ধর্ম ব্যবহারকারী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এখনও বাংলাদেশে তৎপর: কৃষিমন্ত্রী

কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, দেশে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে যারা অপপ্রয়াস চালাচ্ছে, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাতে চাচ্ছে, তাদেরকে কঠোরভাবে মোকাবেলা করা হবে। তাদের অপপ্রয়াস ব্যর্থ হবে। দেশে কিছু দল আছে যারা ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করে। রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে চায় ও অর্থ-বিত্ত অর্জন করতে চায়। তাদের কোন আদর্শ নেই, নীতি নেই। এই সাম্প্রদায়িক শক্তি বার বার বাংলাদেশের ধর্মীয় সম্প্রীতির উপর আঘাত করেছে ও শান্তি-শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করেছে। এরাই মুক্তিযুদ্ধের সময় ধর্মের নামে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করেছিল। এরাই ধর্মের নামে ২ লাখ মা বোনকে পাকিস্থানিদের হাতে তুলে দিয়ে তাঁদের ইজ্জত হনন করেছিল।

বৃহস্পতিবার (১৪অক্টোবর) দিনব্যাপী টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী ও মধুপুরে বিভিন্ন পূজামন্ডপ পরিদর্শন শেষে হিন্দু ধর্মালম্বীদের সাথে মতবিনিময়কালে মন্ত্রী এসব কথা বলেন।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ধর্ম ব্যবহারকারী এই সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী এখনও বাংলাদেশে তৎপর। এখনও তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কাজ করে। এদের বিরুদ্ধে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কুমিল্লার ঘটনায় জড়িত ও দোষীদের খুঁজে বের করা হবে এবং তাদেরকে আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হবে। কুমিল্লার ঘটনাটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সার্বিকভাবে সারাদেশে অত্যন্ত উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব পালিত হচ্ছে।

ড. আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, বাংলাদেশ উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে। এ গতিকে আমাদের ধরে রেখে আরও গতিশীল করতে হবে। সেজন্য, দলকে ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত করে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। সততা, আদর্শ ও দলের প্রতি আনুগত্য দেখে নেতা নির্বাচনের জন্য স্থানীয় নেতাকর্মীদের আহ্বান জানিয়ে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, তৃণমূলের কর্মীবাহিনী ও তাদের ঐক্যই দলের সবচেয়ে বড় শক্তি। সম্মেলনের মাধ্যমে দলকে আরো শক্তিশালী ও সংঘবদ্ধ করতে হবে। দলের গঠনতন্ত্র ও আইন মেনে শৃঙ্খলা ও ঐক্য বজায় রাখতে হবে। যাতে করে বিএনপি, স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, রাজাকার-আলবদর ও ধর্মান্ধরা অপতৎপরতা ও ষড়যন্ত্র করে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করতে না পারে, ক্ষমতায় না আসতে পারে।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, আশ্বিন-কার্তিক মাস আসলেই আগে উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা বা ‘আধা দুর্ভিক্ষ’ দেখা দিতো। বেশিরভাগ মানুষের ঘরে খাবার থাকতো না। আমন ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত খাবার জুটতো না। কিন্তু এখন আর সে অবস্থা নেই। এখনও সারাদেশে আমনের ফসল আসতে যেখানে ১-২ মাস সময় লাগবে, সেখানে এই মুহূর্তে আমনের নতুন জাতের ধান পেকেছে। বিনার উদ্ভাবিত এ জাতগুলোর অপার সম্ভাবনা রয়েছে। একদিকে উৎপাদন ভালো, অন্যদিকে ১০০ দিনের মধ্যে পাকে। এ ধান কেটে আলু, সরিষাসহ অন্যান্য ফসল করা যাবে। সামগ্রিকভাবে মানুষ এখন খাদ্যের কষ্টে নেই। আমরা দানাদার খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। কিছু কিছু খাবারের ক্ষেত্রে দামের সমস্যা হলেও দেশে মঙ্গা বা না খেয়ে থাকার মতো পরিস্থিতি নেই।

কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা পেঁয়াজ নিয়ে অনেকগুলো উদ্যোগ নিয়েছি। এর মধ্যে মৌসুমে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ করা হয়েছিল, যেন চাষিরা ভালো দাম পায়। তার একটি প্রভাব বাজারে পড়েছে। কিন্তু আমদানি এখনও চালু আছে, বাজার স্বাভাবিক করতে বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দেশের শাকসবজি, আলু ও ফলমূল রপ্তানির সম্ভাবনা অনেক। বিভিন্ন ফসল ও খাদ্যে আমরা এখন উদ্বৃত্ত। এ উদ্বৃত্ত ফসল সারা পৃথিবীতে আমরা রপ্তানি করতে চাই। সেজন্য রপ্তানির বাধাসমূহ দূর করতে সরকার নিরলসভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে আমাদের প্রস্তুতি প্রায় সমাপ্ত। গত ১ বছরে কৃষিপণ্যের রপ্তানি অনেকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সামনের দিনগুলোতে রপ্তানির পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পাবে। কৃষিপণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি করতে পারলে একদিকে কৃষকেরা লাভবান হবে। অন্যদিকে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে। সেলক্ষ্যে কৃষি মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে।

পূজামন্ডপ পরিদর্শনকালে ধনবাড়ী ও মধুপুর উপজেলার স্থানীয় কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

হাসান শিকদার/বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর