‘ভেন্ডাবাড়ী উপজেলা’ বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় কাটেনি এলাকাবাসীর

রংপুরের ভেন্ডাবাড়ীকে পৃথক উপজেলা গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাব প্রেরণের পর ৫ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও সরকারিভাবে আজও বাস্তবে ভেন্ডাবাড়ীকে পুর্নাঙ্গ উপজেলা ঘোষনা করা হয়নি। ফলে ওই এলাকার ২লাখ মানুষের প্রাণের দাবির যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে আজও সংশয় কাটেনি। তারা জানেন না কবে এ দাবির বাস্তবায়ন ঘটবে?

একাধিক সুত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলার বৃহত্তম দু’টি উপজেলা পীরগঞ্জ ও মিঠাপুকুর। পীরগঞ্জ উপজেলায় ১৫টি ইউনিয়ন এবং মিঠাপুকুর উপজেলায় ১৭টি। এ ২টি উপজেলার ভৌগলিক দিক থেকে পীরগঞ্জের ১নং চৈত্রকোল, ২নং ভেন্ডাবাড়ী, ৩নং বড়দরগাহ, ৪ নং কুমেদপুর ও ৬ নং টুকুরিয়া এবং মিঠাপুকুরের উপজেলার ১০ নং বালুয়া মাসিমপুর, ১১ নং বড়বালা, ১২ নং মিলনপুর ও ১৩ নং শাল্টি গোপালপুর ইউনিয়নগুলো উপজেলা সদর থেকে নুন্যতম ১৫/২০ কিঃ মিটার দুরে অবস্থিত। ফলে এসব ৯ ইউনিয়নবাসীকে উপজেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়তই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এছাড়া আইন শৃস্খলা পরিস্থিতিসহ সকল ক্ষেত্রে উন্নয়ন বাঁধাগ্রস্থ হচ্ছে।

ভেন্ডাবাড়ী এলাকার প্রায় ২ লাখ মানুষ এ অঞ্চলে একটা উপজেলা গঠনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে প্রায় দেড় যুগ পুর্বে গঠন করেছিলেন ভেন্ডাবাড়ি উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটি। এ কমিটির সঙ্গে এলাকার হাজার হাজার জনগন দীর্ঘ দিন ধরে তাদের দাবি আদায়ের লক্ষে মিটিং, মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করে আসছে। সেই সাথে যোগাযোগ করছেন সরকারের উচ্চ পর্যায়ে। এ দিকে অব্যাহত দাবির প্রেক্ষিতে বিগত ১৯৯৫ ইং সনে তৎকালীন বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আব্দুল মতিন চৌধুরী ভেন্ডাবাড়িতে এসে এক জনসভায় ভেন্ডাবাড়িতে জরুরী ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপনের ঘোষনা দেয়াসহ ভেন্ডাবাড়িকে পুর্ণাঙ্গ উপজেলা ঘোষনার আশ্বাস দেন। এ ঘোষনার পর ভেন্ডাবাড়িতে পৃথক পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র স্থাপিত হলেও ভেন্ডাবাড়ি বাসীর প্রত্যাশিত উপজেলার দাবিটি আজও পুরন হয়নি।

এদিকে পীরগঞ্জের পুত্রবধু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিগত সংসদ নির্বাচনী প্রচারনায় পীরগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে এক জনসভায় ভেন্ডাবাড়িকে নতুন উপজেলা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। তাঁর প্রতিশ্রুতিতে অনেকটা আশার আলো দেখেছিলেন ভেন্ডাবাড়ি এলাকাবাসী।

প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ভেন্ডাবাড়ি উপজেলা গঠনের লক্ষে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ, নিকার অধি শাখা ২০১৫ সালের ১০জুন ৪৬ (২০০) তারিখে জারিকৃত এক পরিপত্র এবং উপজেলা পরিষদ আইন-২০০৯ অনুসরণ করত সুস্পষ্ট মতামতসহ পুর্ণাঙ্গ প্রস্তাব দাখিলের জন্য জেলা প্রশাসক রংপুরের ০৩/১২/২০১৫ ইং তারিখের এক স্বারকে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ৩ সদস্যের ভেন্ডাবাড়ি উপজেলা গঠন প্রস্তাব প্রেরণ কমিটি গঠন করেন। কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন তদানিন্তন উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মাসুদার রহমান, সদস্য সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মাসুদ রানা সরকার ও পরিসংখ্যান কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ফারুক হোসাইন।

ওই কমিটি ১০০দিনের মধ্যে মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ (নিকারশাখা) এর ২৪/১০/২০০৪ মপবি/নিকার/ ১(৩)/ ২০০৪/১৮৫ (২৫০) নং স্মারক ও মন্ত্রী পরিষদ বিভাগ (নিকার শাখা) এর ১০/০৬/২০১৪ এর ০৪.০০.০০০০.২১২.০৬.০০১.১৪.৪৬ (২০০) নং স্মারকে জারিকৃত পরিপত্রের আলোকে ভেন্ডাবাড়িকে নতুন উপজেলা গঠনের লক্ষে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রস্তাবনা পেশ করেন।

গত বছরের মার্চে ভেন্ডাবাড়ি উপজেলা গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাব কমিটি কর্তৃক প্রেরিত প্রস্তাবনায় বলা হয়- জাতীয় সংসদের নির্বাচনী এলাকার ২৩, রংপুর-৫ মিঠাপুকুরের ১১নং বড়বালা, ১০নং বালুয়া মাসিমপুর, ১২নং মিলনপুর, ১৩নং গোপালপুর ও রংপুর-৬ পীরগঞ্জের ১নং চৈত্রকোল, ২নং ভেন্ডাবাড়ি, ৩নং বড়দরগা, ৪নং কুমেদপুর, ৬নং টুকুরিয়া ইউনিয়নসহ ৯টি ইউনিয়ন নিয়ে ভেন্ডাবাড়ি উপজেলা গঠিত হবে। নবগঠিত উপজেলার আয়তন ২৩৫.১২ বর্গ কিলোমিটার, জনসংখ্যা ১ লাখ ৯৬ হাজার ২৮০জন।

এ রিপোর্ট প্রদানের পর দীর্ঘ ৬ বছর অতিবাহিত হলেও আজও কোন সুস্পষ্ট ঘোষনা দেয়া হয়নি। এলাকাবাসী প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে এ সংক্রান্ত সুসংবাদের প্রহর গুনছেন।

মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের চেযারম্যান আবুল কাসেম এর সাথে এ ব্যাপারে কথা হলে তিনি জানান, আমরা ইউনিয়ন বাসীর মনোভাব যেটি বুঝতে পেরেছি তাদের এ ব্যাপারে একটু অনিহা আছে।

একই উপজেলার মিলনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হালিম চৌধুরী জানান, আমরা যেহেতু আগে থেকে মিঠাপুকুরে আছি তাই একদিক দিয়ে সেটা ভাল। অপরদিকে ভেন্ডাবাড়ী যেহেতু কাছাকাছি এদিক দিয়ে সেটা হলে আরও বেশি ভাল।

পীরগঞ্জের ভেন্ডাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাদেকুল ইসলাম বলেন, যেহেতু ভেন্ডাবাড়িকে উপজেলা করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি রয়েছে সেহেতু আমি আশা করি ভেন্ডাবাড়ি এলাকার সামগ্রিক উন্নয়নের স্বার্থে সরকার দ্রুত ঘোষনার মাধ্যমে এ এলাকার মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা পুরন করবেন।

ভেন্ডাবাড়ি উপজেলা গঠন সংক্রান্ত প্রস্তাব প্রেরনকারী কমিটির আহবায়ক তদানিন্তন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মাসুদার রহমান জানান, রিপোর্ট দেয়ার পর আমার কাছে আর এ সংক্রান্ত কোন সংবাদ নেই।

পীরগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সাধারন সম্পাদক ও পীরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র তাজিমুল ইসলাম শামীম জানান, যেহেতু এটি প্রধানমন্ত্রীর একটা পদক্ষেপ, তাই একটু সময় লাগলেও আশা করি দ্রুত এর বাস্তবায়ন হবে।

পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মন্ডল বার্তা বাজারকে বলেন, মিঠাপুকুরের যে ৪ টি ইউনিয়নকে সম্পৃক্ত করার কথা বলা হচ্ছে ওই ইউনিয়নবাসী ও মিঠাপুকুরের সংসদ সদস্য একটু চেষ্টা করলে কাজটা সহজ হবে।

ভেন্ডাবাড়ি এলাকার ৯ ইউনিয়নবাসীর অনেকের কিছুটা দ্বি-মত থাকলেও ভেন্ডাবাড়ি উপজেলা ঘোষিত হলে এই এলাকার বিশাল জনগোষ্ঠির সামগ্রিক উন্নয়ন তরাম্বিত হবে বলে তাদের বিশ্বাস। তাই তারা আশা করছেন এ সরকারের আমলেই ভেন্ডাবাড়ীকে পুর্নাঙ্গ উপজেলা ঘোষনার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন।

আনজারুল/বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর