আশ্রয় প্রকল্পের ঘরে তালা, থাকেন না বরাদ্দপ্রাপ্তরা

জামালপুরের মেলান্দহ উপজেলায় মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের বেশির ভাগ ঘরেই তালা ঝুলছে। থাকছেন না বরাদ্দ প্রাপ্তরা। তবে বরাদ্দ পাওয়ার পরও যারা এসব ঘরে থাকছেন না, তাদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪০ টি ঘরের মধ্যে ১৬ টি ঘরে বসবাস করে লোকজন। ফাঁকা ঘরে এখন খড়কুট ও গরু-ছাগল রাখা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর এলাকায় মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার আশ্রয়ন প্রকল্পের এক পাশে ১২ টি অন্য পাশে ২৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। ১২ টির মধ্যে ৬টি পরিবার বসবাস শুরু করলেও এখনও ঘরে উঠেনি ৬টি পরিবার। বাকী ৬ টি ঘর তালা বন্ধ। অপর পাশে ২৮ টি ঘরের মধ্যে ১০টি ঘরের মালিক পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও ১৮টি ঘর তালাবদ্ধ। নির্মাণ করা কয়েকটি ঘরের দেওয়াল ও মেঝেতে ফাটল ধরেছে।

আশ্রয়ন প্রকল্পে বসবাসকারীরা জানান, তালা বন্ধ করে বেশির ভাগ লোকজনই চলে গেছে। তাদের নিজ বাড়িতে কেউ থাকেন কেউ বা ঢাকাতে। এমন ও আছেন শুধু মাত্র ঘরে তালাবদ্ধ করে চলে গেছেন আর কখনো আসেনি। এ জন্যই বেশির ভাগ ঘরই ফাঁকা পড়ে আছে। জায়গা কম থাকলেই কেউ ফাঁকা ঘর গুলোতে কেউ খরকুট কে গরু ছাগল বাঁধছেন।

ওই আশ্রয়ন প্রকল্পে ঘরে দেওয়াল ফাটল ধরেছে ও ঘরের মাঝে ইঁদুরের গর্ত দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন আশ্রয়নের বাসিন্দারা।

আশ্রয়ণ কেন্দ্রে বসবাসকারী আল আমিন বলেন, যাতায়াতের রাস্তা পথ নেই, মানুষের বাড়ির উপর দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। বৃষ্টি হলে অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয়। পানি জমে যাতায়াত করাসহ আরো ও অনেক সমস্যার বেশি সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক নারী বলেন,যারা ঘর পেয়েও সেখানে থাকছেন না তাদের আগেই থেকেই বড় বড় ঘরবাড়ি রয়েছে। তাই তারা এসব ঘর নামের মুরগির খুঁপিতে থাকছেন না। শুধু দখলে রেখেছেন মাত্র। এই এলাকাতেই ভূমিহীন অনেকে আছে।

আরো একজন বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের পাশেই বসবাসকারী এক নেতার দুই ছেলের নামে এ প্রকল্পে দুইটি ঘর বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু, তারা সেখানে কেউ থাকেন না। কারণ তাদের আগে থেকেই বড় বড় চৌরী ঘর রয়েছে। রয়েছে দশ-বারোটি খানেক গরু মহিষ। বিঘায় বিঘায় আবাদী জমি। তাই, তারা ওমন ছোট ঘরে বসবাস করতে স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন না।

শ্যামপুর এলাকার স্থানীয়দের দাবি, আশ্রয়ন প্রকল্পে যারা ঘরে নিয়ে বসবাস করে না । তাদের পরিবর্তিতে এলাকায় আরও অনেক ভূমিহীন ও দরিদ্র লোকজন রয়েছে। তাদেরকে ওই ঘরগুলো মালিকের পরিবর্তন করে দিয়ে নতুন প্রকৃত দরিদ্র ও ভূমিহীনদের দেওয়ার জন্য।

এদিকে উপজেলার চরপলিশা এলাকায় আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের অভিযোগ, সকল সুযোগ সুবিধা থাকলেও যাতায়াতের রাস্তা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। প্রকল্পের ২৫টি ঘরের মধ্যে মধ্যে মাত্র চার টি টিউবওয়েল দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত টিউবওয়েল না থাকায় ভোগান্তির কথাও বলেন।

মোঃ আজগার আলী নামে এক বলেন, রাস্তা না থাকলে ক্ষেতের আইল দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। এই আশ্রয়ন প্রকল্পে পরে এক বছর ধরে থাকতেছি। এই শীতের মধ্যে আশ্রয়ন প্রকল্পের কেউ একটা লোক কারো কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাইনি। শীতের মধ্যে খুব কষ্টে থাকতে হচ্ছে।

এ ব্যাপারে মেলান্দহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শফিকুল ইসলাম বলেন, “আশ্রয়ন প্রকল্পে বিদ্যুৎসহ সকল সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া ঘরের উপকারভোগীদের বিষয়ে তথ্য নেওয়া হয়েছে। “যারা ঘরগুলোতে থাকতে চায় না তাদের তাদের বরাদ্দ বাতিল করে নতুনদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। আর যাতায়াতের সমস্যা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ‌সমাধান করা হবে।

ইমরান/বার্তাবাজার/এম আই

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর