ফ্রিল্যান্সিং বদলে দিয়েছে মোস্তাকিমদের ভাগ্য

ঘরে বসেই বিদেশি সব চাহিদার কাজ সম্পন্ন করছেন। এই কাজের বিনিময়ে পাচ্ছেন অর্থ। তবে এই অর্থ দেশের টাকা নয়। আসছে বৈদেশিক মুদ্রা রূপে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের এই আয় বদলে দিয়েছে বেকার মোস্তাকিম জনিদের ভাগ্য। ঘরে ফিরেছে স্বচ্ছলতা। শুধু মোস্তাকিম জনি একা নন। শুধু গুরুদাসপুরেই তার মতো প্রায় হাজারখানেক যুবক এভাবেই ঘরে বসে ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে প্রতি মাসে শত শত ডলার আয় করছেন। মোস্তাকিম জনির বাড়ি নাটোরের গুরুদাসপুরের সীমান্ত নাছিয়ারকান্দী গ্রামে।

মোস্তাকিম জনির সাথে আলোপ হয় বার্তা বাজারের। তিনি জানান, শুরুতে মাইক্রোসফট অফিস অ্যাপ্লিকেশনের ওপর ক্লাস নিতেন। কিন্তু তাতে দিনাতিপাত হচ্ছিল না। একারণে আয়ের বিকল্প চিন্তা ঘিরে ধরে। সেসময় নতুন করে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্টের মতো কাজ তিনি রপ্ত করেন। এরপর ২০১৭ সালে শুরু হয় তার ফ্রিল্যান্সিং জগতের কর্মজজ্ঞ।

ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রবেশ করে মোস্তাকিম জনি এখন সফল ইনফুলেন্সার এবং উদ্যোক্তা। ঘুঁচেছে সংসারের অভাবও। এখন সংসারের চাহিদা পূরণ করে তিনি নিজের লেখা-পড়ার খরচের যোগানও দেন এই আয় থেকেই। মোস্তাকিম জনি বর্তমানে চট্টগ্রামের হাটহাজারি মাদরাসায় মিসকাতে অধ্যয়ন করছেন। পাশাপাশি মোস্তাকিম জনি ডিজিটাল এয়ার নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালু করেন। ডিজিটাল এয়ার নামের ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশ এবং দেশের বাহিরে ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং ও ডিজিটাল মার্কেটিংসহ বিভিন্ন কাজে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

তরুণ এই উদ্যোক্তা মোস্তাকিম জনি স্বপ্ন দেখেন তার এই প্রতিষ্ঠানকে একটি ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়ে তোলার, যেখানে তরুণরা প্রশিক্ষণ নিয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারবে। পড়াশোনার পাশাপাশি তরুণরা যেন আয় করতে পারে ডিজিটাল প্লাটর্ফম থেকে এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন তিনি।

দেশকে এগিয়ে নিতে আইটি সেক্টর অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারে। অনেক তরুণ চাকরি না পেয়ে হতাশায় ভোগে, সরকার প্রযুক্তিখাত বেশ উন্নতি করেছে। এখন যে কেউ চাইলে নিজের ক্যারিয়ার প্রযুক্তিতে গড়তে পারে। হতাশায় না থেকে প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে ক্যারিয়ার গড়ার অনেক বড় সম্ভবনা আছে আর তরুণদের এটি কাজে লাগানো উচিত বলে মনে করেন ডিজিটাল এয়ার নামে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও তরুণ উদ্যোক্তা মোস্তাকিম জনি।

মোস্তাকিম জনির বাবা লোকমান হোসেন বার্তা বাজারকে জানান, তিন ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে তার সংসার। তিনি পেশায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। এলাকায় কোকারিজের ব্যবসা করলেও বয়সের ভারে এখন পারছেন না ওই ব্যবসা করতে। তবে মেঝ ছেলে মোস্তাকিম জনি কওমি মাদরাসায় লেখাপড়া করলেও ফ্রিল্যান্সের মাধ্যমে আয় শুরু করেন। মূলত তার পর থেকেই সংসারে অভাব দূর হতে থাকে। মোস্তাকিমের ফ্রিল্যান্সিংয়ের অর্থে তারা এখন সাবলম্বি।

গুরুদাসপুরের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক সহকারি প্রোগ্রামার মো. শাহিনুর ইসলাম জানান, তাদের অফিসের হিসাব মতে গুরুদাসপুর উপজেলার প্রায় ১ হাজারের বেশি শিক্ষিত যুবক ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে ব্যাপক পরিমানে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছেন। আগামী এক বছরে ফ্রিল্যান্সার বৃদ্ধি পাবে অধিক হারে। তবে সরকারিভাবেও এসব ফ্রিল্যান্সারদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পাশাপাশি নতুনদের ফ্রিল্যান্সিংয়ের আসার জন্য উৎসাহি করতেও কাজ করা হবে।

আরেক ফ্রিল্যান্সার আবু সাঈদ জানান, ছোট অফিসে তার অধিনে অন্তত ২০ জন তরুণ ফ্রিল্যান্সিংয়ে যুক্ত রয়েছেন। মূলত বিদেশিদের দেওয়া চাহিদার ভিত্তিতে তারা ওয়েব ডিজাইন, ডেভেলোপমেন্ট, গ্রাফিক্স, কিওয়ার্ড রিসার্চ, এসইও, সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং, গুগল অ্যানালাইটিকসহ নানা ধরণের কাজ করে থাকেন। কয়েক ঘন্টার কাজে প্রতিটি চাহিদায় নূন্যতম ১০০ ডলার আয় হয়। এই আয়ে যেমন বেকারত্ব দূর হচ্ছে তেমনি দেশের রেমিট্যান্সও বাড়ছে।

গুরুদাসপুরের সরকারি বিলচলন শহীদ সামসুজ্জোহা কলেজের আইসিটি শিক্ষক প্রশান্ত কুমার বার্তা বাজারকে জানান, গুরুদাসপুরের বহু যুবক এখন ঘরে বসেই ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে আয় করে বেকারত্ব দুর করছেন। চাকরির পিছনে ছোটাছুটি না করে শিক্ষিত যুবকরা ফ্রিল্যান্সিংয়ে প্রবেশ করলে এই খাত থেকে বিপুল পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করার সম্ভাবনা রয়েছে।

তানিম/বার্তাবাজার/এ.আর

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর