চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের যন্ত্রপাতি কেনার নামে ৯ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী ও তিন চিকিৎসকসহ সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) দুদক চট্টগ্রামের এক কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছেন, প্রধান অফিসে সাত আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন দেওয়া হয়েছে৷ তা শিগগিরই আদালতে জমা দেওয়া হবে৷
সরফরাজ কাদের ছাড়াও মামলায় অন্য আসামিরা হলেন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক আবদুর রব, মঈন উদ্দিন মজুমদার ও বিজন কুমার নাথ এবং ঢাকার সেগুনবাগিচার বেঙ্গল সায়েন্টেফিক অ্যান্ড সার্জিক্যাল কোম্পানীর স্বত্বাধিকারী জাহের উদ্দিন সরকার, ঢাকার মিরপুরের মেসার্স আহম্মদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মুন্সী ফারুক হোসেন ও ঢাকার বনানীর এএসএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আফতাব আহমেদ।
ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলার সিভিল সার্জনের পাশাপাশি ওই সময় তিনি চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
এরআগে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. সিরাজুল হক বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১-এ মামলাটি করেন। ৯ কোটি ১৫ লাখ ৩০ হাজার ৪২৫ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয় মামলায়। তবে মামলার সব আসামি বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।
মামলা দায়েরের পর দুদকের উপপরিচালক লুৎফুল কবির চন্দন জানিয়েছিলেন, ‘২০১৪-১৫ সালে তৎকালীন সিভিল সার্জন ও জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরফরাজ খান চৌধুরীর বিরুদ্ধে ১২টি ভারী যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৯ কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সব যন্ত্রপাতির বাজারমূল্যের সঙ্গে দেখানো ক্রয়মূল্যের বিস্তর তফাত পায় দুদক। এ ঘটনায় চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সরফরাজ খান, তিন চিকিৎসক ও চার ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এ মামলা দায়ের করা হয়।’
চাকরিজীবনের বিভিন্ন সময়ে (১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত) চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সিভিল সার্জনের দায়িত্ব পালন করেন সরফরাজ খান চৌধুরী। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে যান তিনি। তার শেষ কর্মস্থল ছিল চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল।
যখন যে জেলায় সিভিল সার্জনের দায়িত্ব পালন করেন, তখন সেই জেলার সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কও ছিলেন তিনি। ২০১৭ সালে তিন জেলায় দায়িত্ব পালনের সময় তার বিরুদ্ধে ৯ কোটি ৭২ লাখ ৫৫ হাজার ৪০২ টাকার অডিট আপত্তি তোলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
বিষয়টি তদন্ত করতে ২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল জেনারেল হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ একটি কমিটি গঠন করেছিল। ওই বছরের ৭ সেপ্টেম্বর প্রতিবেদন প্রকাশ করে তদন্ত কমিটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই কোটি ৮০ লাখ টাকার এমআরআই মেশিন কেনা হয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকায়। একইভাবে ৯৮ লাখ টাকা দামের চারটি কালার ড্রপলার কেনা হয়েছে দুই কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়ে।
জানা যায়, রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য জার্মানির একটি ব্লাড ওয়ার্মার মেশিন কেনা হয় ৯ লাখ ৩২ হাজার টাকায়। বাজারে এ ধরনের মেশিনের মূল্য ১৫ হাজার টাকার বেশি নয়। কান পরীক্ষার জন্য অটোস্কোপ মেশিনের বাজারে দাম পড়ে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা। কিন্তু হাসপাতালে অটোস্কোপ মেশিন সরবরাহ করা হয় তিন লাখ ৭০ হাজার টাকায়।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক থাকাকালে (২০১৪-১৫ ও ২০১৫-১৬) প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও ৮৬ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০ টাকার চিকিৎসা সরঞ্জাম ও যন্ত্র কেনার অভিযোগ ওঠে সরফরাজ খানের বিরুদ্ধে। হাসপাতালের ভারী যন্ত্রপাতি কেনার সময় উচ্চমূল্যের কারণে সরকারের আট কোটি ২৭ লাখ ৮৯ হাজার ৯১০ টাকার সমপরিমাণ আর্থিক ক্ষতি করা হয়েছে বলে অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন থাকাকালে (২০১৩-১৫) নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে সরঞ্জাম কেনায় এক লাখ ৫৮ হাজার ৬২৫ টাকা এবং ছাড়পত্র নবায়ন ফির ওপর এক লাখ ৩৯ হাজার ৮০০ টাকার ভ্যাট আদায় না করার আপত্তি তোলা হয়।
মুহাম্মাদ হুমায়ুন/বার্তাবাজার/এ.আর