রায়গঞ্জে স্কুল প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত শুরু

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার পাঙ্গাসী ইউনিয়নের দেউলমুড়া জি আর মডেল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মো. রফিকুল ইসলাম নান্নুর বিরুদ্ধে নিয়োগ বোর্ডের স্বাক্ষর জাল পূর্বক অর্থের বিনিময়ে শিক্ষক রদ বদলসহ সীমাহীন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) রাজশাহী অঞ্চল এবং জেলা প্রশাসক।

মাউশি রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ড. শরমিন ফেরদৌস চৌধুরী ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার জিন্নাতুল আরা স্বাক্ষরিত পৃথক দুটি পত্রে এ তথ্য জানানো হয়।

শিক্ষা বোর্ড ও জেলা প্রশাসক বরাবর এস এম হানিফ উদ্দিন নামক এক ব্যক্তির লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে মাউশি জেলা শিক্ষা অফিসারকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সরেজমিন তদন্তপূর্বক সুস্পষ্ট মতামত ও জেলা প্রশাসক উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করেছেন।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার।

অভিযোগসূত্রে জানা যায় দেউলমুড়া জি আর মডেল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে ২০০২ সালের ২৮ নভেম্বর সমাজ বিজ্ঞান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম গাড়াদহ গ্রামের এস এম হানিফ উদ্দিন। দীর্ঘ ১৮ বছর শিক্ষকতার পর সম্প্রতিক জানতে পারেন তিনি ওই প্রতিষ্ঠানের কেউ না। এমন কথা শুনে শিক্ষকের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে।

অথচ যোগদানের পর ২০০৭ সালের ২৬ ডিসেম্বর হতে ৮ই জানুয়ারি ২০০৮ তারিখ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিষয় ভিত্তিক (সমাজ বিজ্ঞান) শিক্ষক হিসেবে রাজশাহী থেকে (সিপিডি) কোর্সের সনদ অর্জন করেছিলেন তিনি। এছাড়াও ব্যানবেইজ তথ্য (২০০৮) ফরমে শিক্ষক তালিকায় তার নামও ছিলো।

শিক্ষক হানিফ উদ্দিনের অভিযোগ ২৩ সেপ্টম্বর ২০১৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি এমপিও ভুক্ত হওয়ার পরপরই শুরু হয় প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম নান্নু ও তার স্ত্রী প্রধান শিক্ষক রুবা খাতুনের দৌরাত্ম।

কেউ বেশি টাকা দিলেই পূর্বের শিক্ষক বা কর্মচারীর নাম বাদ দিয়ে নিয়োগ সংক্রান্ত টেবুলেশন ও রেজুলেশন পরিবর্তন এবং স্বাক্ষর জাল করে এমপিওর জন্য প্রেরণ করেন। এমন ভুক্তভোগী শুধু শিক্ষক হানিফ উদ্দিন নয় উপজেলার ব্রহ্মগাছা ইউনিয়নের খামারগাঁতী গ্রামের ছালমা খাতুনসহ আরও অনেকেই। তারা জানান নিয়োগের সময় তাদের প্রত্যেকের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের টাকাও নিয়েছিলো প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু।

রোববার (১০ অক্টোবর) সরেজমিন গেলে দেখা যায় মাত্র ২০০ গজ দূরত্বের মধ্যে চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন ওই প্রতিষ্ঠাতা। প্রতিষ্ঠান গুলো হলো- দেউলমুড়া এন আর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজ, দেউলমুড়া জি আর মডেল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, দেউলমুড়া জি আর টেকনিক্যাল গালস্ হাই স্কুল এন্ড কলেজ ও দেউলমুড়া ইছলাহুল উম্মাহ কওমীয়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা।

আলোচিত ওই প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি দেউলমুড়া এন আর টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও দেউলমুড়া জি আর মডেল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এন্ড কলেজের প্রধান শিক্ষিকা তার স্ত্রী রুবা খাতুন। আর এইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগে স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম ও দূর্নীতি করে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

শিক্ষক দম্পতির এ সকল অনিয়ম, দূর্নীতি ও শিক্ষক নিয়োগের নামে প্রতারণা বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীরা।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত দেউলমুড়া জি আর মডেল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মো. রফিকুল ইসলাম নান্নুর সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ওই শিক্ষক আমার প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এসেছিলো। এখন আমি চেয়ারম্যান নির্বাচন করছি বলে মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে আমাকে ঝামেলায় ফেলছে।

এ প্রসঙ্গে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. শফীউল্লাহ বলেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা রাজশাহী অঞ্চলের উপ-পরিচালক আমাকে সরেজমিন তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেছে। আমি ইতিমধ্যে অভিযোগকারির সাথে কথা বলে ঘটনার আরও বিস্তারিত জেনেছি। আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করা হবে।

এম এ মালেক/বার্তা বাজার/টি

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর