পশ্চিম ঘানার একটি গ্রাম মামফে ডাভ। এই গ্রামের নাম কেউ আগে শুনেছেন কিনা জানি না! কারণ এই গ্রামের একটি বিশেষত্ব রয়েছে যা সকলের জানা দরকার। অবশ্যই এটা জানলে অনেকে অবাকও হতে পারেন। সেটি হল, এই গ্রামের কোনো বাসিন্দারই জন্ম নিজ গ্রামে নয়। অর্থাৎ এই গ্রামে কোন সন্তান জন্ম দেয়া যায় না। সব অন্য গ্রাম থেকে আসা জনগণ এখানকার বাসিন্দা।
আজ ডেইলি বাংলাদেশের পাঠকদের জন্য থাকছে গ্রামটি নিয়ে আলোকপাত। কেন এই নির্দেশনা? মূলকথা হলো এই গ্রামে সন্তান জন্ম দেয়ার অনুমতি নেই। তার কারণ, এখানে সন্তান জন্ম দেয়াকে প্রথাবিরোধী এবং সৃষ্টিকর্তার অসন্তুষ্টির কারণ মনে করা হয়।
বিবিসি এই গ্রামের এক প্রতিবেদন করতে গিয়ে তাদের কথা জানিয়ে বলছে, গ্রামের এই নিয়ম ভাঙতে গিয়ে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দুঃসহ যন্ত্রণা সহ্য করেছেন সন্তানসম্ভবা অনেক মা। এরপরও অনুমতি মেলেনি সন্তান প্রসবের। শুধু তাই নয়, এখানে গর্ভবতী নারীদের কঠোর পরিশ্রম করতে হয়, ছুটে চলতে হয়। এমনকি তীব্র প্রসববেদনা নিয়েও কঠিন পথ পারি দিতে হয়। অর্থাৎ সন্তান গর্ভে আসার আগে যে পরিশ্রম তারা করে, সন্তান ধারণ করার পরও তাদের সেসব কাজ চালিয়ে নিতে হয়।
ফলে, কেউ সাহস করেন না সন্তান জন্মদানে। তবে অনেকেই এর বিরোধিতা করছেন এখন। বিশেষ করে নারীরা এই নিয়মের বিরোধীতা করা শুরু করে দিয়েছেন। তাদের দাবি, এখানেই তাদের সন্তান জন্মদানের অনুমতি দেয়া হোক। এই গ্রামের একজন নারী হানাহ কোসিনা।
তিনি গণমাধ্যমে বলেছেন, আমি ৯ মাসের গর্ভবতী। কিন্তু এখানে সন্তান জন্ম দেয়ার অনুমতি নেই। সন্তান প্রসব করতে আমাদেরকে অনেক দূরে যেতে হয়।
তিনি আরো বলেছেন, প্রথম সন্তান জন্ম দেয়ার সময় আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল। অন্য গ্রামে যাওয়ার জন্য একটি গাড়ি পেতে আমাকে অনেক কষ্ট করতে হয়। আমার দ্বিতীয় সন্তানটি হয় অন্য আরেকটি গ্রামে। তবে এখন কাছাকাছি একটি ক্লিনিক হয়েছে। আমার তৃতীয় সন্তান প্রসবের সময় সেখানেই যাবো ভাবছি।
হানাহ কোসিনা আরো বলেন, আমি গ্রামের মোড়লদের কাছে বলতে চাই, আপনারা এই নিয়ম বিলুপ্ত করুন। আমরা যেন নিজ গ্রামেই সন্তান জন্ম দিতে পারি। আমাদের যেন এত বড় পেট নিয়ে দিগ্বিদিক ছুটতে না হয়।
মোড়লদের একজন কওয়ামে সিদিতসে বেনুয়া। তিনি বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষরা এখানে আসেন। তখন স্বর্গ থেকে বাণী এসেছিল। এটি একটি পবিত্র ভূমি, তোমরা যদি এখানে বসবাস করতে চাও, তবে এখানে কিছু নিয়ম আছে, এখানে কারো জন্ম হবে না। এবং কারো সৎকারও হবে না।
তিনি বলেন, আপনি যদি অনুগত হন, তাহলে সবকিছু ঠিকভাবে চলবে এবং সে কারণে আমরা এখনো এখানে আছি। আর ওই অঞ্চলের অন্যান্য গ্রামে এই রকম নিয়ম বিলুপ্ত করা হলেও এই গ্রামে এখনো সেটাই বলবৎ আছে। কারণ এখানকার মোড়লরা তা ভাঙতে চায় না।