হারিয়ে যাচ্ছে খেজুরের রস

বাংলাদেশ বৈচিত্র্যময় এক আবহাওয়ার দেশ। এর মধ্যে অন্যতম শীতকাল৷ শীত এলেই সবার আগে সামনে আসে খেজুর গাছ আর গাছ থেকে রস সংগ্রহকারী গাছিরা। শীতের সাথে রয়েছে খেজুর রসের এক অপরূপ যোগাযোগ। বর্তমানে এ শীতকালে কালের বিবর্তনে সময়ের পরিক্রমায় গাছ ও গাছির সংকটে নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা থেকে বিলুপ্তির পথে মনোমুগ্ধকর ঘ্রাণ সমৃদ্ধ খেজুরের রস। আগে শীতের মৌসুম আসলে ব্যস্ত সময় পার করতেন দুর্গাপুরের খেজুরের রস সংগ্রহকারী গাছিরা।

এ খেজুরের রসের মনমুগ্ধকর ঘ্রাণে সকাল হলেই শিশু, কিশোর, যুবক ও বৃদ্ধারা মিলে গাছের তলায় ঝড়ো হতো। গ্রাম-বাংলার প্রতি ঘরে ঘরে খেজুরের রস দিয়ে পিঠা, পায়েস, রসের গুড় দিয়ে ভাপা পিঠাসহ হরেক রকম পিঠাপুলির মহোৎসব চলতো। সেইসব দৃশ্য এখন আর তেমন চোখে পড়ে না। আগের মতো রাস্তার দু’পাশে দেখা মিলে না সারি সারি খেজুর গাছ। গ্রামের রাস্তাগুলো সংস্কার ও নতুন করে খেজুর গাছ রোপনে মানুষের অনীহার কারণে গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যবাহী খেজুর গাছ ও খেজুরের রস।

উপজেলা ঘুরে দেখা মিলল বিরিশিরি ইউনিয়নের বাড়ইকান্দি গ্রামের কৃষক মোঃ আব্দুল লতিফের সঙ্গে। উনার বসতভিটার আঙিনায় রয়েছে ১৬টি খেজুর গাছ। তিনি জানান, একসময় চট্টগ্রামে গাছি হিসেবে কাজ করতেন। ২০ বছর আগে নিজের গ্রামের বাড়িতে এসে খেজুরের গাছ রোপন করেন । এখন তার এক একটি গাছের বয়স আনুমানিক ১৫-২০ বছর। বর্তমানে খেজুরের রস নামিয়ে হাট-বাজারে বিক্রি করে কোন রকমের সংসার চালান। প্রতিদিন গড়ে ২৫ কেজি করে খেজুরের রস গাছ থেকে পান। বর্তমানে এই শীত মৌসুমে এটাই তার আয়ের প্রধান উৎস। অন্য সময় তিনি কৃষি কাজ করেন। সরকারি ভাবে সহযোগিতা পেলে ব্যাপক পরিসরে খেজুরের বাগান করতে আগ্রহী কৃষক আব্দুল লতিফ।

এদিকে খেজুর গাছের সংখ্যা কমে যাওয়ার একাধিক কারণ আছে বলে মনে করেন অভিজ্ঞ মহল ও গাছিরা। প্রথমত পরিবেশ দূষণ ও নগরায়ন। এছাড়া আরও একটা অন্যতম কারণ হলো গ্রামীণ রাস্তা প্রশস্তকরণের কারণে রাস্তার দুইপাশে খেজুর গাছ কর্তন। কোথাওবা আবার ইটের ভাটায় জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে খেজুর গাছ। আগে দুর্গাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে প্রচুর খেজুর গাছের দেখা মিলতো। যা এখন প্রায় বিলুপ্তির পথে । কিছু কিছু গ্রামে খেজুরগাছ থাকলেও সঠিকভাবে তা পরিচর্যা করা হচ্ছে না। এ অবস্থায় আমাদের গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি।

গ্রাম পর্যায়ে খেজুর গাছগুলো শনাক্ত করে এগুলো রক্ষার দায়িত্ব নিতে হবে; খেজুর বাগান তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করতে হবে এবং খেজুর গাছিদের আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করতে হবে। তা না হলে অতিশীঘ্রই খেজুর গাছ ও খেজুরের রস বইয়ের পাতায় আর মানুষের মুখের গল্প হয়ে থাকবে।

কবি সজীম শাইন বলেন, বর্তমানে যে হারে খেজুরগাছ হারিয়ে যেতে বসেছে, হয়তো এক সময় আমাদের এলাকা থেকে খেজুরগাছ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হলে আমাদের সবার উচিত বেশি করে খেজুরগাছ লাগানো এবং তা যত্ন সহকারে বড় করা। যদি আমরা আমাদের এই হাজার বছরের ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের জন্য ধরে রাখতে চাই তাহলে এই কাজে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিত।

এ ব্যাপারে সুসং আদর্শ বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক এ কে এম ইয়াহিয়া বলেন, আমার স্কুলের অনেক ছাত্র-ছাত্রী খেজুরের রস সম্পর্কে শুনেছে কিন্তু খেজুরের রস খেতে কেমন তা জানেন না কারণ তারা কখনোই খেজুরের রস চোখে দেখেনি।

তিনি আরও বলেন, গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের উদ্যেগ নেয়া উচিত। আমাদের সকলকেও খেজুর গাছ রোপণ করতে হবে।

এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, খেজুর গাছ রোপনে সরকারি কোন প্রকল্প নেই। তবে কোন কৃষক যদি খেজুর গাছ রোপণের আগ্রহ প্রকাশ করে তাহলে কৃষি অফিস থেকে সকল ধরনের পরামর্শ দেওয়া হবে।

রাজেশ/বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর