সিন্ডিকেটের গুজবে হুমকিতে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার

বিগত ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে কলিং ভিসা স্থগিত হওয়ার পর মালয়েশিয়ার শ্রম বাজার নিয়ে আলোচনা – সমালোচনা ও গুজব কখনোই পিছু ছাড়েনি। এই শ্রম বাজার নিয়ে কৌতুহল একটু বেশি সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে। তার কারণ বাংলাদেশী সব শ্রেনী পেশার মানুষের আদর্শ কর্মস্থান মালয়েশিয়া। এখনোও বৈধ অবৈধ মিলিয়ে ১০ থেকে ১২ লাখ বাংলাদেশী বিভিন্ন খাতে কর্মরত রয়েছে। এখানে শুধু শ্রম বিক্রি করা নয় ব্যবসা, দোকানপাট, চাকুরী, শিক্ষা গ্রহন, শিল্প কারখানা স্থাপনসহ মাই সেকেন্ড হোম করে স্থায়ীভাবে করা সহজলভ্য। তাই শত বাঁধা বিপত্তি পেড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের ২য় বৃহত্তম মালয়েশিয়া শ্রমবাজার।

মালয়েশিয়ায় কলিং ভিসায় কর্মী যেতে গত ১৯ ডিসেম্বর মালয়েশিয়া-বাংলাদেশ যৌথভাবে সমঝোতা স্মারক চুক্তি স্বাক্ষর সম্পন্ন হয়েছে। এর পরে সম্প্রতি একটি গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। বলা হচ্ছে বাংলাদেশের ২৫ রিক্রুটিং এজেন্সি ও তার সাথে আরো ২৫০ সাব এজেন্ট মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাবে। বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি গণমাধ্যম এই খবরটি প্রকাশ করেছে। এরপরে শুধু বাংলাদেশেই নয় মালয়েশিয়ায় এটা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তবে এই ২৫ এজেন্সির সত্যত্যা এখন পর্যন্ত কোন দায়িত্বশীল মন্ত্রণালয় থেকে স্বীকার করা হয়নি।

শ্রম বাজার সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা বলছেন এ ধরনের গুজবের জেরে এই শ্রমবাজারটি পুরোপুরি শুরু হতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে এমনকি স্থগিতের হুমকিতেও পড়তে পারে। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী মিস্টার এম সারাভানানের কড়া সমালোচনা করেছেন দেশটির সুশীল সমাজ। বাংলাদেশের এই ২৫ এজেন্সির বিষয়ে তিনিও প্রশ্নের মুখে পড়েছেন।

শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) সকালে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী মোঃ ইমরান আহমেদ ২৫ ও ২৫০ সিন্ডিকেট এর কথা উড়িয়ে বলেন, কোন প্রক্রিয়ায় এবং কত টাকার খরচায় মালয়েশিয়ায় কর্মী যাবে এই বিষয়টি চুড়ান্ত করতে মালয়েশিয়া – বাংলাদেশ যৌথভাবে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ঐ বৈঠকের পর বলা যাবে আসলে কোন প্রক্রিয়া কর্মী মালয়েশিয়ায় যাবে। সমঝোতা স্মারক এমওইউ চুক্তিতে কোথাও বলা হয়নি নিদিষ্ট রিক্রুটিং এজেন্সি কর্মী পাঠাবে, সেখানে বলা হয়েছে বাংলাদেশের বৈধ যে কোন এজেন্সির মাধ্যমে অথবা মালয়েশিয়া যাদের পছন্দ হয় তাদের মাধ্যমে কর্মী নিবে।

তিনি আরো বলেন, যেহেতু এখনও সেই চুড়ান্ত বৈঠক হয়নি তাহলে সিন্ডিকেট এর প্রশ্ন আসছে কেন? আর আপনারা এসব গুজবে কান দেন কেন?

সম্প্রতি মালয়েশিয়ার জাতীয় গণমাধ্যম “দ্য ফ্রি মালয়েশিয়া টুডে” মানবসম্পদ মন্ত্রী মিস্টার সারাভনান এর কড়া সমালোচনা করে এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে বাংলাদেশের সাথে যে এমওইউ চুক্তি করা হয়েছে Saravanan’s MOU secrecy is both shocking and silly!! এবং সেখানে কি আছে সেটা জনসমক্ষে উপস্থাপন করার দরকার। তারা বলছেন বাংলাদেশ থেকে ২৫ এজেন্সি ও ২৫০ সাব এজেন্ট মালয়েশিয়ায় কর্মী প্রেরণ করবে এই বিষয়টি যেন জনসমক্ষে ক্লিয়ার করা হয়। দেশটির তেনাগানীর (মানবাধিকার সংস্থা) যোসেফ পল বলেছেন, মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তারা শ্রমিকদের জিম্মি করে জোর পূর্বক যদি কাজ আদায় করে তাহলে নিয়োগকর্তাদের বিরুদ্ধে কি ব্যাবস্থা নেওয়া হবে সে ব্যাপারে (এমওইউ) সমঝোতা স্মারকে কিছুই বলা হয়নি।

যোসেফ পল আরো বলেন, মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা কর্তৃক শ্রমিকদের জিম্মি করে জোর করে শ্রম আদায়ের ঘটনা আগেও ঘটেছে, তাই এই বিষয়ে নীতিমালা দরকার। এদিকে বাংলাদেশ থেকে কলিং ভিসায় কর্মী নিতে বিরোধিতা করছে কিছু স্থানীয় এনজিও এবং কনজিউমার এসোসিয়েশন।

কনজিউমার এসোসিয়েশন এর চেয়ারম্যান ইউসুফ আজমি কর্তৃপক্ষের কাছে এক স্মারক লিপি জমা দিয়ে বলেন, আমাদের দেশে করোনাকালে লাখ লাখ মানুষ তাদের কাজ হারিয়েছে, তাই বিদেশ থেকে কর্মী আমদানি করা হলে মালয়েশিয়ানরা কাজ পাবে না।

তবে এসব আলোচনা – সমালোচনার জবাবে মানবসম্পদ মন্ত্রী মিস্টার সারাভনান বলেন, আমি সরকারে উপমন্ত্রী হিসেবে ১৫ বছর ধরে কাজ করেছি। আমাদের দেশের স্বার্থ সুরক্ষা করেই এমওইউ চুক্তি সম্পন্ন করা হয়েছে। কিছু মানুষ এই চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে তারা হলেন অতি উৎসাহী। তাদের জানাতে চাই ২০১৮ সালে পাকাতান হারাপানের শাসিত সরকারের সময় বাংলাদেশের থেকে কলিং ভিসায় কর্মী নেওয়া স্থগিত করা হয়েছিল। আমরা সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে নতুন করে শ্রমিক নিয়োগে সম্মত হয়েছি মাত্র, এর মধ্যে কি আছে? এমন বিশেষ কিছু নেই। আমরা আরো সমীক্ষা করে মালয়েশিয়ায় কর্মীর চাহিদাপত্র তৈরীর জন্য অনলাইন আবেদন চালু করা হয়েছে। সেই চাহিদা অনুসারে কর্মী নিয়োগ করা হবে।

মামুন/বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর