কুড়িগ্রামে শৈত্য প্রবাহ ও ঠান্ডায় জন-জীবন বিপর্যস্ত

‘ঠান্ডাতে হাত পাও লাইগতেছে, হামাক কাইয়ো কিছু দেয় না। চরোত বাড়ী হওয়ায় খুব কষ্ট হবার নাইগছে। গরু-ছাগল নিয়ে খুব কষ্টে আছি’। ঠান্ডায় কেঁপে কেঁপে এমনি করে কথাগুলো বলছিলেন, পাঁচগাছি ইউনিয়নের ছড়ার পাড় এলাকার বাসিন্দা বাচ্চু মিয়া (৬৭)।

ঘন-কুয়াশা আর কনকনে ঠান্ডায় উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে শীতে জন-জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্য প্রবাহ। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে জনপদ। বৃষ্টির মত টিপ টিপ করে পড়ছে কুয়াশা। শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

ঘন কুয়াশার সাথে উত্তরীয় হিমেল হাওয়া কনকনে ঠান্ডার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্টে দিন কাটছে জেলার দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষজন। খড়কুঁটো জ্বালিয়ে অনেকে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন । শীত বস্ত্রের অভাবে ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়ছেন জেলার সাড়ে চার শতাধিক চর ও দ্বীপ চরের মানুষসহ শিশু ও বৃদ্ধরা। একই পরিস্থিতি নদ-নদী সংলগ্ন বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষজনেরও। শীতে গবাদি পশুগুলিকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। শীত উপেক্ষা করেই জীবন জীবিকার সন্ধানে ছুটে চলছেন শ্রমজীবী মানুষজন। সরকারি ও বেসরকারিভাবে শীত বস্ত্র বিতরণ করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। তা জুটছে না অনেকের ভাগ্যে।

সদর উপজেলার নওয়াবস এলাকার বাঁধে বসবাসরত ভানুমতি (৬৫) বলেন, ‘হামাক কম্বল টম্বল কোন নেম্বর চেয়ারমেন দেয় নাই। হেনে শীত যাবাইছে এতো, কই কম্বল টম্বল কোন কিছুই দেয় না। আইসেও না, দেয়ও না। শুনি বলে কম্বল আইচ্ছে। কই পুরান নেম্বরও না কয়, নয়া নেম্বরও না কয়’।

পাঁচগাছি ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের ট্রাক শ্রমিক নওশেদ আলী (৬৮) বলেন, ‘ঠান্ডাত হাত পাও শেংড়ে, হাত পাও ধরে, অবস হয়। গাড়ীত কাজ করি। এই ঠান্ডার মধ্যে কাজ করতে খুব অসুবিদে হয়। ঠান্ডার মধ্যে অসুবিদে হইলে আর কি করি পেট বাঁচা নাগবে’।

শুক্রবার সকালে জেলার আরো কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকেই ঘন কুয়াশার চাদরে ঢেকে গেছে পথ ঘাট। এদিকে শীতের কারণে কাজে যোগ দিতে ঘর থেকে বের হওয়া শ্রমজীবীরা পড়েছেন বিপাকে।

সকাল থেকেই কাজের সন্ধানে শহরমুখী রিকশা শ্রমিক, ভ্যান শ্রমিক, ঘোড়ার গাড়ি চালক, দিনমজুর ও ব্যবসায়ীদের কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করেই দূর্ভোগ নিয়েই শহরে আসতে দেখা গেছে। শীত বস্ত্রের অভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছেন চরাঞ্চল সহ বাঁধ সমুহে আশ্রয় নেয়া মানুষজন।

কুড়িগ্রাম সদরের উত্তর নওয়াবস এলাকার মসজিদ মুছল্লী মোঃ আব্দুল আজিজ (৫০) বলেন,’প্রচন্ড শীতের কারনে নামাজ পড়তে যাওয়াটা খুব কষ্টকর। ঠান্ডায় হাত পা কামড়ে ধরে। খুব কষ্ট হয় ।’

জেলা প্রশাসকের ত্রাণ ও পূনর্বাসন কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হাই সরকার বলেন,”সরকারিভাবে জেলার নয়টি উপজেলার জন্য বরাদ্দের ৩৫ হাজার ৭শ কম্বল ও ১ কোটি ৮ লাখ টাকার শীত বস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও বেসরকারি সংগঠন গুলি যেসব শীত বস্ত্র দিয়েছে সেগুলিরও বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।”

কুড়িগ্রামের রাজারহাটে অবস্থিত কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন,”কুড়িগ্রাম জেলা জুড়ে মৃদু শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। যা পুরো জানুয়ারি জুড়ে অব্যাহত থাকতে পারে।

সুজন মোহন্ত/বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর