চামড়া শিল্পকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হবে

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে পরিচিত চামড়া শিল্প। চামড়া এবং চামড়ার তৈরী অধিকাংশ সামগ্রী চীন, জাপান, জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, স্পেন রাশিয়াসহ বেশকিছু দেশে রপ্তানি করা হয়। আর এ খাত থেকে সরকার প্রতিবছর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে থাকে।

চামড়া শিল্পের অবস্থা বর্তমানে অনেকটা ধ্বংসের মুখে পরেছে। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ সরকার গরুর চামড়ার দাম নির্ধারন করে দিয়েছিলো প্রতি বর্গফুট ৮৫-৯০ টাকা। কিন্তু চামড়ার মূল্য দিন দিন কমতে কমতে ২০২০ সালে একই চামড়া নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিলো ৩৫-৪০ টাকা। আবার অনেক সময় চামড়া সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করা, দাম না পাওয়ার ফলে অনেক চামড়া নষ্ট হয়ে যায় যার কারণে মাটিতে পুতে ফেলা হয়।

এদিকে করোনা ভাইরাসের মহামারীর ফলে চামড়া শিল্প দ্রুত গতিতে ধ্বংসের দিকে এগুচ্ছে। ডিসেম্বর মাস ২০১৯ সাল, চীনে করোনা ভাইরাসের বিস্তৃতি ঘটার ফলে অনেক বড় একটি চালান দেশে আটকে পরলে লোকশানের মুখে পরতে হয় ব্যাবসায়ীদের। এসময় প্রায় ১০০ কন্টেইনার প্রক্রিয়াজাত করা চামড়ার চুক্তি বাতিল করে চীন। দেশের সম্ভাবনাময় বৃহত্তম রফতানিজাত পণ্যের এমন দৃশ্য অর্থনীতির জন্য হুমকিসরুপ। জেনে রাখা ভালো বাংলাদেশ অধিকাংশ চামড়া চীনে রফতানি করে থাকে।

চামড়া শিল্পের কিছুটা অবনতি শুরু হয়েছে ট্যানারি শিল্প স্থানান্তরের ফলে। সময় এপ্রিল মাস ২০১৭ সাল, সেসময় ট্যানারি শিল্প হাজারীবাগ থেকে অপ্রস্তুত সাভারে স্থানান্তর করার ফলে কারখানাগুলো চালু হতে অনেক সময় লেগে যায়। আর এ সময়ে দেশে আমদানি নির্ভরতা বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি অনেকদিন যাবত কারখানা বন্ধ থাকার ফলে বিদেশি ক্রেতাদের হারিয়ে ফেলে লোকশানে পরে যায় চামড়া শিল্প।

সাভারে ট্যানারির বর্জ্য শোধনের জন্য স্থাপন করা হয় কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার (সিইটিপি)। যা এখনো পূর্নাজ্ঞভাবে শুরু না হওয়ার ফলে চামড়া শিল্পের কারখানাগুলো পরিবেশগত আন্তর্জাতিক মান অর্জনে সক্ষমতা অর্জন করতে পারছেনা। আবার ঈদুল আযহার সময় কিছু অসাধু ব্যাবসায়ী চামড়া সংরক্ষণের ব্যাবস্থা না করে অতিরিক্ত সময় নিজের কাছে রেখে দেওয়ার ফলেও চামড়ার গুণগতমান নষ্ট হয় যার ফলে আন্তর্জাতিক রফতানি মান হ্রাস পেয়ে থাকে। এদিকে বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত করা চামড়া বেশিভাগ চীন আমদানি করতো। কিন্তু বর্তমানে চীন বাংলাদেশ থেকে আগেরমতো আর চামড়া আমদানি না করার ফলে প্রতিবছর এ খাতে গুনতে হচ্ছে লোকশান আর লোকশান।

দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী এ খাতে লোকশানের বদলে লাভের মুখ দেখা খুব একটা অসম্ভব নয়। যদি দেশের প্রতিটা উপজেলায় সম্ভব হলে প্রত্যেক ইউনিয়নে চামড়া সংরক্ষণাগারের ব্যাবস্থা করতে হবে যাতে চামড়ার মান নষ্ট হওয়ার পরিবর্তে তা রক্ষা করা যায়। চামড়ার বিকল্প সিনথেটিক ও ফেব্রিক দিয়ে তৈরি পন্যের উপর বাড়তি শুল্ক আরোপ এবং আমদানি সীমিত করতে হবে।

যেদিকে সবথেকে বেশি নজর দেওয়া উচিৎ সে বিষটি হলো চামড়া সংরক্ষণের জন্য ব্যাবহার করা কেমিক্যাল। চামড়া শিল্পে ব্যাবহার করা কেমিক্যাল আমদানি না করে যদি অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করে দেশীয় কারখানায় উৎপাদনের ব্যাবস্থা করা যায় এবং হারিয়ে যাওয়া বিদেশি ক্রেতাদের ফিরিয়ে আনতে বাড়তি কিছু সুযোগ সুবিধাসহ জেলায় জেলায় চামড়া জাত পণ্যের বানিজ্য মেলা করার উদ্যোগ নেওয়া হলে আশা করা যায় লোকশানে না পরে লাভের মুখ দেখা সম্ভব হবে।

জেনে রাখা ভালো দেশে বছরে সংরক্ষণকরা চামড়ার ৫০ শতাংশের বেশি ভাগ ঈদুল আযহার (কুরবানি ঈদের) সময় সংরক্ষণ করা হয়। তাই ঈদুল আযহার সময় চামড়া ব্যাবসায়ীদের ঋণের ব্যাবস্থা করা প্রয়োজন এবং এ সময় ক্রেতা-বিক্রেতা চামড়া ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে যেনো সমস্যায় না পরে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আবার এ মৌসুমে চামড়া পাচার বা কোন অসাধু ব্যাবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করতে না পারে তার জন্য প্রশাসনকে কঠোর নজরদারির ব্যাবস্থা করতে হবে। তবেই দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী চামড়া শিল্পকে লোকশানের মুখ থেকে ফিরিয়ে লাভের মুখ দেখতে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে না।

লেখক- রিফাত আমিন রিয়ন; শিক্ষার্থী, জয়পুরহাট সরকারি কলেজ। সভাপতি, ছাত্র ইউনিয়ন, জয়পুরহাট জেলা সংসদ।

বার্তা বাজার/এসজে

বার্তা বাজার .কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
এই বিভাগের আরো খবর