সব বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে প্যানেল দিবে আমাদের সংগঠন: নুর

দীর্ঘ ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচনে সহ-সভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হয়েছেন নুরুল হক নুর। মুলত কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। ডাকসু নির্বাচন-পরবর্তী গণভবন যাওয়া এবং নানা বক্তব্যের কারণে আলোচনা- সমালোচনার মুখে পড়েছেন নুরুল হক নুর এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বার্তা বাজার এর সাথে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বার্তা বাজারের নিজস্ব প্রতিবেদক- আকরাম হোসেন নাঈম ।

দীর্ঘ ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচনে আপনি ভিপি নির্বাচিত হলেন। অনুভূতি কেমন?

ভিপি নুর: প্রথমত বলতে চাই দীর্ঘ ২৮ বছরের অচলায়তন ভেঙে অনুষ্ঠিত হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ-ডাকসু নির্বাচনে শিক্ষার্থীরা হতাশ। আমাদের প্রত্যাশা ছিল এ নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে। যার মধ্য দিয়ে মানুষের কাছে একটি দৃষ্টান্তমূলক নির্বাচন হয়ে থাকবে। কিন্তু আমরা দেখলাম, জাতীয় নির্বাচনে যেমন কারচুপি হচ্ছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও তার বাইরে গিয়ে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারল না। যার ফলে আমরা ২৮ বছর পর নির্বাচন পেয়েও আনন্দিত না হয়ে হতাশ হয়েছি, শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়েছে। আপনারা জানেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়া ৫টি প্যানেলসহ অনেক শিক্ষার্থী পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে এবং আমি ভিপি নির্বাচিত হয়েও প্রশাসনকে অনুরোধ করেছি, এ বিতর্কিত নির্বাচনকে বাতিল করে প্রশাসন একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার জন্য।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ও ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আপনাদের সংগঠন একটি শক্তিশালী সংগঠন হিসাবে আত্মপ্রকাশ ঘটল। দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচন শুরু হয়, তাহলে কি আপনাদের সংগঠন অংশ নেবে?

ভিপি নুর: আমরা মনে করি, ৯০-পরবর্তী ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্রদের অধিকার নিয়ে কাজ না করাই তারা ছাত্রদের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সে জায়গা থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীদের সংগঠন বা রাজনীতিমুখী করার জন্য আমরা বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ কাজ করে যাচ্ছি।
ডাকসুতে যেহেতু আমরা ভালো করেছি, অধিকাংশ পদে আমাদের প্রার্থীরা মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল; যার কারণে আমরা রাকসু, চকসু, জাকসুসহ সব ছাত্র সংসদ নির্বাচনে আমাদের প্যানেল দেব। কারণ আমরা চাই, সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বেড়ে উঠুক।

নির্বাচনের পর আপনি একেক সময় একেক বক্তব্য দিয়েছেন। একবার বললেন, ভিপি এবং সমাজসেবা সম্পাদক ছাড়া সব পদে পুনর্নির্বাচন চান; এরপর আবার সব পদে পুনর্নির্বাচনের কথা বললেন…

ভিপি নুর: ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে, অনিয়ম-কারচুপির মধ্যেও আমাকে এবং আমাদের প্যানেলের সমাজসেবা সম্পাদক আখতার হোসেনকে তারা হারাতে পারেনি। তাদের যে কারচুপির মাত্রা ছিল তা তারা এই দুই পদে ব্যালেন্স করতে পারেনি, এ জন্য আমরা নির্বাচিত হয়েছি। আর বাকি পদগুলোতে কারচুপির মাধ্যমে তারা বিজয়ী হয়েছে। এ জন্য ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে, এ দুটি পদ বাদে অন্য পদগুলোতে পুনরায় নির্বাচন হওয়া উচিত। কিন্তু পরে যে পাঁচ প্যানেল সব পদে পুনরায় নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করছে তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি দেখলাম, সবাই পুনর্নির্বাচন চায়। তখন আমি তাদের দাবির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে সব পদে পুনর্নির্বাচন চেয়েছি। এখানে চাপের কিছু নেই। প্রথমে আমার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে বলেছি এবং পরে শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে এক হয়ে পুনর্নির্বাচন চেয়েছি।

প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে গণভবনে গেলেন। গণভবনে আপনার দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করছেন অনেকেই। এ বিষয়ে কী বলবেন?

ভিপি নুর: গণভবন নিয়ে অনেকে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, কিন্তু বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। গণভবন হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রধান নির্বাহী প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন। সেখানে তিনি ডাকসুতে নির্বাচিতদের ডেকেছেন, সে জায়গা থেকে আমরা গিয়েছি। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তসাশিত প্রতিষ্ঠান, এর সঙ্গে সরকার সরাসরি সম্পৃক্ত না। যদিও বিভিন্ন উন্নয়ন কাজে সরকার সহযোগিতা করে। সে জায়গা থেকে আমি আবাসন সমস্যা, শিক্ষার আধুনিকায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে দাবি জানিয়েছি। এবং ডাকসুতে যে অনিয়ম হয়েছে, তা আমি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করেছি। যাতে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তদন্তের নির্দেশ দেন।

আপনি একসময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী যদি আপনাকে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে চান তাহলে আপনার ভূমিকা কী হবে?

ভিপি নুর: আমি আগে ছাত্রলীগ করতাম কিন্তু আমার কাছে যখন মনে হয়েছে আমি আমার আদর্শ ধরে রেখে ছাত্রলীগ করতে পারছি না, তখন আমি সরে এসেছি। এখন আমি বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক।
এ সংগঠন থেকে আমরা একটি প্যানেল দিয়েছি এবং দুজন বিজয়ী হয়েছি। সেখানে ছাত্রলীগ বা অন্য কোনো সংগঠনে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমার সম্মান, শ্রদ্ধাবোধ, সৌজন্যতা বোধ রয়েছে। আমার মনে হয় না, প্রধানমন্ত্রী এমন কোনো অনুরোধ আমাকে করবেন। আর করলেও তা রাখা আমার পক্ষে সম্ভব হবে না।

দীর্ঘ সময় পরে বিশ্ববিদ্যালয় ভিপি পেল, ডাকসুর সাবেক নেতাদের পক্ষ থেকে কোনো শুভেচ্ছা পেয়েছেন?

ভিপি নুর: হ্যাঁ, অনেকেই ফোন করে অভিনন্দন জানিয়েছেন। বিভিন্ন টকশোতে অনেকের সঙ্গে দেখা হয়, তারাও অভিনন্দন জানান। অভিনন্দন জানিয়ে অনেকে মেইল করেছেন। স্যোশাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুক মারফত অসংখ্য শুভেচ্ছা বার্তা পেয়েছি। এর বাইরে আমার এলাকার মানুষও খুশি হয়েছেন, যে তাদের সন্তান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছে।

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর