মোগল ফুডস মাস্টারশেফ হাজী ফজলুর রহমান
মোগল খাবার, এ যেন খাবারের একটি ধারা বা ইতিহাসই শুধু নয়, বরং একটি শিল্পধারাও। মোঘল সম্রাটদের মাধ্যমে সুদূর পারস্য আর মোঘল শাসিত ভারত বর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলের রান্না মিলেমিশে যে নতুন ও বৈপ্লবিক এবং একই সাথে শিল্পমণ্ডিত খাদ্যধারার জন্ম দেয়, তাই হলো আদি মোঘলাই।
ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের পুরনো ঢাকায় আজ মোঘল খাবার বলে যা চলে, মূলত এতে উত্তর ভারতের প্রভাব অধিক। কেননা, আদি মোগলাই ছিল স্বল্প মসলা যুক্ত, সুগন্ধিতে ভরপুর, দর্শনীয় এবং একই সাথে অতি চিত্তাকর্ষক।
অনেকে ভেবেই অবাক হবেন, এক পোলাওতেই ৬-৭ রকমের রং হতো, আর তার পুরোটাই আসতো নানা পদের ফল, ফুল, সবজি আর অবশ্যই জাফরান হতে ; জাফরান শুধু মনোমুগ্ধকর সৌরভই দিতো না, সেই সাথে দিতো সুন্দর রং। সব খাবারে দম পদ্ধতির বিভিন্ন ব্যবহার খাবারকে করে তুলতো আরো অসাধারণ।
পুরনো ঢাকা অবিসংবাদিতভাবেই এদেশে মোঘল খাবারের ধারক ও বাহক। এখনো এদেশে এমন কিছু মাস্টারশেফ আছেন, যারা ধরে রেখেছেন সেই ধারা; কাজ করেছেন ঢাকা নবাব পরিবারের সাথেও। আর যাদের রান্না শুধু দেশেই না, পাক- ভারত উপমহাদেশের বাইরে আজও সমানভাবে আদৃত।
তাঁদেরই একজন মাস্টারশেফ হাজী ফজলুর রহমান, যিনি নবাববাড়ির অন্যতম প্রধান শেফ প্রয়াত হাজী ইসমাঈল রহমান এর বড়ো ছেলে। হাজী ইসমাঈল রহমান হলেন সেসব মাস্টারশেফ এর একজন, যাঁর রান্না কাচ্চি, পাক্কি, মাটন আকবরি, মাটন জাহাঙ্গীরি, শাহী জর্দা, জালি কাবাব, মুতানজান লাবাবদার পোলাও, মুর্গ মুসাল্লাম বা আদি মুসাম্মাম ইত্যাদি অসংখ্য সুস্বাদু খাবার এখনো পুরনো ঢাকার আবাল বৃদ্ধ বণিতার মুখেমুখে ফেরে।
শাহজাহানী পোলাও, গালৌতি কাবাব, গোরাক কাবাব, নারাংগি পোলাও, জাফরানি কোফতা পোলাও, কালিয়া চাশনিদার এরকম অসংখ্য খাবার রয়েছে, যার নাম হয়ত অনেকেই এখন জানেন না। আনার বা ডালিম, এমনকি আম হতেও যে পোলাও হতো, সেকথাও হয়তো আজ অনেকেই জানেন না।
আমাদের আজকের দিনে অনেকেই ভাবেন যে, জয়ফল,জয়িত্রি, হলুদ বা রসুন ছাড়া হয়তো খাবারই রান্না হবে না।
কিন্তু এটিও একটি ভুল ধারণা। মধ্যপ্রাচ্যের মতোই উপমহাদেশের মুসলিম খাবারেও এক সময় শুকনো ও তাজা ফল, বিভিন্ন পদের বাদাম, কিসমিস, এপ্রিকোট ইত্যাদির ব্যবহার ছিল। এখনো সেই ধারার রান্না, অল্প কিছু মানুষ করেন, যাদের মাঝে মাস্টার শেফ হাজী ফজলুর রহমান অন্যতম, বলতে গেলে, অনন্য।
যার রান্না পছন্দ করেছেন বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া হতে, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি এবং দেশ ও বিদেশের অসংখ্য মানুষ।
কালান্তরে এদেশে এসেছে হরেক পদের খাবার। কাচ্চি বিরিয়ানি রাঁধেনি এমন কোনো বাবুর্চি খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু যদি একজন মানুষের কথা বলতে বলা হয়, যিনি মোঘল যুগের কাচ্চি বিরিয়ানি কে করেছেন এদেশের এক জাতীয় খাবার, সেই কৃতিত্ব যাঁর তিনি অবিসংবাদিতভাবে একজন। আর তিনিই হলেন মাস্টার শেফ হাজী ফজলুর রহমান।
তাঁর দুই ছেলে মোহাম্মদ শফিকুর রহমান এবং মোহাম্মদ আশিকুর রহমানকে তিনি গড়ে তুলেছেন তাঁর দুই সুযোগ্য উত্তরসূরী হিসাবে। হাজী ফজলুর রহমান ক্যাটারিং বাংলাদেশের আদি মোগলাই শিল্পে আজ একটি অনন্য নামই শুধু নয়, আদি মোগলাই খাবারের এক বিশ্বস্ত প্রতিনিধিও। গ্রাহক সন্তুষ্টি ও মহামারীর কথা মাথায় রেখে হাজী ফজলুর রহমান ক্যাটারিং এখন অর্ডার সংখ্যা শুধু কমিয়ে ১৬ই যে করেছেন তা নয়, একই সাথে তাদের নিজস্ব কিচেন হতে গ্রাহকদের বাসায় পৌছে দেওয়া হয় বিনামূল্যে।
বার্তা বাজার/এসজে