকা মামলাগুলো সক্রিয় হয়ে ওঠে। এমতাবস্থায় জোট থেকে মাত্র এক বছরের মাথায় বেরিয়ে আসেন এরশাদ।

এরপর ক্ষমতায় আসে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। আর তিনি থাকেন বিরোধী দলে। পর্যবেক্ষকদের মতে, ওই সময় এরশাদ থাকেন পুরোপুরি সেফটি জোনে। বিরোধী দলে থাকলেও সরকারের সমালোচনা করতেন না তিনি। এমনকি সরকার মনে কষ্ট পেতে পারে ভেবে, প্রধান বিরোধী দলের সঙ্গে খুব একটা ভিড়তেনও না তিনি।

সরকারের মেয়াদ শেষে ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি দেশে সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির সঙ্গে জোট গঠনের আশ্বাসও দিয়েছিলেন এরশাদ। অবশ্য শেষ পর্যন্ত যোগ দেন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটে।

২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে, প্রধান দুই দলের নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াসহ আরো বেশ কিছু শীর্ষ নেতা কারাগারে যান। তবে বাইরে থেকে যান সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদ।

ওই সময়ে রাজনীতি থেকে অবসরেরও ঘোষণা দেন তিনি। এমনকি দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছেড়ে দেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, ওই সবই ছিল এরশাদের ধূর্ততা। কারণ ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে স্বরূপে ফেরেন বহুরূপী এরশাদ। শেষ পর্যন্ত মহাজোটের শরিক হয়ে ক্ষমতায় আসীন হন তিনি এবং গত ১০ বছর একইসঙ্গে সরকার ও বিরোধী দলে থেকে নিজের কর্তৃত্ব বলবৎ রাখেন এরশাদ।

পৃথিবীর দেশে দেশে স্বৈরাচারী একনায়করা করুণ পরিণতি বরণ করেন। সাদ্দাম হোসেন থেকে মার্কোস সবার পরিণতি মোটামুটি একই রকম। কেউ বিচারে মৃত্যুদণ্ড দণ্ডিত হয়েছেন, কেউ দেশ ত্যাগ করে নির্বাসিত জীবন যাপন করেছেন, কেউবা কারাগারের চার দেয়ালে বন্দী জীবন কাটিয়েছেন। ব্যতিক্রম শুধু একজন। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। এরশাদ বিশ্বে ভাগ্যবান একমাত্র স্বৈরাচার, যিনি গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত হবার পরও এখনো বহাল তবিয়তে আছেন। ছোট খাট ছিঁচকে চুরির মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন। কিন্তু স্বৈরাচারের বিচার এখনও হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে ২৪ মার্চকে কালো দিবস হিসেবে পালন করা হলেও এখন আর সেটিও হয় না। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখনও ‘কাঙ্ক্ষিত‘ একটি নাম হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। ৯০ এর যে রাজনৈতিক দলগুলো তাঁকে হটিয়ে বিদায় করেছিল, তারাই এখন তাঁকে বশে আনার প্রাণান্ত চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগ বিএনপি দু’দলের জন্যই তিনি তুরুপের তাস। এরশাদ থাকলেই ক্ষমতার স্বাদ পাওয়া সহজতর হয়ে যায়। সুযোগটা হাতছাড়া করেন না ধূর্ত এরশাদ। মওকা বুঝে ফায়দা ঠিকই তুলে নেন সাবেক এই স্বৈরশাসক।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর