বর্ষায় দুর্ভোগে চলনবিলের লক্ষাধিক মানুষ

চলনবিলের বুকে জেগে থাকা একটি জনপদের নাম গুরুদাসপুর। বর্ষায় এই জনপদের নিম্নাঞ্চল পানিতে ভাসে। ঘর-বাড়ি, ফসলের ক্ষেত সবই থাকে পানির নিচে। এসময় হাতে কাজ থাকেনা। দুর্ভোগে পড়েন এই জনপদের প্রায় দেড় লাখ মানুষ।

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, গুরুদাসপুর উপজেলাটি ভৌগলিকভাবে চলনবিলের পেটে অবস্থিত। বর্ষায় শুধুযে গুরুদাসপুরের খুবজীপুর, বিলশা রুহাই, পিঁপলা এলাকার মানুষই সংকটে পড়েন তা নয়। সংকটে পড়েন চলনবিল অধ্যুষিত সিংড়ার ইটালী, তিসিখালী, হিজড়া, বিলদহরসহ তাড়াশের কুন্দইল, বারুহাস, মাধাইনগর, শ্যামপুর, রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকা এবং অন্তত শতাধিক গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ।

প্রতি বছর উজানের নেমে আসা আগাম বর্ষার ঢলে প্লাবিত হয় চলনবিলের পথ-ঘাট কৃষিজমি। এতে বিপাকে পড়েন এসব এলাকার মানুষ। ইরি- বোরো মওসুমে চাষ করা মাঠভরা পাকা ধান কাটতে না কাটতেই উজানের ঢলে তলিয়ে যায় জমি।

আগাম বন্যার কবলে পড়ে চলনবিলের চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া বর্ষায় যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই পানি আর পানি। কোথাও কোনো আমন-আউশ ধানের দেখা মেলে না।

গুরুদাসপুরের বিলশা গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া, তাড়াশের মনসুর আলী, সিংড়ার মকবুল হোসেনসহ অন্তত ৫০ জন কৃষক জানান, চলনবিলের এসব এলাকা নিচু হওয়ায় উজানের ঢলে আগাম বন্যাও হয়। আর বর্ষায় তো কথাই নেই। পথ-ঘাট, ফসলি জমি তলিয়ে কোন মতে জেগে থেকে শুধু থাকার ঘরগুলো। তবে প্রলঙ্করী স্রোত আর বড় ঢেউ আছড়ে পরে সেসব ঘরে। সবমিলিয়ে বর্ষায় কাজ না থাকায় বিপাকে পড়তে হয় তাদের।

পরিসংখ্যান বলছে, ২০০০ সালের আগে এসব এলাকার মানুষ বর্ষায় মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু এখন আর তা হয়না। উচুঁ এলাকাগুলোতে পুকুরে বাণিজ্যিক ভাবে মাছ চাষ করায় এখন আর খাল-বিলে আগের মতো মাছ মিলে না। এক সমিক্ষায় দেখা গেছে, ২০০০ সালের পর থেকে গুরুদাসপুর উপজেলার ৬ হাজার জেলে পেশা বদল করেছেন। তাই বর্ষা মওসুমে বন্যাকলিত মানুষ মাছ শিকারেও জীবিকা নির্বাহ করতে পারেন না।

গুরুদাসপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বলেন, ভরা বর্ষায় চলনবিলের মানুষের হাতে কাজ থাকেনা। অর্থ ও খাদ্য সংকটে ভোগেন। তবুও এই বৃহৎ জনগোষ্ঠি প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকেন। তাবে সরকারের নেওয়া চলনবিল উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবন হলে এসব এলাকার মানুষের সংকট নিরসন হবে।

গুরুাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকার্তা তমাল হোসেন বলেন, চলনবিল অধ্যুষিত গুরুদাসপুরসহ আশপাশের উপজেলার মানুষ বর্ষায় স্বর্বস্য হারিয়ে জীবন সংকটে পরেন। তাবে এসব মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে ‘চলনবিল উন্নয়ন প্রকল্প’ হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে চলনবিলের মানুষের আর্ত-সামজিক উন্নয়ন ঘটবে বলে মনে করেন তিনি।

মেহেদী হাসান তানিম/বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর