গণঅধিকার পরিষদ কি রাজনীতির ‘তৃতীয় শক্তি’?

অনেকদিন থেকেই তৃণমূল থেকে শুরু করে সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক মহলসহ নানা জায়গায় ‘রাজনীতিতে এবার তৃতীয় ধারার উত্থান জরুরি’ কথাটি উচ্চারিত হয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে খুবই পরিচিত একটি পদদ্বৈত ‘তৃতীয় শক্তি’। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিকল্প শক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হয় ‘তৃতীয় শক্তি’ কথাটি। দেশে তৃতীয় বা বিকল্প ধারা গড়ে তোলার প্রচেষ্টা দীর্ঘদিনের এবং দিনে দিনে এর প্রাসঙ্গিকতা অধিক অনিবার্য হয়ে উঠছে বলেও অনেকে মনে করেন। কিন্তু বাংলাদেশের নানা রাজনৈতিক সমীকরণ ও বাস্তবতায় বারবার মার খেয়েছে বা ব্যর্থ হয়েছে সেই অনিবার্যতা। সাম্প্রতিক সময়ে অনেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়ার নতুন দল গণঅধিকার পরিষদের মাঝে ‘তৃতীয় শক্তি’র টিমটিমে আলো দেখতে পাচ্ছেন। তবে অনেকে এর উল্টোটাও বলছেন। ফলে রাজনৈতিক অঙ্গনে ভিপি নুর ও রেজা কিবরিয়ার গণঅধিকার পরিষদকে নিয়ে ধুম্রজালের শেষ হচ্ছে না। অপরদিকে দলটিকে এখনই তৃতীয় শক্তি হিসেবে মনে না করলেও এই দলটির তৃতীয় শক্তি হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ভিপি নূরের রাজনীতি নিয়ে সাধারণ ও তৃণমূলের মানুষের মধ্যে তেমন আগ্রহ না থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এবং তরুণদের মধ্যে যথেষ্ট আগ্রহ রয়েছে। বর্তমানে তরুণ প্রজন্মের মুখে বেশ জোরেশোরেই উচ্চারিত হয় ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নুরের নাম। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতে ছাত্রলীগের রাজনীতি করলেও কোটা বিরোধী আন্দোলন থেকেই পরিচিতি পান তিনি।

সেখান থেকে শুরু হয় তার রাজনৈতিক সংগ্রাম। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) সভাপতি নির্বাচিত হন। এভাবে ধীরে ধীরে মূল রাজনীতিতে নাম লেখান ভিপি নুর। এখন বাঘা বাঘা রাজনৈতিক দলকে হুংকার দিয়ে কথা বলছেন। অন্যদিকে রেজা কিবরিয়া রেজা কিবরিয়া একজন প্রখ্যাত অর্থনীতিবীদ এবং আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে। মাঠের রাজনীতির অভিজ্ঞতা না থাকলেও কূটনৈতিক পাড়ার অনেকেই সাথেই তার যোগাযোগ আছে। ভিপি নুর ও রেজা কিবরিয়া, দুজনই তরুণদের টার্গেট করে এই নতুন রাজনৈতিক দলটি এগিয়ে নিয়ে যেতে চান।

বিশেষ করে ‘কোটাবিরোধী আন্দোলন’ এবং ‘নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের’ মাধ্যমে নূরের ‘ছাত্র অধিকার ফোরাম’ একটি অবস্থান তৈরি করেছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। সেই অবস্থানকেই কাজে লাগিয়ে মূলত রাজনৈতিক মঞ্চে আবির্ভূত হচ্ছেন নূর। ফলে রাজনৈতিকভাবে সচেতন অনেকেই মনে করছেন যে, হয়তো বা ভিপি নূরই দেশে তৃতীয় ধারার রাজনীতি মূলধারায় আনতে পারবে।

অন্যদিকে, বিপরীত কথাও রাজনৈতিক মহলে আলোচনা হচ্ছে। বিষয়টিকে এত সরলীকরণ করতে চাচ্ছেন না অনেক বিশ্লেষক। তারা বলছেন, নূরের এই রাজনৈতিক উদ্যোগের পেছনে আওয়ামী লীগ বা সরকারের একটি মৃদু সমর্থন রয়েছে। আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি না আসে তাহলে যে রাজনৈতিক সমীকরণ এবং মেরুকরণ হবে সেই মেরুকরণ মাথায় রেখেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ভিপি নূরের গণপরিষদ গঠন করা হতে পারে বলেও সন্দেহ করছেন।

তবে নতুন দল প্রসঙ্গে নুর ও রেজা কিবরিয়ার বক্তব্য পরিষ্কার। তারা গণঅধিকার পরিষদ নিয়ে বলছেন যে, এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। তরুণদের নেতৃত্বে তার রাজনৈতিক দল পরিচালিত হবে। যারা নতুন রাজনৈতিক ধারা তৈরি করতে চায়, পজিটিভ চিন্তা করে নতুন রাজনৈতিক দল তৈরি করার জন্য, তাদের সঙ্গে প্রয়োজনে তিনি মিলেমিশে কাজ করবেন। আর যদি সে রকম কাউকে না পান তবে একাই এগিয়ে যাবেন।

বার্তবাজার/আর এম সাফিন

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর