হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর রসের ঐতিহ্য

শীতের সকাল আর খেজুরের রস দু’য়ে মিলে ছিল একাকার। গ্রাম-গঞ্জের রাস্তার পাশে ছিল সারি সারি খেজুর গাছ। শেষ বিকালে গাছে হাঁড়ি বসাতো গাছিরা। সকাল বেলা হাড়ি হাড়ি খেজুর রস নিয়ে বাড়ি বাড়ি হাকডাক দিতেন। ঘরে ঘরে চলতো শীতের পিঠাপুলির উৎসব। এক দশক আগেও এমন চিত্র চোখে পড়তো পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলা জুড়ে।

খেজুর রস সংগ্রহ করে জীবিকা নির্বাহ করতে শতশত গাছি। এখন আর এমন দৃশ্যের দেখা মিলে না। হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর রসের ঐহিত্য। খেজুর রসের ঐহিত্য হারিয়ে যাওয়ার প্রধান কারন হলো গ্রামের রাস্তাগুলো সংষ্কার এবং নতুন করে খেজুর গাছ রোপনে মানুষের আগ্রহের অভাব। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হাতে গোনা কয়েকজন ধরে রাখার চেষ্টা করছেন এ ঐতিহ্য ধরে রাখার। তবে সেই আগের দিনের মত জৌলুস নাই। খেজুর গাছে মাটির বদলে প্লাস্টিকের বোতল বেঁধে রস সংগ্রহ করা হচ্ছে। নেই গাছির সেই সাজগোজ।

বুধবার (৯ জানুয়ারি) সকালে উপজেলার দাশপাড়া ইউয়িনের চর আলগী গ্রামে রাস্তার পাশে দেখা যায় খেজুর গাছে প্লাস্টিকের বোতল ঝুলছে। স্কুল পড়ুয়া এক শিক্ষার্থী গাছে বসে রস খাচ্ছে।

ওই গ্রামের গাছি মো. আলাউদ্দিন (৬৬) জানান, ‘দাশপাড়া ইউয়িনের চরআলগী গ্রামসহ আশপাশের কয়েকগ্রামে এক সময় শীত এলেই গাছি হিসাবে পরিচিত ছিলেন। শতাশিক খেজুর গাছ কাটতেন তিনি। গ্রামে গ্রামে রস বিক্রি করতেন রস। এখনো তিনি ঐহিত্য ধরে রাখার চেষ্টা করছেন। তবে এখন এলাকায় তেমন গেছুর গাছ নেই। ৫/৬ টা গাছে হাড়ি বসান। আর বয়সও হয়েছে তাই আগের মত গাছ কাটেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গ্রামাঞ্চলের পুরানো কাঁচা রাস্তা সংস্কার ও প্রস্থকরণ, বনাঞ্চল ধ্বংস ও ইটের ভাটায় খেজুর গাছের কদর বেশি থাকায় দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে খেজুর গাছ। অপরদিকে গাছি পেশায় নতুন করে কেউ না আসায় হারিয়ে যাচ্ছে ঐহিত্য। এমন চলতে থাকলে একবারেই হারিয়ে যাবে খেজুর রস।

উপজেলার বৃহৎ কালাইয়া বন্দরের মিঠা ব্যবসায়ী মো. আলম মিয়া ও মো. এছাহাক ফরিক জানান, ‘আগে সকাল হলেই গাছিরা বাজারে হাড়ি কলস ভরে রস নিয়ে আসতেন। অনেকে আবার রস জ্বাল দিয়ে মিঠা তৈরি করে বাজার বিক্রি করতে নিয়ে আসতেন। এখন মাঝে মধ্যে দুই একজন কয়েক হাড়ি রস নিয়ে আসেন। যার দাম থাকে আকাশচুম্বি। এক হাড়ি রস বিক্রি করা হয় ২০০টাকা করে।

কালাইয়া আলী আকবর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘খেজুর রসের স্বাদ ভোলার মত না। শীতের পিঠাপুলি মানেই খেজুর রস। তবে এখন আর রস পাওয়া যাচ্ছে না। গ্রামের পুরানো রাস্তা সংস্কার, ঘর বাড়ি নির্মাণের কারনে খেজুর গাছ নিধন করা হচ্ছে। নতুন করে আর রোপণ করা হচ্ছে না। সরকারি ভাবে এসব গাছ সংরক্ষনের জন্য উদ্দ্যোগ নেওয়া উচিত।

এবিষয়ে বাউফল উপজেলা কৃষি অফিসার মো. মরিুজ্জামান হিমু বলেন, ‘তাল ও খেজুর গাছ রোপণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এবছর প্রায় ১হাজার তালের বীজ রোপণ করা হয়ে। তবে খেজুর গাছের ওভাবে বীজ বা চারা না পাওয়ায় রোপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে খেজুর গাছ রোপন ও সংরক্ষণে কৃষকদের উৎসাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

হান্নান/বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর